রবিবার, ১১ আগস্ট, ২০২৪

(২৩২)বোধোদয়

  (২৩২) বোধোদয়



যাঁরা জীবনের ওপারে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেন, তাঁরা সেই নির্জন পথের পথিক, যে পথে  কদাচিৎ মানুষ হাঁটেন। পথমধ্যে তাদের সাথে হয়তো বা সাক্ষাৎ হয় 'ক্ষমতা' নামক পার্থিব ঐশর্য্যের, তারাই পাৱেন সেই যাত্রা পথে তাকে কাঁকরের মতো পথ থেকে মুক্ত করে সামনের পানে এগিয়ে যেতে। বিস্ময়ে হতবাক হন ক্ষমতাপ্রেমী মানুষেরা।  সেই জাগতিক সম্পদের একান্ত অমনোযোগী এক অনন্য পুরুষকে প্রত্যক্ষ করার জন্য দলে দলে মানুষের ঢল সেদিন কলকাতার রাজপথে নেমে এসে ছিল। 
****************************** 
এই জগতে কিছু মানুষ ভয়ংকর হয়ে উঠেন মৃত্যুর পরে তাঁর সারা জীবনের সম্পদ একটা বিশাল ক্যানভাসে বিমূর্ত হয়ে আগামীকে আহবান জানায় আর বলে "এসো না এই পথে যেখানে পথমধ্যে বাধাসম বিশাল প্রস্তরখন্ডকে মনে হবে একটা ক্ষুদ্র নুড়ি"।  মৃত্যু হচ্ছে সেই ধারণা, যে ধারণা শুধুমাত্র অস্তিত্ব সম্পর্কিত স্থুল ধারণাকে অতিক্রম করে সূক্ষ অর্থাৎ বাইরের সব আবরণ সরে গিয়ে শুধু আত্মস্থ দীপের উজ্জ্বলতায় মুখরিত হয়। অন্তরে অন্তর মিলালে হয় তার পরিচয়। 
****************************** 
পাহাড়ের সাথে খাদের কোন তুলনা হয়না, কেননা কোন বস্তু যদি  সমগোত্রীয় না হয়, তাহলে তুলনা করা বাতুলতা। বরং  বলা যেতে পারে, খাদ পাহাড়ের সুবিশাল উচ্চতা দেখে আত্মগ্লানিতে নিজেই ভিতরে ভিতরে কুঁকড়ে যায়।   এমনিই একটা চরিত্রের পুনরাবৃত্তি দেখলো, গত ৯ই আগস্ট। যাঁর জীবনের সাথে সততার এক অবিচ্ছেদ বাঁধনে আবদ্ধ ছিল, গোপনে লালিত হতো অন্তরের অন্তরতম প্রদেশে। সততার আরেকটি রূপ হলো তাঁকে খোলা বাজারে বিক্রয়যোগ্য বস্তু হিসাবে প্রতিপন্ন করা যায় না, যেমন সূর্যকে বলতে হয় না " আমি তোমাদের আলো দিই"। সেই  অবিক্রিত সততার প্রতিমূর্তিকে প্রত্যক্ষ করার জন্য সারাদিন ধরে কলকাতার রাজপথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি, যেন একজন শায়িত মানুষের নীরব পরশে দীর্ঘদিনের ঘুমন্ত  মানবিক বোধগুলিকে যারপরনাই জীবন্ত হয়ে ডানা মেলে উড়তে উড়তে বাংলার আকাশ বাতাসে মুখরিত হলো। অবশ্যিই, ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, সেই মানুষগুলি অন্তরে অন্তরে বিশ্বাস করতো  মুক্ত চিন্তার, মানসিক বিশালতার, সংকীর্ণতার উর্ধে ওঠার কামনা এবং মনে প্রাণে সততার পথকে কাম্য মনে করে এগিয়ে যাবার। ঐ  ব্যক্তি জীবনের সাথে সেই মানুষগুলির নিশ্চয়ই আত্মিক যোগ ঘটেছিলো। 
****************************** 
আবেগ বস্তুটা ভীষণ স্বপ্ল মেয়াদী, সেটি যদি স্থায়ী আদর্শের গর্ভ থেকে জন্ম নেয়, তবে তার স্থায়িত্ব থাকে, তা না হলে সময়ের ভিড়ে হারিয়ে যায়। এইভাবেই মানব মনে ক্ষনে ক্ষনে কত যে আবেগের জন্ম মৃত্যুর খেলা চলে, তার ইয়ত্তা নেই।  চলার পথে প্রতিবন্ধকতা আছে, কিন্তু তাকে অতিক্রম করতে হবে। যেখানে মানুষ বোধহয় ক্লান্ত হয়ে পড়েছে সমাজে অসৌজন্য দেখতে দেখতে , বিভেদের আর নীতিহীনতার নিদর্শন দেখে। ভোগ সর্বস্য সমাজে আজ ত্যাগটা মানুষকে মহিমান্বিত করে বটে কিন্তু সেটাই ভারতীয় জীবনবোধের সহায়ক চিত্র হওয়া উচিত ছিল, বাস্তবে  সেটা বিরল বলেই, তাদের অনুভব করার জন্য  মানুষের আগ্রহ জন্মায়।  
****************************** 
কারণ ছাড়া কোন কার্য্য হয় না।  যাঁরা তাদের জীবনদর্শনে অনৈতিকতাকে অবলম্বন করে যাপন করছেন, তার পিছনে অবশ্যি কোন কারণ আছে, হয়তো বা বাধ্য  হয়েছেন তাঁরা সময়কে প্ৰকৃত বিশ্লেষণ না করতে পেরে বিপথগামী হয়েছেন, সেখানে শুধুমাত্র সমালোচনা করে দায়িত্ব পালন করলে চলবেনা। সেই সব সামাজিক ভাবে অসুস্থ মানুষের পুনর্বাসন দেওয়াও  নাগরিক সমাজের কাজ।  
****************************** 
বিভেদ কখনই  রাজনৈতিক আদর্শের পথ হতে পারেনা।  যারা এই আচরণকে মূলধন করে তাদের রাজনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তাদের সুব্যবহার দিয়ে মূল স্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসা সমাজের কাজ। 
****************************** 
সমাজ জীবনে এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে বহু সমস্যার মধ্যে চিহ্নিত করতে হবে মূল সমস্যাকে। জীবনে সর্বাপেক্ষা কঠিন সময় সেটাই, যখন নিভৃতক্ষণে যাঁরা বিবেকের কাঠগড়ায় দাড়িয়ে নিজের  কাছে কৃতকর্মের জন্য জবাবদিহি চাইবে।  

ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ -  ১২/০৮/২৪ 

 https://rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে

কোন মন্তব্য নেই:

ujaan

(২৩৯)বহতি হাওয়া

(২৩৯)বহতি হাওয়া   "আধুনিক " এই শব্দটিকে নিয়ে বেশ বাগবিতণ্ডা হয় মাঝে মাঝে, কোন বাক্যের প্রিফিক্স হিসাবে তাকে  বসানো যায়। আধুনিকতাকে...