4. ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই এই সুন্দর ভুবনে
ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই এই সুন্দর ভুবনে
( মশাদের সাংবাদিক সম্মেলন )
সাংবাদিক : বহুবার আপনাদের কাছে সাক্ষাৎকারের সময় চেয়ে পাইনি।
প্রথম মশা : আমরা শীতকাল ছাড়া অন্য্ সময়ে ভীষণ ব্যস্ত থাকি। শীতকালে যদিও কিছু কাজ থেকে যায়।
সাংবাদিক : আজকাল আমাদের সমাজে আপনাদের নুতন একটা বিশেষনে সম্বোধন করা হয়, সেটা কি আপনারা জানেন ?
দ্বিতীয় মশা : একটু খুলে বলবেন।
সাংবাদিক :"মৃত্যুদূত" কখন বা "যমরাজ"
প্রথম মশা : (একটু হেসে,) তা আপনারা বলতে পারেন। বিশেষ আপত্তি নেই তাতে।
সাংবাদিক : আপনারা আমাদের শ্রেণীচরিত্র, বর্ণ বিভাজন সম্পর্কে কিছুই জানেন না দেখছি।
তৃতীয় মশা : (খানিকটা হতচকিত ভাবে) শ্রেণীচরিত্র, বর্ণ বিভাজন! সেটা আবার কি ? মানুষ তো মানুষ-ই তার আবার বিভাজন কি। সবই প্রকৃতির সৃষ্টি, যেমন, আমরা মশা আপনার মানুষ।
সাংবাদিক : আমাদের সমাজে এটা কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চালু আছে। কিছুই খবর রাখেন না, এতআমাদের পাশে ঘুরঘুর করেন।
প্রথম মশা : এই প্রসঙ্গটা এখানে প্রাসঙ্গিক হলো কি করে ? তার পরে এ গুলি সম্পর্কে জানবো ,ভেরি ইন্টারেষ্টিং।
সাংবাদিক : আমাদের দেশ তথা সারা বিশ্বের মানুষেরা দীর্ঘদিন ধরে লক্ষ্য করছে যে, আপনারা আমাদের উপর বিষ বিসর্জনের ক্ষেত্রে কোন সামাজিক ও রাজনৈতিক, ভৌগলিক বিধি নিষেধ মানছেন না।
দ্বিতীয় মশা : এটা মূলতঃ দৃষ্টিভঙ্গির তফাৎ। প্রথমতঃ সৃষ্টির শুরু থেকে যে সংস্কৃতি আমাদের সমাজে প্রচলিত ছিল সেই ধারাবাহিকতাকে এখনো আমরা বহন করে চলছি। দ্বিতীয়তঃ আমাদের সমাজে নারী-পুরুষ,ধনী-নির্ধন , সুন্দর-কুৎসিত, শিশু-বৃদ্ধ , শাসক-শাসিত প্রভৃতির মধ্যে কোন প্রভেদ নেই, তাই আমরা সাম্যবাদী চিন্তাধারায় বিশ্বাসী। আপনারা আমাদের কাজে তারই প্রতিফলন দেখে ঘাবড়ে গেছেন । এটা আপনাদের ভুল বিশ্বাসের কারনের জন্য এমনটাই মনে হয়েছে।
সাংবাদিক : আরেকটা জিনিস লক্ষণনীয় যে, আপনাদের সন্তান যারা এই দেশে জন্মগ্রহণ করেছেন তাদের আধার কার্ড করা বাধ্যতামূলক বর্তমানে, এটা আপনারা করাচ্ছেন না।
প্রথম মশা : এইটা আমরা এই প্রথম শুনলাম।
সাংবাদিক : শুধুমাত্র মানুষের রক্ত খাওয়ার কথা চিন্তা করে ঘুরে বেড়ালে চলবে ? দেওয়ালে , নিউজ পেপারে, টিভিতে বিজ্ঞাপনের দিকে তাকাতে হবেতো। সরকার যদি এরপরে কোন আদেশ দেয় যে, আধার কার্ড ছাড়া রক্ত নেওয়া যাবেনা, তখন কি করবেন ?
তৃতীয় মশা : এই ব্যাপারটা অবশ্যিই আমরা ভেবে দেখব এবং আমাদের হাই কম্যান্ডএ আলোচনা করবো।
সাংবাদিক : আপনাদের এই বিষ বিসর্জনের আতঙ্কটা আমাদের সমাজের গভীরে ঢুকে গেছে যে, আমাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে। অতীতে অনেক আতঙ্ক সম্পর্কে আমরা দেখেছি বা শুনেছি কিন্তু বর্তমানে যে আতঙ্ক আপনারা ছড়াচ্ছেন , সে ক্ষেত্রে আপনাদের আতঙ্কটাকে কি রেট দেবেন ?
প্রথম মশা : অবশ্যিই এক নম্বর দেব। কেননা বার বার আমরা আমাদের চরিত্র বদলাচ্ছি , যেটা আপনারা বুঝতে পারছেন কিন্তু ধরতে পারছেন না। সুতরাং বৈচিত্রের বিচারে আমাদেরটা সেরা।
সাংবাদিক : আপনারা কি জানেন যে আপনাদের এই ক্রেডিটটা কম করে দেখানোর জন্য আমাদের হাসপাতালের ডক্টরদের আমরা মৃত্যুর কারনটা অন্যভাবে দেখাতে বাধ্য করেছি ।
প্রথম মশা : এটা আমাদের উপর আপনাদের এক ধরনের বঞ্চনা। কেন এটা করছেন ?
সাংবাদিক : এখানে একদল বাজনীতিবিদরা আছে যারা কেবল শাসক দলের দোষ খুঁজে বেড়ায়। তারা মনে করে শাসকদলের সাথে হাত মিলিয়ে আপনারা এই বৈজ্ঞানিক বিষ বিসর্জনের আতঙ্কটা ছড়াচ্ছেন। তাই আমাদের বোকা জনসাধারণকে একটু ইয়ে করে প্রচার করছেন। আপনাদের এই বহুমুখী প্রতিভার উৎস কি এবং আমাদের উপর আপনাদের ক্রমান্বয়ে আঘাত হানার কারনটা কি জানতে পারি ?
দ্বিতীয় মশা :প্রথমতঃ আমাদের নবীন প্রজন্ম রিসার্চ এবং ডেভেলপমেন্টে বিশ্বাসী, এ প্রসঙ্গে বলতে গেলে আপনার সীমিত সময়ের সাংবাদিক সম্মেলনে হবেনা , সেটা নয় পরে কোন দিন বলা যাবে। দ্বিতীয়তঃ আপনারা উন্নয়নের নামে জঙ্গল কেটে আমাদের উদ্বাস্তু করে দিয়েছেন , তাই আমরা আজ জঙ্গলের পাশে গ্রামে গিয়ে আমাদের নুতন বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছি। তৃতীয়ত শহর অঞ্চলে যে সমস্ত জলা জায়গায় আমরা থাকতাম সেখানে প্রোমোটার নামে কিছু মানুষ সেগুলি বুজিয়ে ফ্লাট বানিয়ে আমাদের উৎখাত করেছে , এবার বলুন আমরা কোথায় যাব ? আমাদের জন্য আপনাদের সরকার কোন পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন না। কেননা আমরা কনজিউমার নই , আমাদের ভোট ও নেই।
এই প্রসঙ্গে বলি, আপনারা এবং আপনাদের শাসক ও বিরোধীদলের লোকেরা আমাদের বিরুদ্ধে যা প্রচার করছেন তার এক ভাগও সাধারণ মানুষের সচেতনতার জন্য প্রচারে ব্যয় করেন না। জানেন কি প্রায় ২.৫ লক্ষ মানুষ বছরে শুধুমাত্র আপনাদের এগ্রিকালচারে কীটনাশক ব্যবহার করার জন্য মারা যায়, ইর্রেশনাল কম্বিনেশনের ঔষধ ব্যৱহাৰ করে কত মানুষের শরীর সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে রোগের নুতন নুতন উপসর্গ ডেকে আনে ইত্যাদি ইত্যাদি। খালি খালি শহরে বসে আপনারা প্রচার করেন আর এই সব নিয়ে আপনাদের ধারাবাহিক কোন পদক্ষেপ নেই যতটা না আমাদের নিয়ে করেন। আপনারা তো খবর পরিবেশন করে যা উপার্জন করেন তার থেকে খবর গোপন করে বেশি উপার্জন করেন।
পরিশেষে, এই কথাটি মনে রাখবেন যে, আমরা এই প্রকৃতির সৃষ্টি, আপনারা সভ্যতার নামে যত বেশি প্রকৃতির উপর অত্যাচার করবেন তত প্রকৃতি বহুভাবে আপনাদের তার প্রত্যাতুর দেবে। এটা তার নমুনা মাত্র।
সাংবাদিক : আপনারা কি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন ?
প্রথম মশা : হ্যাঁ ! তবে আপনাদের থেকে আরও উন্নতধরনের কমিউনিকেশন সিস্টেম, আমাদের প্রাইমারি ডাটা ট্রান্সফার মিডিয়া হচ্ছে সূর্যের আলো আর বাষ্প, উভয়েই আমাদের ইনপুট -আউটপুট মিডিয়া, যেমন , আমরা ডাটা এখান থেকে বাষ্পের মাধ্যমে পাঠাই , আবার যেখানে পাঠাই, সেখানে ডাটা ডাউন লোড হয় আলোর মাধ্যমে , ভিস আ ভিস। মেঘ হলে একটু অসুবিধা হয়, তবে এই নিয়ে গবেষণা চলছে। রাতের বেলা সূর্য্যের ধার করা আলোর মাধ্যমে এই ডাটা পাঠানোর কাজ চলে।
সাংবাদিক : আমাদের জন্য আপনারা কি কোন ম্যাসেজ দেবেন ?
প্রথম মশা : আত্ম গর্বে গর্বিত মানব জাতি কতখানি অসহায় তা পদে পদে প্রমাণিত করেছি আমরা। তাই আপনাদের অহংকার বিসর্জনের আর প্রকৃতি-বান্ধব হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি।
ব্লগার- রবীন মমজুমদার।
মন্তব্যসমূহ