1. উন্নয়ন কি কেবলমাত্র আপাতদৃশ্যমান ঘটনার উপর নির্ভরশীল।

উন্নয়ন কি কেবলমাত্র আপাতদৃশ্যমান ঘটনার উপর নির্ভরশীল। 

আমরা কেবলই ভেসে চলেছি উন্নয়নের জোয়ারে। সেই জোয়ারের দাবিদার কখন রাষ্ট্র কখন বা রাজ্য। তা সুন্দর ভাবে পরিবেশিত হচ্ছে প্রচার মাধ্যম আর পরিসংখানের সুন্দর সুন্দর মোড়কে।


প্রশ্ন হচ্ছে, সেই উন্নয়নটা  কি গুনগত উন্নয়ন না রূপগত উন্নয়ন।  সমাজের সার্বিক গুনগত উন্নয়ন কতটা হয়েছে সার উত্তর দেবে ভাবিকাল , কিন্তু  রূপগত উন্নয়ন দিয়ে বেশ যত্ন করে গুনগত উন্নয়নকে আড়াল করার কাজটিতে যত্নের কোন অভাব নেই। 


এই তথাকথিত উন্নয়নের পিতৃত্ব নিয়ে কখন দাবি করছেন রাজ্যের আবার কখন কেন্দ্রের রাজনৈতিক দলগুলি।  রূপগত উন্নয়নের আস্বাদ গ্রহণ করতে গিয়ে ,মহা সমস্যায় পরে গেছেন সাধারণ মানুষ।  

রাজনৈতিক দলগুলির বদ্ধ ধারণা, দেশের সাধারণ মানুষের বিচার বিশ্লেষণের ক্ষমতা আর স্মৃতিশক্তি ভীষণ দুর্ব্বল তাই তাদের অনুভূতিকে সহানুভূতিতে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টায় দৃষ্টিনন্দন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত নিরলস প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যা, উন্নয়ন বাবদ খরচের  এক বিশাল অংশ। 


ধুপকাঠির গন্ধে   তার  মাধুর্য্যের প্রকাশ  হয় , তাকে আলাদা করে বলতে হয় কি ? আমার সুগন্ধ আছে। উন্নয়নকে এখানে কর্পোরেট কোম্পানির সেলস প্রমোশন স্ট্রাটেজির মতো  নিছক পণ্য রূপে উপস্থাপনের কি কোন মানে হয়? এটা তো একটা রাষ্ট্রের  দ্বায়বধ্যতা, যার আথির্ক যোগানদার সাধারণ মানুষ এবং এটা তাদের প্রাপ্য, দয়া নয়। 

আমরা কি সত্যই মৌলিক উন্নয়নের স্বাদ অনুভব করেছি ? না, ক্রমবর্ধমান অবক্ষয়ের নাগপাশ আস্টেপিস্টে আমাদের বন্দি করে ফেলেছে, তা সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক যে কোনো অবস্থা হোক না কেন। আমরা যদি আমাদের দৃষ্টিকে একটু প্রশারিত বা একটু বিশ্লেষণ করলেই দেখতে পাই যে, পূর্বে একটি ছাদের তলায় যেখানে একটি রান্নাঘর ছিল, সেখানে ছাদটা একই আছে কিন্তু রান্নাঘরের সংখ্যা বেড়ে গেছে। পরিবারের মধ্যে সামাজিক অনুশাসন মাত্র কতিপয় বাড়িতে অধিষ্ঠান করছে এবং তা দৃষ্টান্তস্বরূপ হয়ে গেছে।  নিত্য দিন ক্রমান্বয়ে আমরা পরিচিত হচ্ছি নারকীয় ঘটনার সাথে, অত্যাচারিত হচ্ছে পুরুষশাসিত সমাজের দ্বারা নারীর অধিকার, প্রকাশিত হচ্ছে তাদের অসহায়তার নগ্ন রূপ , শিশুরা ও এখানে নিরাপদ নয়।  সন্তান সুযোগ নিচ্ছে পিতামাতার অসহায়তার, শক্তিমান দুর্ব্বলের উপর কায়েম করছে তাদের অহংকারকে, যা আদিম যুগ থেকে শুরু করে সভ্যতার পাদদেশে এসে একই ধারায় বিদ্যমান। 

অসম আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোয় নির্ধনের সামাজিক প্রতিষ্ঠা আজ ও পূর্বের ন্যায় অস্বীকৃত ধনী প্রভাবিত সমাজে।  সংবিধানের মৌলিক অধিকার, আইনের চক্ষে সবার সমান অধিকার - এসব আছে কিন্তু তা কাগজে, তা অবশ্যিই সাধারণ মানুষের জন্য নয়।  অতীতের মূল্যবোধগুলি হয়ত আর কিছুদিন পরে  কোন এক সংরক্ষণশালার একটি উপাদান হিসাবে পরিগণিত হবে , পরবর্তী সময়ে কোন ঐতিহাসিকের গবেষণার রেফারেন্স হিসাবে ব্যবহৃত হবে । 

এটাই আমাদের ভাবনার  উপযুক্ত সময়, যে কোন বার্তা আমরা আমাদের আগামী প্রজন্মকে দিয়ে যাব? উত্তরিধারসূত্রে পাওয়া কিছু আমানত আর মাথাগোঁজার আচ্ছাদন না আরো কিছু যা এসবের থেকে আরো বেশি মূল্যবান যাকে তারা আদর্শ মনে করে জীবনের বিচিত্র পথে আলোকবর্তিকার মত অন্ধকার থেকে আলোতে  পৌঁছানোর দিশা দেখাবে।  তাই আমাদের রূপগত উন্নয়নটা ও চাই এবং তার সাথে আরো বেশি চাই রূপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা গুমরে থাকা কান্নার সমাধান। এই সুস্থ পরিবেশের দায়িত্ব শুধু মাত্র রাষ্ট্র যন্ত্রের নয় ;তার সাথে আছে আমাদের পরিবেশ গঠনের আন্তরিকতা। 


ক্রমশ:







মন্তব্যসমূহ

My new blog বলেছেন…
তারপর..... তার আর পর নেই ,নেই কোনো ঠিকানা.......

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়