পোস্টগুলি

ujaan

৩৪৬ হিংসার বিরুদ্ধে মানবতার নান্দনিক যাত্রা

ছবি
  ৩৪৬  হিংসার বিরুদ্ধে  মানবতার নান্দনিক যাত্রা  প্রেমের মগডালে উঠতে গেলে হিংসার কাঁটাগুলিকে মাড়িয়ে যেতে হবে। হিংসাহীন সমাজ যেমন হয়না, তেমনি প্রেমহীন জীবনও হয়না। তবে কি হিংসার গর্ভ থেকে প্রেমের জন্ম হয় ? মূলত এটি দ্বান্দ্বিক প্রশ্ন। মিলনের সাথে যেমন স্বেচ্ছা শব্দটা জুড়ে আছে, তেমনি বিচ্ছেদের সাথেও অনুরূপ। মাঝখানে পরিণতির জন্য যতটা কারণের প্রয়োজন ততটা কারণের ফলে সেই কার্যটির  উপসংহারে  নামরূপের পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, সে তো বলার অপেক্ষা রাখে না।      মানবসভ্যতার ইতিহাসটা একমাত্র প্রকৃতির জগতের দিন-রাত্রির চক্রের রুটিন ছন্দের সাথে তুলনীয়। যেমনটি সভ্যতা এগিয়েছে, ঠিক তেমনি পিছন পিছন রক্তাক্ত হিংসার ইতিহাসটা কিন্তু তার পিছু ছাড়েনি।  কর্মের নামে যুদ্ধের মতো হিংসাকে যেমন সরলীকরণ করা হয়, আবার সেই যুদ্ধ শেষে, সেদিন যাঁরা যুদ্ধের বিরোধিতা না করে চুপ করে যারা  ছিল, তারাই আবার  প্রেম মন্ত্রে যুদ্ধত্তোর পর্বে মানুষকে শান্তির বাণী শোনাচ্ছেন, শুনতে খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তবতা।  আবার অন্য দিকে হিংসার মতো তীব্র আগুনের দহনের সামনে দাঁড়ালে অবশ্য...

৩৪৫ ভক্তি ও প্রেমের মধ্যে সম্পর্ক : ভিন্নধারা না অন্তর্লীন ঐক্য ও রবীন্দ্রনাথ

ছবি
  ৩৪৫  ভক্তি ও প্রেমের মধ্যে সম্পর্ক : ভিন্নধারা না অন্তর্লীন ঐক্য ও রবীন্দ্রনাথ  মানবজীবনে অনুভূতির দুই অনন্ত ধারা। যাঁরা উৎস মুখ থেকেই একে অপরকে আলিঙ্গন করার জন্য ব্যাকুল। ভক্তি ও প্রেম—দুইই বহমান স্রোতের মতো যুগ থেকে যুগান্তর ধরে একইভাবে বয়ে যাচ্ছে। একদিকে ভক্তি আমাদের আত্মাকে ঈশ্বরের প্রতি সমর্পণ করে, যে ঈশ্বর সব প্রাণীর মধ্যেই বিদ্যমান। অন্যদিকে প্রেম সেই আত্মাকে সমগ্র জগৎ ও জীবের সঙ্গে যুক্ত করে।  ভক্তি যেন কেন্দ্রাভিমুখ, প্রেম যেন কেন্দ্রাতিগ, সে যেন মূলের সাথে সম্পর্কের দূরত্ব বজায় রেখে নিজেকে এক অনন্য অস্তিত্ব হিসাবে প্রকাশ করতে চায়। কিন্তু যে কেন্দ্র থেকে ভক্তিরস বর্ষণ হয়, সেই একই কেন্দ্র থেকেই তো  প্রেমের বিচ্ছুরণ ঘটে।  তাহলে, এটাই বলা যেতে পারে- ভক্তি বেঁচে থাকে সমর্পণে আর প্রেম বেঁচে থাকে এই পার্থিব জগতের সাথে  আত্মাকে যুক্ত করে।   ভয়ের সাথে ভক্তির সম্পর্ক   এটাও একটা মায়ার খেলা। আসলে ভয় হচ্ছে এক ধরনের মানসিক অনুভূতি বা  ধারণাও বলা যেতে পারে। যার জন্ম হচ্ছে মানুষের মনে এবং তার কারণ হচ্ছে , মানুষ যখন নিজেকে অপরের থেকে দু...

৩৪৪ একটি ভদ্র নাটক

ছবি
৩৪৪   একটি ভদ্র নাটক  পরিচালনায় - ভদ্রলোক ক্লাব  প্রধান চরিত্রে - প্রভাতবাবু: সভাপতি, মুখে চিরহাসি, ভিতরে আগুন। পরিমলবাবু: সম্পাদক, শান্ত কিন্তু তেলে-বেগুনে  মেজাজ। শশী: তরুণ সদস্য, ভদ্রতার ইন্টার্নশীপ করছেন।  লেখক (বর্ণনাকারী): কৌতূহলী দর্শক ও হাস্যরসাত্মক মন্তব্যকারী। আগুন্তুক : সভ্য সমাজের উদাহরণ।  দৃশ্য ১:  উদ্বোধন (পর্দা উঠতেই দেখা যায়—একটি ছোট ঘর, দেওয়ালে টাঙানো ব্যানার: “ভদ্রলোক সংঘ – আমরা রাগ করি না, শুধু চা খাই।” সবাই গম্ভীর মুখে বসে আছে।) প্রভাতবাবু: (গলা খাঁকারি দিয়ে) বন্ধুগণ! আজ আমাদের সমাজের প্রথম সভা। উদ্দেশ্য— মানবসভ্যতাকে উন্নীত করা। কেউ রাগ করবে না, চিৎকার করবে না, আর অবশ্যই কারো সম্পর্কে খারাপ ভাববে না। সবাই: (একসঙ্গে) জয় সভ্যতা!   সভ্যতার জয় ! পরিমলবাবু: কিন্তু সভাপতিমশাই, যদি কেউ আমার পকেট মেরে নেয়, তখনও কি আমি হাসব? প্রভাতবাবু: (গম্ভীরভাবে) অবশ্যই! হাসিই সভ্যতার অন্যতম প্রকাশ।  শশী: মানে, যদি কেউ আমার গালে চড় মারে,  তখন কি আমি বলব— “ধন্যবাদ”? প্রভাতবাবু: (হেসে) ঠিক তাই, সভ্য মা...

৩৪৩ কেন আজ স্বামীজিকে নিয়ে চর্চা করার প্রয়োজনীয়তা আছে - (৯)

ছবি
    ৩৪৩   কেন আজ স্বামীজিকে নিয়ে  চর্চা করার প্রয়োজনীয়তা আছে - (৯ )                                                             যদি একমত হন, তবে বেশী করে সবার কাছে শেয়ার করু ন   নরেন্দ্রনাথ দত্ত—আমাদের সকলের চেনা নাম স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি কেবল এক জন সন্ন্যাসী ছিলেন না, তাঁর থেকে বেশি বোধহয়। তাঁর ভাবনার আকাশ জুড়ে ছিল অগ্নিগর্ভ বিপ্লব। তাঁর সমগ্র জীবন ছিল যেন এক উত্তাল প্রশ্নমালার তরঙ্গ —যাঁরা এই ভারতবর্ষের মাটিতে মানুষ জন্ম নেয়, তাঁরা কি কেবল চিরাচরিত দেবদেবীর পুজো আর মন্ত্রোচ্চারণের মধ্যেই আবদ্ধ থাকবে? নাকি নিজেকে জাগাবে, জঞ্জালকে জ্বালাবে আর সেই আগুন থেকে শুদ্ধ এবং ধারালো  হয়ে বেরিয়ে  আসবে —নতুন মানুষ, নতুন সমাজ? অতিমানবের শিক্ষা : সমাজকে ফেরত ইতিহাস বলছে, অতিমানবেরা নিজেদের অর্জিত শিক্ষা কেবল ব্যক্তিগত মুক্তির জন্য রাখেননি। গৌতম বুদ্ধ থেকে শুরু করে বিবেকানন্দ পর...

৩৪২ এ যেন দানবের ভাষা -

ছবি
   ৩৪২  এ যেন দানবের ভাষা -  "উঃ কি যন্ত্রনা ! প্রতিটি পাতায় পাতায়। কি নির্মম সেই সব বাণী। সবই শূদ্র আর নারীকে ঘিরে। " - মনুস্মৃতি পড়তে পড়তে দর্শনের ছাত্রী ললিতার মধ্যে কি যেন অদ্ভুত এক যন্ত্রণার রাসায়নিক বিকিরণ শিরদাঁড়া হয়ে সরাসরি মাথার দিকে ধাবিত হলো। কিন্তু তার পড়া থেমে থাকলো না। পুরো বইটা কয়েকবার পরে, সেখান থেকে নোট নিয়ে ও তার ব্যাখ্যাগুলি একের পর এক সাজাতে লাগলো।  গ্রীষ্মের রোদ্দুরে পুড়ছে রতনপুর। গঙ্গার তীরের ধুলোয় ছাই রঙের বাতাস। পঞ্চায়েতের মাঠে আজও লাল রঙের সেই অস্থায়ী মঞ্চ। ললিতা দাঁড়িয়ে আছে সেখানে—শহর থেকে ফিরে আসা কলেজের মেয়ে, চোখে আগুন। চারপাশে গ্রামজোড়া মানুষ: বুড়ো কৃষক, মাছধরা জেলে, মাটির ঘরের মেয়ে, কিশোররা। ললিতা হাতে পুরনো বই— মনুস্মৃতি । পাতাগুলো হলদেটে, কোথাও কোথাও ছোট ছোট পোকারা হয়তো বা ভাষাগুলি তীব্র দহনে, সেই বই থেকে দূরে থেকেছে। তবুও  অক্ষরগুলো যেন সেঁকো বিষের মতো টলমল করছে।  সে গলা উঁচু করে পড়তে শুরু করল— “স্ত্রীলোকের স্বামী ভিন্ন পৃথক যজ্ঞ নেই। স্বামীর অনুমতি ছাড়া কোনো ব্রত বা উপবাস নেই।”  (৫/১৫৫)  মাঠে কানাকানি। কেউ হা...

৩৪১ তৃপ্তি

ছবি
৩৪১    তৃপ্তি  কলকাতার এক পুরনো পাড়ায় সন্ধের বাতাসে আজও মিশে থাকে গলির ভিজে গন্ধ, ধোঁয়া আর সস্তা ধূপের মিষ্টি কটু গন্ধ। সেই গলির মধ্যিখানে ঝাপসা আলোয় ঝুলে থাকা ল্যাম্পোস্টের নিচে দাঁড়িয়ে থাকে এক নারী—তৃপ্তি। বয়স এখন চল্লিশ ছুঁইছুঁই, তবু চোখে টান আছে, ঠোঁটে অনর্গল হাসির ভঙ্গি। সময়ের ধুলোমাখা অলংকার যেন। তৃপ্তির ঘরটিতে রাতের পর রাত খসে পড়ে বহু মানুষের গোপন ক্লান্তি। কখনো সে নিজেকে ‘বেশ্যা’ ভাবে না। ভাবে, এ যেন এক অদৃশ্য দেবালয়—তার শরীর সেই মন্দির। কেউ সেখানে পূজারী, কেউ নিছক অতিথি। কেউ আসে লজ্জা নিয়ে, কেউ কেবল ক্ষুধা নিয়ে। তৃপ্তির কাছে তারা সবাই একই। বিনিময়ে যে টাকা আসে, সে কেবল দেহটাকে টিকিয়ে রাখার দক্ষিণা। আজ রাতটা একটু অন্যরকম। গলির কোণ ঘুরে এসে দাঁড়ালেন অনিমেষ। চল্লিশোর্ধ্ব এই মানুষটির চোখে গাঢ় ক্লান্তি। দেহে অসুখ বাসা বেঁধেছে, স্ত্রী বিমলা বহুদিন ধরে শয্যাশায়ী—দুই শরীরের মধ্যে অনেক দিন ধরেই নীরবতা। “দেহের সুখ” শব্দটা মুখ ফস্কে বেরিয়ে গিয়েছিল একদিন—অনিমেষ পরে ভেবেছেন, সুখ কি কেবল শরীরের? নাকি কোনও অন্তরের আলোকধারা? তবু শরীরের অপূর্ণতাকে মেনে নেওয়া যায় না। তৃপ্তি দরজার আ...

৩৪০ কেন আজ স্বামীজিকে নিয়ে চর্চা করার প্রয়োজনীয়তা আছে - (৮)

ছবি
  ৩৪০   কেন আজ স্বামীজিকে নিয়ে  চর্চা করার প্রয়োজনীয়তা আছে - (৮ )                                                             যদি একমত হন, তবে বেশী করে সবার কাছে শেয়ার করু ন    চৈত্রের শুকনো হাওয়া যেন হঠাৎ ঝাঁপিয়ে এসে ছিন্নভিন্ন করে দিল চারদিক। ধুলো উড়ছে। মাঠের মাটির গায়ে যে ঘুমিয়ে থাকা বীজ, সে কি জানে—ওর বুকের ভেতরেই লুকিয়ে আছে কুঁড়ি ফোটার অদম্য শক্তি? তবু সে নড়ছে না, জেগে উঠছে না। যেন কেবল নির্দেশের অপেক্ষা। এই যে আমাদের মানুষ, আজকের এই সমাজ—ওরা কি ওই বীজ নয়? রীতি-নীতি, সংস্কার, ধর্ম—কথাগুলো বড় চেনা। কিন্তু এদের সঙ্গে কত অদৃশ্য দড়ি জড়িয়ে আছে, তা আমরা দেখি না। পুরনো নিয়ম মানা নাকি ধর্ম, তাই বলে অন্ধের মতো টেনে নিয়ে চলা? গাছের মতো স্থির থেকে যদি ধার্মিক হওয়া যায়, রেলগাড়ির মতো ছক কেটে চলা যদি ভক্তি হয়—তাহলে আমরা মানুষ কেন? পাথর তো কোনো দিন নিয়ম ভাঙে না। গরু কি পাপ করে? যন্ত্রের মধ্...