(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ
যে বাঁশিতে রাধা চিরন্তন প্রেমের বাঁধনে স্বেচ্ছা বন্দী হন, যেই আত্ম উপলদ্ধিতে সিদ্ধার্থ বুদ্ধতে পরিবর্তিত হন, যে আহবানে নরেন বিবেকানন্দ হন, আবার মানুষের মুক্তির আহ্বানে যুদ্ধরত আহত সৈনিকের পতিত রাইফেল তুলে নিয়ে কখন যে মানুষ সর্বত্যাগী বিপ্লবী হয়ে যান, তার দিন ক্ষণ মনে থাকে না। এও একধরনের বিসর্জন, যেখানে বিসর্জিত হয় পার্থিব সুখ, সর্বজনের সুখের কারণে। এ সবই ভোগের অতীত এবং ত্যাগের প্রতীক। যে জ্ঞান অজ্ঞানকে আঘাত করে তোমার আমার মধ্যেকার কাল্পনিক ভেদকে অস্বীকার করে সেই-ই মানুষ পদবাচ্য হয়। উর্ধাকাশে বিচরণকারী স্কাইলার্ক যেমন স্বর্গের উচ্ছতায় উঠেও মর্তবাসীদের ভুলে যায় না, ঠিক তেমনি বহু পাঁকের মধ্যে থেকে যে পাঁক না মেখে যে ফুল হয়ে ফোটে সেই একজন সত্যকারের কমুনিস্ট হতে পারেন। নিজ গুণেই তিনি ব্যতিক্রমী হয়ে ওঠেন।
*****************************
রাষ্ট্রবিজ্ঞান যে কারণে প্রকৃত বিজ্ঞান হয়ে উঠতে পারেনি, কেননা কোন মতাদর্শকে প্রতিষ্ঠা করবার মতো উপযুক্ত বিজ্ঞানসম্মত রসায়নাগার তৈরী হয়নি বলে। যে উপাদানগুলি রাজনীতিতে থাকে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপাদান যেমন, রাষ্ট্রের ভৌগলিক পরিধি , একটি সর্বজন গৃহীত সংবিধান, প্রকৃতি , মানুষ, ইত্যাদি, যা প্রকৃতপক্ষে হল বস্তু এবং বস্তু ধর্ম হিসাবে সে প্রতিনিয়ত পরিবর্তনশীল। ইপ্সিত ফলের মূল কারিগর হলো মানুষ, সে যতক্ষন পর্যন্ত তার মানসিক জগতে সত্য এবং মিথ্যা বস্তুর ভেদাভেদ সঠিকভাবে বুঝতে না পারবে, ততদিন এই পৃথিবীতে মানুষের দুর্দশা থেকেই যাবে। তার অসংখ্য উদাহরণ ইতিহাস বহন করে চলেছে। প্রাথমিক ভাবে স্বার্থক মনে হলেও, পরবর্তী সময়ে সেই সব রাষ্ট্রের চারিত্রিক পরিবর্তন ঘটেছে, সেটি বিশ্ব প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই হয়েছে। এক কথায় প্রথমে সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে ভোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা, তারপরেরগুলি অভ্যাসবশত স্বাভাবিকভাবে হয়ে যাবে।
*****************************
আজ থেকে প্রায় ৫৩ বছর আগে, বাবা একদিন বলেছিলেন, কমুনিস্ট সেই হতে পারে, যে মনে প্রাণে হবে সন্যাসীর মতো ত্যাগী আবার আদর্শে হবে মার্ক্সবাদী। আজকে হয়তো এইসব ভাবনা লেখার প্রয়োজন পড়তো না, যদি না ব্যক্তি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যির মতো ব্যতিক্রমী চরিত্রের দেহাবসান না হতো।
*****************************
মাঝে মাঝে খুব কমই এই ধরনের মানুষের আবির্ভাব হয়। যাঁরা এই সংসারে শুধুমাত্র দাগ কেটে যান তাই নয়, তার সাথে একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং তাদের অনুসারীদের চারিত্রিক গঠন কি হওয়া উচিত এবং আদৌ তাঁরা রাজনীতি করার জন্য কতখানি যোগ্য সেটি তিনি তার জীবন দিয়ে উদাহরণ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তারই জীবনই একটা জীবন্ত ম্যানুয়াল। একটা প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেলো যে, রাজনীতিতে আসা মানুষগুলি কবে সংবেদনশীল হবে সাধারণ মানুষের জন্য ভাবতে শিখবে, তাতে যদি সব বিসর্জন দিতে হয় তার জন্য প্রস্তুত হবে আর কতদিন রাজনীতিতে কৌম স্বার্থ সংরক্ষন করবেন।
ক্রমশঃ
ব্লগার -রবীন মজুমদার
তারিখ - ০৯/০৮/২৪
https://rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন