সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২৪

(২৩৯)বহতি হাওয়া

(২৩৯)বহতি হাওয়া  


"আধুনিক " এই শব্দটিকে নিয়ে বেশ বাগবিতণ্ডা হয় মাঝে মাঝে, কোন বাক্যের প্রিফিক্স হিসাবে তাকে  বসানো যায়। আধুনিকতাকে কোন বিশেষ সময় দিয়ে বেঁধে রাখা  যায় না। আধুনিকতা থেকে যায় সারা জীবন ধরে। আধুনিকতা আর সমকালীনতাকে এক পংক্তিতে বসানো যায় না। যাঁকে কাল তাকে স্পর্শ করতে  পারেনা, সেটাই আধুনিকতা। সেখানে না আছে কোন প্রাচীনের তকমা অথবা একান্ত বর্তমানের ঘনঘটা কিংবা আগামীর বিড়ম্বনা আর  সব কিছুকে ছাপিয়ে সে যে সর্বকালীন। 

আধুনিক সেই-ই হতে পারে, যাঁকে  চিরন্তন পরিবর্তনের জোয়ার ভাসিয়ে নিয়ে যেতে পারেনা, সমাজের কোন মলিনতা তার উজ্বলতাকে ম্লান করতে, কোন  ভিন্ন মতবাদের উদ্দত ফণা যাঁর পদপ্রান্তে এসে নীরবে আশ্রয় নেয়, সেটাই স্বামী বিবেকানন্দের অদ্বৈত বেদান্ত।   একদিন অরণ্যের গভীরতম পরিবেশে লালিত বেদান্ত যদি না স্বামীজীর সংস্পর্শে না আসত তবে বোধ হয় পায়ে পায়ে মার্কিন মুলুকে পাড়ি জমাতে পারতোনা। 

সেই যে রূপকথার ব্যাঙ্গমা আর ব্যাঙ্গমী দুটি পাখি কিভাবে দৈত্যের হাতে বন্দী রাজকুমারীকে মুক্ত করার জন্য রাজকুমারকে পথের দিশা দেখিয়ে ছিল, সেটাই ছিল গল্পের উপজীব্য বিষয়।  আসলে অতিরিক্ত ভোগ, লালসা আর মায়া এবং সেখান থেকে উদ্ভূত দুঃখ স্বরূপ দৈত্যের  হাত থেকে  মুক্তিই ছিল  মানুষের একমাত্র কাম্য। জীবনে শত্রু চিহ্নিত করা ভীষণ কঠিন কর্ম। আর সেই শত্রুটির প্রাণবায়ুটা কোন সিন্দুকে লুকিয়ে আছে এবং কোন অস্ত্রে তার নিধন করা যাবে, সেই রণনীতির ম্যানুয়ালটি নিয়ে ফিনিক্স পাখির মতো স্বামীজীর আবির্ভাব। 

মাও সে তুঙ, ভো গন গিয়াপ কিংবা চে গুয়েভারার রণনীতির ম্যানুয়ালের সাথে স্বামীজীর ম্যানুয়ালের তফাৎ হলো এই বিশ্ব বরেন্য যোদ্ধারা মানুষের মুক্তির জন্য মানুষের বিরুদ্ধে লড়াই সংগঠিত করেছেন, সেখানে স্বামীজী সেই দ্বান্দিকতার কারণকে  খুঁজে বের করেছেন  মানুষের ইনবিল্ট কম্পোজিশনের মধ্যে। 

দেহ ও উভয়াত্মক ইন্দ্রীয় মনের সুস্বাস্থের পুষ্টির প্রশ্নে মনকেই  অগ্রাধিকার দেওয়া হয়ে থাকে। এই মনের অনেক অনেক পিছনে বাস করে আত্মা। আর সেই আত্মার সম্পর্কিত কথাই  'অধ্যাত্ম' শব্দের মধ্যে লুকিয়ে আছে।   প্রাথমিক ভাবনার শুরু হয়েছে শরীরকে নিয়ে, যাঁকে দেখা যায়, যে সর্বদা পরিবর্তনশীল অর্থাৎ বস্তু পৰ্য্যায়ভুক্ত। ভাবনা সেখানে থেমে থাকেনা, প্রশ্ন ওঠে এই জড় বস্তুকে কে   চালাচ্ছে এবং সেই অদৃশ্য শক্তিটিই বা কে ? সেই ঐশ্বরিক শক্তির ভাবনাটাই আধ্যাত্মিক ভাবনা। স্বামীজী নবরূপে পাশ্চাত্যের বস্তুবাদকে তাঁর দার্শনিক ভাবনা দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন।   "আত্মানম়়্ অধিকৃত্য বর্ততে ইতি অধ্যাত্মম্ " - যে অদৃশ্য আত্মাকে আস্টেপিস্টে আঁকড়ে ধরে যে দৃশ্যমান শরীর আর ইন্দ্রিয় প্রতীয়মান, সেই-ই হচ্ছে 'অধ্যাত্ম'। 

সমুদ্রে নাবিক কম্পাস ছাড়া জাহাজকে ভাসাতে  পারেনা। ঠিক তেমনি যে কোন সাহিত্য কিংবা রচনা বিশেষ উদ্দেশ্যকে যদি বহন করে চলতে না পারে, তবে বিস্মৃতির গর্ভে হারাতে বাধ্য। 

সাধারণতঃ মানুষ দর্শন নামক বিষয় থেকে নিজেদের দূরত্ব বজায় রাখে। একেই প্রাত্যহিক জীবন সংগ্রামের কঠিন মুহূর্তের ঢেউগুলিকে পাশ কাটিয়ে এগিয়ে যেতে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পরে, তার পর যদি মনের উপর বাড়তি চাপকে বরদাস্ত করাটা অসম্ভব হয়ে পরে।   

 অনেক মাটির কাছাকাছি, যেখানে ব্যাঙ্গমা আর ব্যঙ্গমী গল্প করবে তাঁদের পরের প্রজন্মের কাছে। সেখানে থাকবে ভাষার সাথে পাঠকের আত্মীয়তা, ভাবনার সাথে বিষয়ের গভীর হৃদ্রতা, গল্প যেন হৃদয়কে স্পর্শ করে যায়,  ধীরে ধীরে গল্পের জাল পাঠকের মনে বিস্তার করে বারংবার পরের ঘটনাকে জানার ক্ষিধে বাড়িয়ে তুলবে।  

রবিবার, ১ ডিসেম্বর, ২০২৪

(২৩৮) জগাখিচুড়ি ( ষষ্ঠ সংখ্যা)

(২৩৮)  জগাখিচুড়ি ( ষষ্ঠ সংখ্যা) 

মৃত্যুর রকমফের 

মৃত্যু কোনটা হালকা আবার কোনটা ভীষণ ভারী। এক বোকা বুড়ো একদিন  বলেছিল মৃত্যু পাখির পালকের থেকে হালকাও হতে পারে, আবার সে পাহাড়ের চেয়ে ভারীও হতে পারে। আসলে বুড়োটা হয়তো বোঝাতে চেয়েছিলো ব্যক্তি জীবনটা যখন সমষ্টির স্বার্থে ব্যবহৃত হয়, তখন তাঁর মৃত্যুটা অবশ্যিই সমাজের পক্ষে  ভারী হয়ে যায়।   ব্যষ্টির থেকে সমষ্টি সব সময়ই বড়।  আজকাল ভারী মৃত্যুর বড্ডই আকাল পড়েছে, কালে ভদ্রে দুই একটা পাওয়া যায়।  

    *************************************************

জীবিকার মিছিল 

লক্ষ্য যখন জীবিকা হয়, তাকে সামনে রেখে প্রত্যেক দিন দলে দলে মানুষের মিছিল অলিতে গলিতে, রাজপথে,  জীবন যন্ত্রণাকে পরিশ্রমের বিনিময়ে অর্থ দিয়ে  বোঝ কমাতে শুধু হেঁটেই চলেছেন। এই হেটে চলার মধ্যে যাবার উদ্দেশ্যটা কখন যেন গৌণ হয়ে গেছে, শুধু মাত্র রয়ে গেছে অজান্তেই একটা চলার অভ্যাস। তারই মধ্যে খুব অল্প সংখ্যাক মানুষ আছেন যাদের দেখে খুব প্রাণবন্ত মনে হয়। তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ ভ্রান্তিতে ভুল রাস্তায় লক্ষ্য খুঁজতে গিয়ে গোলকধাঁধায় পরে যায়, আর যখন সেখান থেকে কোনক্রমে বেরিয়ে এসে  দেখে  জীবনটা জীবিকার ভিড়ে হারিয়ে গেছে, পরে আছে শুধু দেহটা।

    *************************************************

সিলেবাসে নেই 

সমাজবিজ্ঞানী কিংবা মনোবিদরা পথ ভ্রান্তির পিছনের বহু কারণ বের করবেন, তার সাথে উপযুক্ত রাস্তা বাতলিয়ে দিয়ে আদর্শ পথের ঠিকানা দিয়ে দেবেন, কিন্তু সেই পথে কেউ হাত ধরে নিয়ে যাবেন না। সংসারের চাকাটা এইভাবেই যুগ যুগান্তর ধরে চলে  আসছে। তাই তাকে নিয়ে মাথা ঘামানোর কেউ চেষ্টা করে না। 

    ************************************************

ছাগলের তৃতীয় বাচ্ছা 

প্রত্যেক বস্তুকে  ব্যবহারের জন্য আদর্শ নিয়মের পদ্ধতি দেওয়া হয়, শুধু মাত্র ক্ষমতা  ব্যবহারের নিয়ম-কানুনকে  বাদ দিয়ে। তাই ব্যবহারকারীরা কিছুদিন পরে সেটা ভুলে  যান , কারা যেন সেই বস্তুটা তাদের হাতে তুলে দিয়েছিলেন আর কেনই বা তুলে  দিয়েছিলেন এবং তারা বর্তমানে সেটাকে যথাযথ ব্যবহার করতে পারছেন কিনা ইত্যাদি ইত্যাদি।  কোন লেখক আর প্রকাশনা কেউই এগিয়ে আসছেন না এই অজান্তে প্রতিপালিত ক্ষমতার ব্যবহারের গাইড লাইন প্রকাশ করতে। যদি অতিরিক্ত ব্যবহারে যদি কোনো ত্রুটি বেরিয়ে পরে, তবে বাইরের লোকেরা যাই বলুক না কেন, ভিতরের মানুষদের নজর ইচ্ছকৃতভাবে এড়িয়ে যায় বলে বৈদ্যি  আনার প্রয়োজন অনুভূত হয় না। আসলে শাসন নামক বাচ্ছাটা  বড্ড শক্তিশালী তাই বিচার কিংবা আইন টোটাল সিস্টেমের কাছে তারা ছাগলের তৃতীয় বাচ্ছা।  

    ************************************************

দেওয়াল 

মহাসমুদ্রের সাথে ব্যবধান তৈরি করে ব্যাঙকে একটি সংকীর্ণ কুয়োতে পাঠিয়ে দেবার ক্ষেত্রে দেয়ালের সাংঘাতিক ভূমিকা আছে। আসলে আজও মানুষ  আকাশের বিশালতাকে, সমুদ্রের গভীরতা ভয় করে, পাছে যদি মানুষগুলি খাঁচা ছেড়ে অনন্তের দিকে যাত্রা শুরু করে দেয়, তাহলে তো রাজা উজিরদের চাকুরী থাকবেনা।  তাইতো সুযোগ পেলেই ধর্মের নামে, লিঙ্গের নামে, জাতির নামে দেওয়াল তুলে দেয়। 

        ************************************************

অসূর্যস্পর্শা আইন 

আইন  অন্দরমহলের নারীদের মতো আজকাল তাকে পর্দার আড়ালে ঢেকে রাখা হয়।  শুধু মাত্র উপরে ক্যাপশনটা লাগিয়ে দিয়ে বলা হয় না "সাধারণের ব্যাবহারের  জন্য নয়"। সাধারনের সংখ্যাটা বড্ড বেশি, তারা যদি উঠতে বসতে তাকে  ব্যবহার করতে শুরু করে তাহলে তো শেষ হয়ে যাবে আর যদি শেষ হয়ে যায় তাহলে অসাধারণের জন্য কিছু রাখা যাবেনা।  আসলে বস্তুজগতে শাসকরা  সবকিছুকেই বস্তু হিসাবে দেখে। তাঁদের কাছে আইন হয়তো ভোজ্য বস্তু কিংবা প্রসাধনী, যা বারবার  ব্যবহারে ক্রমশই কমে যায়। তাই শাসক সাধারনের অধিক ব্যবহারকে বেশ কিছু  রহিত করে অসাধারণের জন্য সংরক্ষিত করে সংবিধানের সেই অমূল্য বাণী - আইনের চক্ষে সমান অধিকারের সুচারু অর্থ খুঁজে পেয়েছেন।       **************************************

 ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ -  ২/১২/২৪ 

 https://rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে

বুধবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৪

আত্ম নির্মাণ (২৩৭ )

আত্ম নির্মাণ  (২৩৭ )

"ভক্তির অন্বেষণে"র  প্রথম পর্বের পর -

নামটা 'ভক্তির অন্বেষণে ' না দিয়ে 'মুক্তির খোঁজে' নাম দিলে ভালো হতো।  যাঁরা আজকে এসেছেন কিংবা কালকে আসবেন বা বিগত দিনগুলিতে এসেছেন, সেখানে প্রত্যেকের মধ্যে বোধ হয় একটা ভাবনাই ভীষণ সক্রিয়, তা হচ্ছে সাময়িক মুক্তি  দৈনিন্দন একঘেয়ে জীবন থেকে। এক রকম পালিয়ে আসা আর যতটা মানসিক  আনন্দ আঁচলে করে বেঁধে নিয়ে যাওয়া যায়। একটা পরিবেশ থেকে অন্য একটি পরিবেশে পা পড়তেই ভাবনাগুলি তাদের সাথে কেমন যেন একাত্ম হয়ে যায়। আবার পরিবেশের পরিবর্তনে সেই পূর্বের চিন্তাগুলি মনের মধ্যে জেগে ওঠে। আবার একরাশ দুঃখের সাগরে ডুবে গিয়ে সঞ্চিত আনন্দের হাড়ি থেকে রস নিষ্কাশন শুরু হয়ে যায়। প্রকৃতির আচরণের সাথে তাল মিলিয়ে আনন্দ আর দুঃখের জোয়ার-ভাটার আমেজে আমরা অসুস্থ বোধ করি। এটাই আমাদের মধ্যে  জাগ্রত করছে মুক্তির আকাঙ্খাকে।  

কল্পনা থেকে বাস্তবে  ফিরে এলাম। দূর দূরান্ত থেকে  দলে দলে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, যুবক-যুবতী, পিতামাতার হাতধরে শিশুরাও এসেছেন, কয়েকজনকে দেখলাম সুদূর ফরাসি দেশ থেকে এসেছে ভারতবর্ষের এই আশ্চর্য্য সাধক ও সন্যাসীদের স্মৃতি বিজড়িত মঠকে দর্শন করতে।  যাঁদের সামর্থ আছে তারা এসেছেন নিজের গাড়িতে, কেউবা পাবলিক পরিবহনে। একজন মধ্যবয়স্ক মহিলাকে দেখলাম সিকিউরিটিকে জিজ্ঞাসা করতে যে শিলিগুড়ি যাবার রেলওয়ে টিকিট কোথায় পাওয়া যাবে;  মঠের ভিতরে সম্ভবত রেলের টিকিট কাউন্টার আছে। মন্দিরের ভিতর প্রবেশ করতেই দেখলাম, বেশ আঁটসাঁট নিয়ম-কানুনের শৃঙ্খল দিয়ে গোটা মঠটা পরিবৃত। হয়ত মানুষের চিরন্তন নিয়ম ভাঙ্গার অভ্যাসের কথা মনে রেখেই এই সব করা।  

দেখা শুনা হল কিন্তু চেনা জানা হলো না। সেটাই নিরবিচ্ছিন্ন সাধনা।  যেভাবে প্রত্যহ  ঝাড়ু হাতে  পৃথিবীর সব ময়লা সাফা করার সাধনায় ব্রতী হয়েছে আজকের ঝাড়ুদাররা ঠিক তেমনি সুক্ষ মনের আবরণের উপর ময়লা না ঝাড়লে জানাটা অজানাই থেকে যাবে, দেখাটা শুধু অন্তঃসারশূন্য হয়ে থাকবে উপলদ্ধি হবে না। 

গাছ আছে তার অজস্ত্র ডালপালার বিস্তার আছে, সেখানে কত পাতার মেলা বসেছে, কিন্তু তারা যেন কোন এক অদৃশ্য সংকেতে সে যেন স্থানুর মতো দাঁড়িয়ে আছে।  গাছে পাখি আছে তারা কিন্তু ডাকছে না কিংবা মানুষের কোলাহল শুনতে শুনতে তারা শ্রোতা হয়ে গেছে।  নদীর জলও তার কোলাহল করতে ভুলে গেছে। কিন্তু এদের সবার কাছে আমাদের আশা ছিল একটা সজীব চিত্র মেলে ধরে তাদের জড়র তকমাটাকে আড়াল করবে। মনে হচ্ছে এক কঠিন কমান্ডারের নির্দ্দেশ মাথা নিচু করে পালন করছে। বাতাসকে কে যেন  এখানে আসতে বারণ করে দিয়েছে। আকাশে যথেষ্ট পরিমান মেঘ আছে, তাঁরা বোধহয় কোন কমান্ডারের নির্দ্দেশের অপেক্ষা করছে ঘর থেকে বেরোনোর। 
অবশেষে ১১টাকার টিকিট কেটে লঞ্চে উঠে বসলাম, উদ্দেশ্য দক্ষিনেশ্বর মন্দির দর্শন। একদল সর্বস্তরের নারী-পুরুষ বেরিয়েছে পুন্য অর্জন করতে।  আজকে পুন্য কখন যেন পণ্য হয়ে গেছে, তাকে পেতে গেলে নির্ধারিত বিনিময় মূল্য দিয়ে কিনতে হয়। পুণ্যকামী মানুষেরা পুন্য অর্জনের প্রশ্নে প্রসাদের ডালার  আকৃতিকে বিশেষ প্রাধান্য দিয়ে থাকেন, যেটি লক্ষ্য করলাম ছোট ডালার অধিকারীদের প্রতি বড় ডালার অধিকারীদের করুনার নজর বর্ষণে । শ্রেণী চেতনা এখানেও উপস্থিত। পূজান্তে পূজারীর কাছ থেকে ডালাটি উদ্ধার করে বীরদর্পে পুণ্য অর্জনের অনাস্বাদিত আনন্দে তাঁরা ভরপুর হয়ে ওঠে। 

ভক্তিকেও যে ভক্তিভরে খুঁজতে হয় সেটা সমগ্র বেলুড় মঠ ঘুরে আসার বেশ কিছুদিন পরে আবিষ্কার করলাম। তাই সময় নিয়ে পরবর্তী পর্বটা লিখলাম। একেই বোধহয় নলেজ প্রসেস বলে। বস্তু সম্পর্কিত ধারণা যে নিত্য গতিশীল এটা বারবার স্মরণে রাখা দরকার। মনে হয়, আসলে এই পৃথিবীর সব কিছুর মধ্যেই আমরা নিজেকেই খুঁজি সেটা  স্ত্রী, সন্তান, পারিপার্শিক প্রকৃতির যা কিছু সৃষ্টি  তার কোন কিছুই সেখানে বাদ যায়না। উপরোধের ঢেঁকি গেলা, সে তো হজম হবার কোন লক্ষণ না দেখিয়ে গলার কাছে পুটুলি হয়ে থাকে। যেখানে নিজেকে খুঁজে পাই  সেখানে মন আত্ম-তৃপ্তিতে ভরে ওঠে আর যেখানে পাইনা তাকে নেতিবাচক তকমা দিয়ে নিজ অন্তরের সংকীর্ণতাকে অপর কোন বস্তুর উপর চাপিয়ে দিয়ে  দায় মুক্ত হই। এইটি বোধ হয় দুর্বল মানুষের একমাত্র সান্ত্বনা। 

রামকৃষ্ণ ভাব আন্দোলনের স্রোতে কেউবা অবগাহন করছেন আবার বেশ কিছু মানুষ পাড়ে বসে দূর থেকে সতঃ সলিলা বহমান নদীর লীলাকে পর্যবেক্ষণ করে অনাবিল আনন্দ লাভ করছে। এ এক চিরন্তন তৃষ্ণা, সাময়িক ভাবে গলা ভিজলেও আবার দ্বিগুন উৎসাহে ভাব সাগরের জলকে আকণ্ঠ পান করতে উদ্যত হয়। এ যেন এক না থামা বৃত্ত। সেখানে যতি চিহ্নের প্রবেশ নিষেধ।

প্রকৃতি মানুষের জীবনে অপরিপূর্ণতার বীজ রোপন করে বারবার শুধু পরিপূর্ণতার আকাঙ্খার সাথে সংগ্রামে লিপ্ত করে দেয়। অসহায় মানুষ সারা জীবন ধরে সেই অসমাপ্ত আকাঙ্খার পিছনে ছুটে যায়। মাঝে মাঝে এই অসম দৌড়ের প্রতিযোগিতা থেকে পালতে ভীষণ ইচ্ছা করে। এই গতানুগতিকতাকে ভাঙ্গতে গিয়ে মানুষ নিজ রুচি অনুযায়ী সাময়িকভাবে ব্যতিক্রমী হতে চায়। কারোর কাছে সেই লক্ষ্যহীন যাত্রা শুঁড়িখানায় গিয়ে শেষ হয়, যেখানে  কারণসুধার কারণগুণের পরিসমাপ্তির  সাময়িক নিবৃত্তিতে এই ধূমায়িত সমাজে আবার  ফিরে আসা ঠিক যেন ধর্ম স্থান থেকে ফিরে আসার অনুভূতি।  মদ না খেয়েও বার বার মাতাল হয়ে যাচ্ছে অভীষ্টকে লাভ করার অদম্য নেশায়। প্রত্যেকের হয়তো ভিন্ন ভিন্ন প্রত্যাশা কিন্তু সব কিছুর মধ্যে একটা ভীষণ অপূর্ণতার  ছাপ। আমরা প্রতি মুহূর্তেই মনের নির্দ্দিষ্ট ঘর থেকে উদ্বাস্তু হচ্ছি  শুধুমাত্র  ইচ্ছার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে। 

 
 ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ -  ২৮/১১/২৪ 

 https://rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে

বুধবার, ৬ নভেম্বর, ২০২৪

(২৩৬ ) আত্মবন্দী

 (২৩৬ ) আত্মবন্দী 

মানুষ কিংবা  সংগঠন যাঁরা নিজেরাই তাদের মতাদর্শের বন্ধনে আবদ্ধ তারা সাধারণ মানুষকে আদৌ কোন মুক্তির পথ নির্দ্দেশ করতে পারবে ? বোধহয় না। সে তো সব সময় তার বেশভূষা সামলাতেই  ব্যস্ত, অর্থাৎ সে অহংকেই আঁকড়ে ধরে আছেন, পরিত্যাগ করতে পারেনি। 

 অভিমুখ যদি হয় আত্মার সাথে পরমাত্মার মিলনের মাধ্যমে দুঃখ-কষ্ট থেকে মানুষের মুক্তি, তাহলে আমিষ-নিরামিষ, জাতপাত, ধর্মীয় বিভাজনে নিজেদের  আগাপাছতলা  আবদ্ধ করে মুক্তির খোঁজ করা একান্তই ভাবের  ঘরে চুরি। 

পুরাতন মূল্যবোধের সাথে নতুনের যদি সঠিক সংমিশ্রণ না হয় তাহলে চৈতন্যের উদয় কখনই হবে না। পুরোনো দইয়ের সাথে নতুন দুধের অপ্রতিরোধ্য মিশ্রণ যেমন জন্ম দেয় নতুন মাত্রার দইয়ের, ঠিক তেমনটি।  

গ্রহণ না ত্যাগ কোনটির প্রাধান্য আজকে বেশী - এই প্রশ্নে ভারতবর্ষের সমাজজীবনে গুটি কতক মানুষ ছাড়া বাদবাকি সবাই গ্রহণের সপক্ষে। যে কারণে স্বামী বিবেকানন্দ যখন মার্কিন মুলুক থেকে ফিরে এসে ভারতবর্ষে অদ্বৈত বেদান্তের ভাবধারা কেন প্রচার করতে রাজী হন নি, সেই প্রশ্নের  কারণ ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, যে দেশবাসী  ভোগ কি, তাই-ই জানেনা, তাকে ত্যাগের মন্ত্র কি শিখাবেন। 

সামগ্রিক চাহিদার প্রশ্নে সেদিন আর আজকের মধ্যে খুব বেশী জনজীবনে ফারাক কি কমেছে ? বরং শুধু যে বেড়েছে তাই নয়, নিত্য নতুন ভোগের সামগ্রী  বাজারজাত হওয়াতে, তাকে পাবার লক্ষ্যে মানুষ নিজেদের আর্থিক ক্ষমতার উর্দ্ধে উঠে তাকে লাভ করার জন্য যে কোন অসাধু উপায় অবলম্বন করতে  বিন্দুমাত্র চিন্তা করছে না। 

মানুষের এই নেতিবাচক মনোভাবকে এক শ্রেনীর রাজনৈতিক দল  এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় ধর্মের মোড়কে আচ্ছাদিত বিধর্মী পুরোহিত সম্প্রদায় এবং সামন্ততান্ত্রিক ভাবনায় দীক্ষিত সমাজের কর্ণধাররা  একমাত্র শিক্ষা  এবং অর্থের  অভাবে  পীড়িত সাধারণ মানুষকে বিভাজনের  উৎসাহ দান করছে।  সাধারণ মানুষের জীবনের সমস্ত সময়কে কোন মন্ত্রবলে জীবনভাবনার বদলে  জীবিকার ভাবনায়  কেন্দ্রীভূত করেছে। তারা ভুলে গেছে শুধুমাত্র নিজের  জীবন-জীবিকার সংঘর্ষে উদয়াস্ত ব্যস্ত থেকে কি ভাবে মানুষের সংগ্রামের ভাবনাকে  উপলদ্ধি করা যায়। সমগ্র বিশ্ব জুড়ে মুষ্টিমেয় কিছু স্বার্থন্বেষী মানুষ একটি সিস্টেমের ব্যার্থতাকে ঢাকতে  সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকে ঘোরাতে এই ধরনের একটি নির্লজ্জ পদ্ধতির প্রবর্তন করেছে। শুধু এখানেই তারা থেমে থাকেন নি, সৃষ্টিধর্মী এবং প্রগতিশীলতার  অন্যতম মাধ্যম সেই শিক্ষা থেকে মানুষের মনোযোগকে সরিয়ে নেবার  জন্য সিলিকন ভ্যালিতে একদল তথ্যপ্রযুক্তির কর্মীরা নিভৃতে এক বিধংসী  বিষ নিত্যনতুন ফরম্যাটে পরিবেশন করে যাচ্ছেন, যার দৃষ্টান্ত মোবাইল ফোনের নিরবিচ্ছিন্ন ব্যবহার।   

এই প্রবল শক্তিধর সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হতে গেলে সাধারণ মানুষের হাতে প্রকৃত শিক্ষার হাতিয়ার তুলে না দিলে শুধু মাত্র সাইনবোর্ডের ডিসপ্লেতে কাজ হবে না। যে দেশের অস্থি মজ্জায় আধ্যাতিকতার বীজ বপন করা আছে, তাকে সেভাবেই সমৃদ্ধ হতে  দেবার দরকার। ভারতীয় দর্শনের শক্তি সিলিকন ভ্যালির থেকে অধিক ক্ষমতাশালী।  শুধু দরকার নিজেদের তৈরি ঘেরাটোপের বাঁধন থেকে বেরিয়ে এসে  বুক ভোরে একরাশ গভীর নিশ্বাস নেবার আর নেতিবাচক প্রচারের মধ্যে সময়  নষ্ট না করে ইতিবাচক দিকটা বারংবার  তুলে ধরা স্বার্থক না হওয়া পর্যন্ত। 

ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ -  ০৭/১১/২৪ 

 https://rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে

মঙ্গলবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৪

(২৩৫ ) ভক্তির অন্বেষণে ( প্রথম অংশ) -

(২৩৫ )ভক্তির অন্বেষণে ( প্রথম অংশ) -

আমার বেলুড় মঠ ভ্রমণকে অনায়াসে দুটি পর্বে বেটে দেওয়া যায়। একটি ভ্রমনের পূর্বে আর অন্যটি ভ্রমনের পরে। অবশেষে বেরিয়েই পড়লাম।  যাত্রাপথ আপাতত বেলুড়মঠ। ঘড়ির কাটায় ঠিক সকাল ৯টা, নিউটাউন বাস স্ট্যান্ডে এসে দাঁড়ালাম। আমার সাথে সেই স্ট্যান্ডে অনেক চাকুরীরতা  যুবক-যুবতীরা  অপেক্ষা করছিল তাদের নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাবে  সেই  বাসগুলির জন্য। আমার কোন তাড়া ছিল না। খুব প্রয়োজন না থাকলে আজকাল বাড়ি থেকে খুব একটা বেরোই না। কথাবার্তা, আবদার সবটাই আমার নিজের সঙ্গে।  কিছু খেতে ইচ্ছা করলে নিজেকে দিয়েই সেটি পূরণ করে থাকি অর্থাৎ কারোর সাহায্য নিতে চাই না। মনে হয় ভালো থাকার পাসওয়ার্ড হচ্ছে যতদূর সম্ভব নিজের চাহিদা কমানো।  ভাবলাম, মানুষ তো নিজের বাধা ধরা বৃত্তের বাইরে তখনিই যায় যখন  নিজেকে পূর্বের জায়গায় খুঁজে পায়না।  নিজের প্রয়োজনকে মিটাতে, সেখানে সব ধরনের উপকরণ আছে।  আমিও বেরোচ্ছি সেই উদ্দেশে যেটা ঘরে বসে এই মুহূর্তে পাচ্ছিনা বলে।   
ভীষণ ইচ্ছা করছিল গভীর ভাবে জানতে যাঁরা  মূর্তির পূজা করে থাকেন  তাদের ভক্তির উৎসটাকে জানতে ও বুঝতে। না বুঝে কোন দিন কারোর কাছে নিজেকে সঁপে দিইনি। বাবা যতদিন ছিলেন, ততদিন বাড়িতে পূজা-আর্চ্চা  একদমই হতোনা , সেই রেয়াজটা আমাদের বাড়িতে চলে আসছিল। ইদানিং কন্যা মূর্তি পূজার রেওয়াজ শুরু করেছে। মনে হয়, কোন প্রাপ্তির আশা করছে, যা তার পুরুষকার দ্বারা সম্ভব হচ্ছেনা।  আমি দূর থেকে  সেটা লক্ষ্য করি কিন্তু তার ভিতরে প্রবেশ করতে পারিনা, কেননা অন্তরের সাথে অন্তরের হয়তো মিল হয়নি বলে। এই অন্দরমহলের অনুপ্রবেশের  প্রবেশ পত্রটি খুজতেই বেলুড় যাত্রা।        
    দীর্ঘ আধ ঘন্টা বিশেষ একটি বাসের জন্য অপেক্ষা করে না পাওয়াতে বালিহল্টগামী একটি প্রাইভেট বাসে উঠে বসলাম। জীবন যুদ্ধের সৈনিকরা একে একে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে নেমে যাওয়াতে বিশ্ব বাংলা পার হবার পর একটা বসার জায়গা পেলাম।  ফাঁকা রাস্তা পেয়ে বাসটি উর্ধশ্বাসে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাবার জন্য ছুটতে শুরু করলো। বেগতিক দেখে সামনের সিটের উপরের হাতলটি শক্ত করে রাখলাম।  মনে মনে পণ করছিলাম, আজকের যাত্রাপথে বাইরের কাউকেই আমার চক্ষু  ক্যামেরার নজর থেকে হারাতে দেব না।  নিউটাউনের চারপাশে বহু গাছের সমারোহ। কোন কোন জায়গার অবিন্যস্তভাবে গাছের উথান দেখে মনে হয়,  যারা পুঁতেছিলো তাদের যে বেশ আন্তরিকতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছিলো। এখন বেলা প্রায় ১০টা , মাঝে মাঝে লালবাতিতে বাসটি দাঁড়াচ্ছিলো, নারী-পুরুষেরা বেশ ব্যস্ততার সাথে রাস্তা পারাপার করছিলো। আজকে নিজেদের জীবনকে রক্ষা করতে জীবিকার সংগ্রামে লিপ্ত যারা, তাদের মধ্যে  লিঙ্গ ভেদাভেদ ঘুচে গেছে , কেননা রাস্তায় নারী-পুরুষের উপস্থিতি মোটসংখ্যার প্রায় অর্ধাংশ।  তাঁরা তাদের নির্দ্দিষ্ট যাত্রা পথে পৌঁছাতে দৌড়ে যাচ্ছে ।  অবশেষে, বালিখালে এসে উপস্থিত হলাম। এবার নামার পালা।  নেমেই একটা টোটোতে গতির উল্টো দিকের আসনে জায়গা পেয়ে গেলাম। আমার পাশে একজন মধ্য বয়স্ক ব্যক্তি, ঠিক তার বিপরীতে  একজন যুবতী মা, যিনি  কেজিতে পাঠরত সন্তানকে   বিদ্যালয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।  শুরু থেকেই সেই মধ্য বয়স্ক ব্যক্তিটি সেই শিশুটিকে তার অপছন্দের উত্সগুলিতে  নাড়া দিয়ে  শিশুটির বিরাগভাজন হবার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিল। শিশুটির ক্রোধ দেখে মানুষটি একধরনের একটা আদিম আনন্দ উপভোগ করছেন, যেন খাঁচায় থাকা বাঘকে কাঠি দিয়ে খোঁচা দিয়ে তার প্রতিক্রিয়া দেখার মতো। কিছু না  ভেবে তার মাতৃদেবীও সময়ে সময়ে সেই পরিহাসে যোগদান করছেন।  অবশেষে, বেলুড়মঠ এসে গেলো, ঘড়িতে সময় প্রায় ১১:৩০মিঃ। যেহেতু ইতিপূর্বে এখানে আসিনি তাই এই জায়গাটির সম্পর্কে আগে থেকেই বেশ খানিকটা রোমান্টিক ধারণা পোষন করছিলাম। বেশ খানিকটা ওয়ার্ডসওয়ার্থ-এর ইয়ারো আনভিসিটেড-এর মতো।  দিল্লির লালকেল্লায় একবার লাইট এন্ড সাউন্ডে ভারতের ইতিহাসের একটি অধ্যায় অনুভব করে ছিলাম।  ঠিক সেরকম একটা অনুভূতির ভাবনা নিয়ে প্রবেশ করলাম। ভেবে ছিলাম  প্রবেশদ্বার দিয়ে ঢুকতেই শুনতে পারবো সেই বেদ মন্ত্রের পাঠ। যদিও সেই মন্ত্রের সব অর্থ বুঝবোনা  কিন্তু হৃদয়ের তন্ত্রীতে সেই মূর্ছনা তো প্রতিধ্বনি হবে, সেটাই আমার কাছে যথেষ্ট। সারা মঠ জুড়ে অনুরণিত হবে সেই সুর আর তার সাথে তাল মিলিয়ে গাছে গাছে  পাখির কোলাহল, মন্দিরের বিলম্বিত ঘন্টাধনি , হুগলী নদীর জলের ফেনারাশি যেন নিজেকে তার সাথে একাত্ম হয়ে গিয়েছে। গাছের তলায় ঋষিমুনিরা দেশবিদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের  ভারতবর্ষের প্রাচীন সাহিত্য পড়াচ্ছেন গভীর মনযোগে।  একবার সংস্কৃতে পাঠ করে তাকে ইংরেজিতে তর্জমা করে দিচ্ছেন। পরিছন্ন মাটির বাড়িগুলি বাগান আর গাছপালা পরিবৃত হয়ে একটা প্রাচীন আশ্রমের  গন্ধ বহন করছে।  গাছের তলায় বাঁধানো বেদীতে ধ্যানমগ্ন সন্যাসীদের মূর্তি  বসানো আছে।  বড় বড় গাছের মেলে দেওয়া ডালপালা সূর্য্যের কিরণকে বেশ  খানিকটা আড়াল করে রেখেছে।  মনে হচ্ছে  এই সেই আদর্শ জায়গা যেখানে স্বামী বিবেকানন্দের  নেতৃত্বে এক বিশাল সন্যাসী বাহিনী রামকৃষ্ণ ভাব আন্দোলনের কুচকাওয়াজ  সংগঠিত করছে বিশ্ব জয়ের জন্য। একই সঙ্গে ভারতবাসীকে জাতীয়তাবোধে উজ্জীবিত করে  বিদেশী শক্তির হাত থেকে ভারত মাতাকে মুক্ত করার পটভূমি রচনা করার দৃশ্যের অবতারণা করছেন।  যেন অদ্বৈতবাদে দীক্ষিত  একদল  যুবক যারা সন্যাসী অপেক্ষা অধিকতর  ছিলেন সৈনিক , তাদের পদশব্দে মুখরিত এই লাইট এন্ড সাউন্ডের অনুষ্ঠানটি।  
পরবর্তী সংখ্যায় কি দেখলাম ০০০০০০০
ক্রমাশঃ 
ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ -  ৩০/১০/২৪ 

 https://rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে

শনিবার, ৫ অক্টোবর, ২০২৪

(২৩৪) অতঃকিম

(২৩৪)  অতঃকিম 


কি অদ্ভুত এই জগৎ !  তার থেকেও আশ্চর্য এই মানুষের ভাবনা।  যখন প্রকৃতি তার ধংসলীলা এই পৃথিবীর বুকে সংগঠিত করে, তখন আমরা তাকে স্বাভাবিক বলে মেনে নিই আবার প্রকৃতিজাত মানব যখন কোন সমাজ বহির্ভূত কর্মে ব্যাপৃত হয়, তখন যাই যাই  রব ওঠে।  তার কারণ হিসাবে বলা যেতে পারে, প্রথমটি মানুষের নাগালের বাইরে আর অন্যটি আয়ত্তের মধ্যে।  যদিও মানুষ আজ প্রকৃতিকে বাঁধার ক্ষেত্রে যতখানি আন্তরিক, তার সিকি ভাগও কিন্তু ব্যয় করেনা, মানুষের দ্বারা মানুষের ধ্বংসকে প্রতিহত করতে। তার পরিবর্তে সভ্যতাকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে  ভীষণ সচেতনভাবে দায়সারা গোছের একটা বন্দোবস্তকে আইন নামক আচ্ছাদনে মুড়ে দিয়ে একধরনের অহমিকায়  শাসকরা  ভুগতে থাকে।  সভ্যতার যে অগ্রগতি হয়নি তার প্রমান হচ্ছে দেশে দেশে সামরিক খাতে আর অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে শান্তি শৃঙ্খলার প্রশ্নে আর্থিক বরাদ্দের  ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি। বিজ্ঞানকে যতনা সৃষ্টিমূলক কর্মে ব্যাবহৃত হয়. তার থেকে অনেক বেশি ব্যবহৃত হয় ধ্বংসমূলক কর্মে। 
শাসক  যতনা আগ্রহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করতে, তার থেকে তাদের অনেকবেশি আগ্রহ শাষিতদের শায়েস্তা করার জন্য যত্রতত্র শিবির(থানা)  প্রতিষ্ঠা করার জন্য। ভীষণ সচেতনভাবে তারা জানেন শাসনের নামে  ত্রাসনের প্রতিষ্ঠা করাটা কতটা  জরুরি, কেননা তাদের শাসনের উপজাত ফসল হচ্ছে নাগরিক অসন্তোষ এবং তাকে দানা বাঁধতে দেওয়া যাবে না।      

এবার প্রশ্ন হচ্ছে এই বিশ্বে সভ্যতার অগ্রগতি হচ্ছে না ক্রমশই পিছিয়ে যাচ্ছে। যেই মতবাদ বলে, বিশ্বে আত্মার কোন স্থান নেই, এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ড শুধু মাত্র বস্তু বা পদার্থ দিয়েই গঠিত। মানসিক বা আত্মিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণের একমাত্র নিয়ন্ত্রক হচ্ছে বস্তুজগৎ। মানুষের মন ও চেতনা বস্তু জগতের অধীন।  পদার্থ বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী এই জড় বিশ্বকে ব্যাখ্যা ও প্রাধান্য দেওয়া হয়। এই মতবাদই হচ্ছে বস্তুবাদ। 

বস্তুবাদ যেখানে সমাজের নির্ণায়ক সেখানে সবকিছুই সেই আদর্শের দ্বারা পরিচালিত হবে , সেটি সন্দেহাতীত। আধ্যাতিক বা অতিপ্রাকৃত সত্তার কোন অস্তিত্ব এখানে নেই। অর্থাৎ আত্মদর্শন  এখানে একটি অপ্রচলিত শব্দবন্ধ মাত্র।সুতরাং প্রচলিত শিক্ষা ও সংস্কৃতি তার দ্বারা পরিচালিত হবে, এটাই বাস্তব।  আজকে  সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার পরিবর্তনের পিছনে বস্তুবাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য।  তাই সর্বত্র রাষ্ট্রীয় অব্যবস্থার ত্রুটিকে আড়াল করতে  ভুক্তভোগীকে আর্থিক  অনুদান দেওয়াটাকে প্রাথমিক প্রতিষেধক হিসাবে গণ্য করাটা বস্তুবাদেরই  কুফল। সেখানে সব সময় মানুষের অন্তর্জগৎকে অস্বীকার করা হয়, কেননা সেটাই যান্ত্রিক বস্তুবাদের ধর্ম। প্রকৃত শিক্ষার একান্তই অভাব।

যেমন,  শিক্ষাকে শিল্পবান্ধব করতে গিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ভুলে গেছে প্রত্যেক মানুষের একটা আত্মিক দিক আছে। প্রকৃত শিক্ষা অনুরাগীর পরিবর্তে কতগুলি মানুষরূপী  যন্ত্র এই  সমাজ তৈরি  করছে।  অবশ্য কিছু মানুষ এই অব্যবস্থার মধ্যেও বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো এই  সমাজে অবস্থান করছে, যাঁরা ভারতীয় সংস্কৃতির বাহক হিসাবে পরিচিত। এটাই বর্তমান বিশ্ব সমাজের  সামগ্রিক চেহারা । প্রাচ্যের দিকপাল নক্ষত্ররা আজ অবসর বিনোদনের চর্চার বস্তু।  সেই জীবরা আজ নেই আর প্রেম তো সুদূর পরাহত। নিরন্তর ভারতীয় দর্শন চর্চার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক পৃষ্ঠপোষকতা ভীষণ জরুরী। রামকৃষ্ণ ও স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে গড়ে ওঠা সেই নিরন্তর চর্চাই সেটাই  একমাত্র   সাংস্কৃতিক পুনরুজ্জীবনের পাথেয় হতে পারে এই বিপন্ন সময়ে।   

ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ -  ০৬/১০/২৪ 

 https://rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে

শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩৩)  একটি ফোঁড়ার  ইতিবৃত্ত  -


যুগে যুগে মানব দেহে  কিংবা সমাজে চৈতন্যের অভাবজনিত কারণে অশুভ ব্যাকটেরিয়ারা দানা বাঁধে  আর সেই অপরিপক্ব ব্যক্টেরিয়া থেকে পুঁজ গঠিত হয় আর তাদের সম্মিলিত রূপই ফোঁড়ার আকার ধারণ করে। এই ফোঁড়াটি মানুষ বা সমাজের এক অস্থায়ী রূপ।   এই প্রাক অবস্থানটি  ফোঁড়ার অভ্যন্তরীন অবস্থা। এই অবস্থ্যায় মানুষ দৈহিক যন্ত্রনায় কাতর হয়ে পরে, এই দৈহিক যন্ত্রনা থেকে পরোক্ষ প্রভাবে মানসিক যন্ত্রণার সম্মুখীন হয়ে পরে। এই যন্ত্রনা যখন তীব্র থেকে তীব্রতর হয় তখন তার পরোক্ষ প্রভাবে মনও সুক্ষ থেকে সূক্ষতর হয়ে চেতনাকে স্পর্শ করে। এই চেতনাই অজ্ঞানতা থেকে মানুষ ও সমাজকে মুক্ত করে।  এই চেতনাই পরিবর্তনের কান্ডারী।   এই পরিবর্তনটা আছে বলেই এই পৃথিবীটা গতিশীল, সেখানে কারোর চাওয়াতে  বা পাওয়াতে  কোন ইতরবিশেষ ফারাক ঘটেনা। এটাই বিজ্ঞান, এটাই সৃষ্টির দ্বান্দ্বিক চরিত্র এবং সেটি অপৌরুষেয় অর্থাৎ ব্যক্তি বিশেষের ক্রেডিট নেবার কিছু নেই। 

দীর্ঘদিন ধরে নিভৃতে মনোমন্দিরে যে ফোঁড়াটা পাঁকতে  শুরু করেছিল, সে একদিন বাহ্যিক পৃথিবীতে তারই মতো অসংখ্য প্রজাতির   সংস্পর্শে এসে ফেটে গিয়ে তার পুতি-গন্ধময় রূপটাকে এমন ভাবে ফুটিয়ে তুললো তাই দেখে সমাজের  দন্ডমুন্ডের কর্তাদের ভিরমি খাওয়ার  উপক্রম হলো।  আদতে ফোঁড়া এমন একটি ব্যাধি যতক্ষন পর্য্যন্ত সে দেহের  অভ্যন্তরে থাকে তখন গুণীজন তাকে অনুভৱ করতে পারেনা, ধীরে ধীরে যখন অল্পস্বল্প  নতুন চারার মতো উঁকিঝুঁকি দেয় তখনও  সমাজের বাৎসল্য প্রেম তার প্রতি জেগে উঠেনা।  যখন সে বিস্ফারিত হয়ে ফেটে পড়ার উপক্রম হয় , তখনও  সম্বিৎ ফেরেনা। তাকে সংস্কার করার পরিবর্তে তুলো আর গজের  আবরনে মুড়ে  ফোঁড়ার  যৌবনকে সর্বসমক্ষে আড়াল  করে।  অবশেষে একদিন যখন  সে উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে স্বীয় উন্মাদনায় সমাজের মাতৃক্রোড় থেকে জেগে উঠে তখন জগন্ময়ী'র   টনক নড়ে, কিন্তু তখন বড্ড দেরী হয়ে গেছে। অবাধ্য সেই নতুন শিশুটা  নিজের  অস্তিত্বের উপস্থিতি প্রতিষ্ঠিত না করে তার অগ্রগতিকে রোধ করেন না, এটাই তার চরিত্র।  অবশেষে পরাস্ত হয় অনাহুত ব্যাক্টেরিয়ারা, এই ভাবেই  মানবের ইতিহাস এগিয়ে চলে। 

পুঁজ-রক্ত কখনো দেহ বা সমাজের বাইরে থেকে আসেনা, শরীরের অভ্যন্তরে অর্থাৎ সমাজের অশুভ অভ্যাসের প্রবর্তন থেকে জন্ম নেয়া এক কাঙাল প্রজাতি, যে সদাই পাত্র হাতে নিয়ে মুক্তির জন্য প্রতীক্ষা করে। সুতরাং তাকে পূর্বের অবস্থায় আনতে গেলে সেই অশুভ প্রভাব থেকে দেহকে মুক্ত করতে হবে। অশুভ শক্তির চরিত্র প্রাথমিক ভাবে যেমন ছোঁয়াচে, সেটা অজ্ঞানতার কারণে ভীতি হতে পারে কিন্তু যেই মুহূর্তে অজ্ঞানের অপরপ্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা জ্ঞানের উন্মেষ হয়, তখন আর সে অজ্ঞানতার বোঝা বইতে চায়না, ভয় নামক অশুভ শক্তিটা কখন যে বিদায় নেয়, সে কেউ বলতে পারেনা। এই ভয়কে জয় করার সাহসটাও  ভীষণ ছোঁয়াচে, একবার মনের সঙ্গী হয়ে গেলে, বিচ্ছেদ  তখন সুদূরপরাহত।   এটাই অশুভ শক্তির বানপ্রস্থে যাবার কারণ। এই সব কিছুর পিছনে আছে অগ্নি, অনুভূতি থেকে যাঁর জন্ম। 

সভ্যতার ক্রমবিকাশে আগুন আর চাকার আবিষ্কার এবং ব্যবহার, মানুষের সাথে পশুর পার্থক্য নির্নয় করে মানুষকেই বহু  দূর পর্যন্ত এগিয়ে  দিয়েছিল। তাইতো প্রাচীন সাহিত্য ঋগ্বেদে দেখা যায়  'অগ্নি' শব্দের প্রতি ঋষিদের অশেষ দুর্বলতা। সংস্কৃত ব্যাকরণবিদ   যাস্ক কোথাও অগ্নি শব্দের অর্থ করেছেন 'অগ্নম্ নিয়তে'। যে কোন যজ্ঞে প্রথমে পূজা পেয়ে থাকেন অগ্নি দেবতা। ' অগ্রণি ভবতি' - অগ্নি হলেন দেবতাদের দলপতি , যিনি আহবান না করলে কোন দেবতা আসবেন না। সমগ্র দেবতাদের মধ্যে অগ্নির জন্ম প্রথম।  এই পৃথিবীর জন্মের আগে সমস্ত ব্রহ্মান্ড জলের তলায় মগ্ন ছিল অর্থাৎ তম্মাত্রায় নিমজ্জ্মান ছিল আর সেখান থেকে অগ্নির জন্ম হয়।  তন্মাত্র -  তৎ+মাত্র , তৎ মানে সেই।  শব্দ ( যা কর্ণ ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য ), স্পর্শ ( যা ত্বক ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য), রূপ ( যা চক্ষু ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য), রস ( যা স্বাদ ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য) এবং গন্ধ (যে নাসিকা ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য) এই পাঁচকে নিয়ে তন্মাত্র।  অনুভূতিই জ্ঞানের প্রথম স্তর কিংবা মাধ্যম বলা যেতে পারে।] এই বিকাশমান জগতের সৃষ্টি হচ্ছে অগ্নি থেকে।  একাধারে সৃষ্টি আবার অন্যদিকে যা কিছু অশুভ আছে তাকে ধংস করে থাকে এই অগ্নি। যে অগ্নিকে  যজ্ঞতে আমরা চাক্ষুস করে থাকি সেটি অগ্নির ভৌতিক রূপ। এই অগ্নির আরেকটি রূপ যাকে দেখা যায় না, সেটি অগ্নির আধ্যাত্মিক রূপ। এছাড়া বহু নামে অগ্নি ভূষিত। 

বহু ছোট বড় কাহিনীর স্রোতের ধারা এসে মিশেছে মহাভারতের সমুদ্রে।  সেই রকম একটা কাহিনীতে আছে, তপস্যার শক্তিতে বলীয়ান এক ঋষি ভীষণ কুপিত হয়ে সমগ্র সৃষ্টিকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছিলেন। এমন সময় দেবতারা তাঁকে নিষেধ করলেন।  উত্তরে ঋষি বললেন, " হে দেবগন, আমি তো এই অগ্নির সৃষ্টিকর্তা এবং আমার সৃষ্টির উদেশ্য হচ্ছে এই বিশ্বকে ধ্বংস করার। আমি যদি এই  কার্য্য থেকে বিরত হই, তাহলে সেই অগ্নিই আমাকেই ধ্বংস করে দেবে"। এই অগ্নি হলো ক্রোধাগ্নি, যার জন্মই হলো রাগ থেকে। ' এই ক্রোধাগ্নিকে এখন আমি কোথায় রাখব' ? উত্তরে দেবতারা ঋষিকে বললেন, ' দেখুন ঋষি এই দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি , যেখান থেকে সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে, তারই মাঝখানে অর্থাৎ সমুদ্রের মাঝখানে  আপনি অগ্নিকে স্থাপন করুন'। ঋষি সেই কথা মতো তার ক্রোধাগ্নিকে একত্রিত করে সাগরে রেখে এলেন। সেই আগুন সমুদ্রের বুকে এখনো জ্বলছে আর সেই অগ্নির নাম 'বরডোয়া'।  তাই মানুষের ক্রোধের আগুন এসে বর্ষিত হবে সমুদ্ররূপী সমাজে, এইটাই ভবিতব্য, এটাই কালের ইতিহাস। 

জোৎস্নার   রক্তিম আলিঙ্গন  রাতকে -  

এই তো সেদিন সমগ্র বিশ্ববাসী প্রতাক্ষ করলো একদল শ্রেণীতাড়িত নর-নারী  নিশীথের অভিসারে দীর্ঘদিন ধরে হৃদয়ের একান্তে প্রতিপালিত টুকরো টুকরো আহত সুর-তালগুলি এক জায়গায় এসে মিলেমিশে এলাকার হয়ে এক ঐকতানের সুর হয়ে অনন্তের পানে ধেয়ে গেল।  সেই ঐতিহাসিক মিলনের গভীর আনন্দের যাঁরা সেদিনের ভাগিদার হয়েছিল সশরীরে কিংবা সুক্ষশরীরে, তাঁরা বার বার রাতকে আলিঙ্গন করতে উদ্দত হয়  সেই আস্বাদ গ্রহণ করতে।  আর এই অপার্থিব আনন্দের স্বাদ যাঁরা গ্রহণ করেননি, দূর থেকে  তারা তাল মিলাতে গিয়ে অমিত্রাক্ষর  ছন্দের ধাঁধায় পরে ক্লান্ত হয়ে নিদ্রার ঘোরে দুঃস্বপ্ন দেখেন। এ যেন পরমব্রহ্মের অব্যক্ত থেকে ব্যক্ত হবার প্রারম্ভিক সূচনা, বাদ- বাকির সাথে দেখা হবে আগামীতে।  

ব্লগার -রবীন মজুমদার 

তারিখ -  ২৮/০৯/২৪ 

 https://rabinujaan.blogspot.com ক্লিক করে যে কোন সার্চ ইঞ্জিন থেকে অন্যান্য ব্লগগুলি পড়া যাবে

ujaan

(২৩৯)বহতি হাওয়া

(২৩৯)বহতি হাওয়া   "আধুনিক " এই শব্দটিকে নিয়ে বেশ বাগবিতণ্ডা হয় মাঝে মাঝে, কোন বাক্যের প্রিফিক্স হিসাবে তাকে  বসানো যায়। আধুনিকতাকে...