5. মনীষীরা কি আজকে রাজনীতির ...... ?

মনীষীরা কি আজকে রাজনীতির কাঁচামাল ?

ভোম্বলদা, এই অঞ্চলের সিন্ডিকেটের একমাত্র লীডার।  পাড়ার মা-বোনদের ডেলিভারি থেকে শুরু করে শ্রাদ্ধ-শান্তি  আর ভোটের ক্যাম্পেইন থেকে শুরু করে ভোট শেষ না হওয়া পর্য্যন্ত ভোম্বলদার ছুটি নেই। এ হেন নেতারা, বছরের শুরুতে নিউ ইয়ার্সের সেলিব্রেশন থেকে বছরের শেষ দিনের মধ্যে যত মহাপুরুষের আবির্ভাব থেকে তিরোধান আর সরস্বতী পূজা থেকে শুরু করে কালীপূজা এবং সমস্ত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের যাবতীয় দায়িত্ব ভোম্বলদার উপরই  দিয়েই  থাকে। 

মাত্র সাড়ে চার  বছরে বাবা হারানো আট জনের সংসারে সে-ই একমাত্র ছোট।  সাত  বছর বয়স থেকে পাড়ার পাঁচুদার চায়ের দোকানে , চায়ের বাসন মাজা  আর খদ্দেরদের চা দেওয়া ছিল তার কাজ।  মাসের শেষে  যা পেত তাই-ই মায়ের হাতে তুলে দিত।  স্কুলে যাওয়া তার আর হয়ে উঠেনি।  সেই জায়গা থেকে আজ একাধিক গাড়ি-বাড়ি আর বহু ছেলের সংসার চালানোর দায়িত্ব কবে যে সে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে, সেটা মনে করতে পারেনা। এলাকার প্রায় কয়েকশ  ছেলে আর সাধারণ মানুষের কাছে ভোম্বলদাই  আইকন। 

এই তো সেদিন, ১২ই জানুয়ারী , ভোম্বলদার সেই বক্তিতা, "ভাই ও বোনেরা , বয়স্ক মানুষেরা বলে শুরু করে  ......  স্বামী বিবেকানন্দ আমেরিকায় যে ধৰ্ম সম্মেলনে দেশপ্রেম, হিন্দুধর্ম আর মানবিকতার যে ককটেল সাহেবদের খাইয়েছিলেন তার থেকে সারা পৃথিবী নেশাগ্রস্ত হয়ে গিয়েছিল। " এখনো সেই বক্তিতা পলটুদের   কানে বাজে।  

সেদিন, রাতের পার্টিটা ও বেশ জমেছিল।  একটু হয়ত সুর কেটেছিল যদিনা, গুপী পাশের বাড়ির শিবানীদের বাড়িতে ঢুকে না পড়ত। যাই হোক, ভোম্বলদা সেটাকে ম্যানেজ করেছে।  

সরস্বতী পূজার দিন হন্তদন্ত হয়ে ভোম্বলদা পূজা প্যান্ডেলে এসে বললো, কালকে সকাল থেকে মাইকে রবীন্দ্র গান চালাবি কিন্তু, কোন চটুল গান চলবে না, কালকে কিন্তু নেতাজির জন্মদিন।  মদন হঠাৎ বলে উঠলো, দাদা, এখানেও রবীন্দ্রসঙ্গীত ? দেশাত্ববোধক গান চালালে হয়না  ? ভোম্বলদা যুক্তি দেখালো, রবীন্দ্র সঙ্গীত হচ্ছে রান্নার লবনের মতো, সব কিছুতেই  লাগে, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্য্যন্ত।  দাদারা  তো তাই-ই বলেন। 

২৩শে জানুয়ারী , সকাল  বেলা পাচুদার চায়ের দোকানে পলটু ,গজা ও অন্যান্য ২৪-২৫ জন ছেলে একসাথে চা খাচ্ছিল ,হঠাৎ মাইকে ভোম্বলদার গলার আওয়াজ পেয়ে তাড়াতাড়ি ডায়াসের সামনে এসে সবাই হাজির হলো। 

এই তো সেদিন, বছরের সবে শুরু, ভোম্বলদা হঠাৎ একদিন পলটুকে ডেকে বললো, সবাইকে রাতের বেলা সিন্ডিকেটের অফিসে আসতে। সেইদিন রাতের বেলা ভোম্বলদা থমথমে মুখে যা বললো, তার মানে হচ্ছে, এতদিন একমাত্র আমরাই অনুষ্ঠানগুলি চালাচ্ছিলাম, এখন থেকে আমাদের মনীষীদের  ছবি নিয়ে অন্য দলের  লোকেরা  গলায় মালা লাগবে আর পাড়ায় হৈ হৈ  করে ঘুরে বেড়াবে এটা করতে দেওয়া  যাবেনা, নিৰ্দেশ আছে।  এছাড়া, আমরা বছরভর কত পয়সাকড়ি খরচ করে মানুষের পাশে থেকে কত অনুষ্ঠান করে মানুষের মনে কত আনন্দ দিই, এটা আজপর্যন্ত কেউ এভাবে করেছে? সাধারণ মানুষ মনীষীদের কত চিনত তা জানা আছে। আমাদের নেতারা তাদের পাশে মনীষীদের ছবি লাগিয়ে চোখে আঙ্গুল দিয়ে তাদের চিনিয়ে দিয়েছেন। ওরাতো আমাদের কাছ থেকে মনীষীদের হাইজ্যাক করতে চাইছে।  পলটুদের গ্রূপে সন্দীপদা বেশ পড়াশুনা করা লোক , সে বললো, ভোম্বল তুই এ কি বলছিস, মনীষীদের সাধারণ মানুষ চিনত না ? 

এখন ও ভোম্বলের  মনে আছে, ছোট বেলায় একদিন পাড়ার বিজন মাস্টার ডেকে  বলেছিল, যদি কোন মনীষীকে স্মরণ করতে হয়, বা তাকে সন্মান জানাতে হয় তবে বাবা, সব থেকে প্রধান কাজ হল তাদের আদর্শকে জীবনের চলার পথে পাথেয় করে তুলতে হবে, তবেই তাকে যথার্থ স্মরণ করা হবে। তাছাড়া, বাকি সবটাই  হবে লোকদেখানো। ভোম্বলদা সহজ সরল লোক, আশপাশের লোকজনকে দেখতে দেখতে বুঝে গেছে, কেউ  মনীষীদের  ফলো করে না, তার মানে চেনেও না, জানেও না।  তবুও আমাদের নেতারা  যে ভাবেই হোক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যাতে সবাই মনীষীদের  চিনতে পারে। তাই, আমাদের ভাবের ঘর থেকে, মনীষীদের  জোর করে কাড়তে কাউকে  দেবনা। 



রবীন মজুমদার 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়