9. Che Guevara- the revolutionary Icon all the time (part II)






চে গুয়েভারা  দা রেভলিউশনারী আইকন অল  দ্যা  টাইম ।। 


বিজয়ের পরে চে গুয়েভারা এবং ফিদেল কাস্ত্রো 

দ্বিতীয় পর্ব 


[পূর্বানুবৃত্তি : মেক্সিকোতে চে গুয়েভারার সাথে পরিচয় ফিদেল কাস্ত্রোর।  পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা , কর্নেল এয়ালবার্টো বেয়োর  কাছে গেরিলা যুদ্ধের পাঠ অবশেষে ৮১ জন বিপলবীকে সঙ্গে নিয়ে গ্রানমা নামে এক রণতরীতে করে কিউবার উপকূলে অবতরণ করেন। তারপর দীর্ঘ সংগ্রাম বাতিস্তার বাহিনীর সাথে এবং অবশেষে বাতিস্তার দেশত্যাগ। ]

"আমি  গোপনে গোপনে অত্যাচারীর পতাকা বই"  -ফুলজেন্সিও বাতিস্তা, একনায়ক , কিউবা 

১৯৫২ সালে এক মিলিটারি অভ্যুথানের মাধ্যমে, মার্কিনিদের সহায়তায় , কিউবার শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন ফুলজেন্সিও বাতিস্তা, জনসাধারণের খুব বেশি  চাহিদা ছিলনা এই সরকারের প্রতি কিন্তু তার শাসনকালে কৃষক, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের দুর্দশা উত্তরাত্তর বৃদ্ধি পায় যা পরবর্তী সময়ে ফিদেলের  ২৬শে জুলাই বিপ্লবী সংগঠনকে একনায়কতন্ত্রের  অন্তিম ঘন্টা বাজিয়ে  দিতে সাহায্য করে।  



সাংবাদিক সার্জ রাফয়ে, তিনি তার কর্ম জীবনে পৃথিবীর দশজন যশস্বী ব্যক্তিদের উপর সার্ভে করেছিলেন , তার মধ্যে অন্যতম ফিদেল কাস্ত্রোর জীবনালেখ্য।  এই প্রসঙ্গে তিনি চে গুয়েভারার সাথে ফিদেল কাস্ত্রোর পারস্পরিক সম্পর্কের প্রসঙ্গে এক জায়গায় বলেন, ১৯৫৬ সালে ফিদেলের সাথে চে গুয়েভারার পরিচয় হয় মেক্সিকোতে। আদর্শগত মিল থাকার  কারনে , খুব অল্প সময়ের মধ্যে একে অন্যের কাছে চলে আসেন,  ১০ ঘন্টা এক নাগাড়ে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা হয়।  চে'র অসাধারণ বুদ্ধিমত্তায় ও আদর্শের প্রতি অবিচলতায় ফিদেলের বধ্যমূল ধারণা জন্মায়  যে, চে গুয়েভারা ব্যাতিরেকে কিউবার বিপ্লব অসম্ভব এবং তাকে অবশ্যই এই অভিযানের সঙ্গী করতে হবে ।  তার পর তাদের মেক্সিকোতে গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ এবংপরবর্তী সময়ে  মেক্সিকোর সুরক্ষা বাহিনীর হাতে গোটা বিপ্লবী দলটা  বন্দি হন।   মেক্সিকোর কারাগার  থেকে  ফিদেল প্রথমে মুক্তি পান, চে গুয়েভারা তখন মুক্তি পাননি, তিনি ফিদেলকে  অনুরোধ করেন যে তারা যেন পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী কিউবার  অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন। ফিদেল বিন্দু মাত্র চিন্তা না করে চে'র এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন এবং সাথে সাথে তিনি জানিয়ে দেন যে, যতক্ষন চে গুয়েভারা মুক্তি না পান ততক্ষন ফিদেল তাদের যাত্রা শুরু করবেন না। এই ঘটনায় চে গুয়েভারা  ফিদেল কাস্ত্রোর ভ্রাতৃসুলভ আচরণে তার প্রতি বিশেষ অনুরক্ত  হয়ে পড়েন। 

             "বাঁধলে  তোমায় কৃপণ আলোর অন্তঃপুরে " ...... সিয়েরা মেস্ত্রোর জঙ্গল।


৯৫৬ সালের ডিসেম্বর মাসে বিপ্লবীরা কিউবার উপকূলে পৌঁছিবার সাথে সাথে বাতিস্তা বাহিনীর সাথে ফিদেলের ২৬শে  জুলাই  বাহিনীর সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়। ( প্রথম পর্বে আলোচনা করা হয়েছে) ইতিমধ্যে এই আন্দোলনের খবর সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। ১৯৫৭ সাল , সিয়েরা মেস্ত্রোর জঙ্গলে কিউবার সশশ্র  আন্দোলনের নেতা ফিদেলের কাস্ত্রোর সাথে  দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিক হার্বার্ট মাথেউসের সাক্ষাৎকার হয় , পরবর্তী সময়ে এই সাক্ষৎকার আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এই আন্দোলনকে নতুন মাত্রা দেয়। ১৯৫৭ সালের ১৬ ফেব্রূয়ারি, দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস এ প্রকাশিত হাবার্টের প্রতিবেদনটিতে গেরিলা যুদ্ধের বিবরণটি কোন এক পৌরাণিক যুগের রোমহর্ষক কাহিনীর থেকে কোন অংশে কম ছিলনা। পাশাপাশি, বাতিস্তার  অত্যাচারের  অমানবিক রূপটি সারা বিশ্বের কাছে তিনি তুলে ধরেন। এই রচনাটিতে এক ব্যাপক জনমত তৈরি হয় তার বিশাল রেশ গিয়ে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে।   আগামী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে পেন্টাগন তার পররাষ্ট্রনীতিতে বেশ কিছু অদলবদল করে, তার প্রতিক্রিয়া হিসাবে কিউবার বাতিস্তা সরকারকে অস্ত্র ভর্তি জাহাজ পাঠানো বন্ধ করে দেয়। 


"Equally mindful in heaven and earth"  

চে গুয়েভারা কখন অস্ত্র হাতে শত্রূর শরীরকে ছিন্ন ভিন্ন করছেন আবার সেই শত্রূ  যখন আহত হয়ে যন্ত্রনায় আর্তনাদ করছে, তখন তাকে ডাক্তার হিসেবে ভীষণ যত্ন করে তার সেবা করছেন। তার চরিত্রে একাধারে ধংসের প্রতিভূ আবার সৃষ্টির পূজারী , এই দ্বৈত ভাবের আশ্চর্য্য সংমিশ্রণ ছিল। যেইখানে ধংসের প্রয়োজন সেখানে তিনি তাই-ই করেছেন , আবার সেই সঙ্গে গড়ার কাজে কোন ফাঁকি রাখেন নি।
চে গুয়েভারা একাধারে সৈনিক, বিপ্লবী সেনাবাহিনীর অন্যতম পরিচালক, জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে শত্রূর গতিবিধি নিরন্তর লক্ষ্য করার পাশাপাশি তিনি গেরিলা যুদ্ধের উদ্দেশ্য থেকে কখনই নিজেঁকে আড়াল করেন নি। যেখানে সাধারণ মানুষের নূন্যতম যা প্রয়োজন তা তিনি করতে চেষ্টা করেছেন। সিয়েরার জঙ্গলে থাকাকালীন চে'র নজর এড়ায়নি স্থানীয় জনসাধারণ  এবং কৃষকদের দৈন্যতার  চেহারাটা। সেখানে না আছে বিদ্যুৎ, নেই কোন চিকিৎসার ব্যবস্থা, ৪০ শতাংশ মানুষের কাছে অক্ষর জ্ঞানই নেই। শুরু হল গঠন মূলক কাজ , একে একে তৈরি হল পাঠশালা, রুটি তৈরির কারখানা, স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্র, সামরিক শিক্ষাদান কেন্দ্র, গ্রেনেড তৈরির কারখানা ইত্যাদি। পরিবর্তনের অন্যতম মূল ধারা হল জন সংযোগের মাধ্যমে জনমত গঠন, তাই চে গুয়েভারা একটি পত্রিকাও  প্রকাশ করলেন। 

"মম  এক হাতে বাঁকা বাঁশের বাঁশরী আর হাতে রণ -তূর্য্য "

সামরিক শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের প্রতি , গুপ্তচরদের কাছে চে গুয়েভারা ছিলেন সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত। একদিকে সামরিক আইনের রক্ষক, অসমসাহসী যোদ্ধা , টিমের ডাক্তার আবার যুদ্ধের অবসরে সেনা বাহিনীর শিক্ষক আবার তিনি সেনাদের বিনোদনের কেন্দ্র বিন্দু। চে'র কাছে অজ্ঞতা মানব জীবনের অন্যতম শত্রূ। তাই জ্ঞান অর্জনকে বিশেষ ভাবে প্রাধান্য দিতেন এবং তিনি বলতেন যে তার কাজই হচ্ছে "অজ্ঞতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম" । তার সামরিক অনুশাসনের অসম্ভব কঠোরতা থাকা সত্ত্বেও সামরিক বাহিনীতে তিনি ভীষণ জনপ্রিয় ছিলেন। টাইমস ম্যাগাজিন চে গুয়েভারাকে ফিদেল কাস্ত্রোর মস্তিস্ক বলে প্রচার করেন। যুদ্ধক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ গুলি তিনি অবলীলায় সম্পন্ন করতেন। একদিকে শত্রূকে নির্মম ভাবে হত্যা করতে কুন্ঠিত হতেন না আবার পাশা পাশি আহত বন্দীদের গভীর যত্ন সহকারে পরিচর্য্যা করতেন। বন্দিত্ব অবস্থা থেকে বাতিস্তার সৈনিকরা যখন মুক্তি পেত তখন তাদের বিপ্লবী সেনাদের সাথে  যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে মানসিক প্রস্তুতি হারিয়ে ফেলতো।

আপামর জনসাধারণের মুক্তি যুদ্ধের সংগ্রামের প্রাত্যহিক সংবাদকে  আন্তর্জাতিক পরিসরে জায়গা করে দেবার  জন্য, ১৯৫৮ সালের ফেব্রূয়ারি মাসে চে গুয়েভারা বিপ্লবীদের বেতার কেন্দ্র স্থাপন করে। এই প্রচারের মাধ্যমে সারা বিশ্ব জানতে পারে বাতিস্তা সরকার বন্দী সৈনিকদের উপরে কি ধরনের বীভৎস অত্যাচার চালায়। ১৯৫৮ সালের জুলাই মাসে লাস মেরকালেসের যুদ্ধে কাস্ত্রোর প্রায় ১৫০০ সৈন্যদের হত্যা করে।
জনগণই ক্ষমতার উৎস 

মানবতাকে  শৃঙ্খল থেকে মুক্তির জন্যই  আত্ম বলিদান। এত সৈনিকদের হত্যা বিপ্লবীদের কখনই হতোদ্দম করতে পারেনি , চে গুয়েভারার  নেতৃত্বে শুরু হয় পাল্টা আক্রমন।  কোথাও 'হিট এন্ড রান ' পদ্ধতিতে আক্রমন আবার কোথাও আক্রমন আর প্রতি আক্রমনে  ব্যাতিব্যাস্ত করে তুলেন বাতিস্তা সরকারকে। দীর্ঘায়িত হয় যুদ্ধ।

হাভানা থেকে প্রায় ২৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সান্তাক্লারা শহর দখল করতে  ফিদেল তার বিশ্বস্ত অনুচর চে গুয়েভারাকে পাঠান। দীর্ঘ ৭ সপ্তাহ পায়ে হেটে, অনাহারে থেকেও চে'র বাহিনী লক্ষ্যের কাছে এসে পৌঁছায়।

 'Hurban' Armoured train


১৯৫৮ সালের ডিসেম্বরের শেষাশেষি চে গুয়েভারা তার আত্মঘাতী দল নিয়ে সান্তাক্লারায় এসে পৌঁছান। বাতিস্তা সরকার এই প্রদেশটিকে শাক্তিশালী করার জন্য তার অনুগত ২৫০০ সৈন্য, ১০টি ট্যাংক, সাঁজোয়া ট্রেনের মাধ্যমে পাঠান।

সাঁজোয়া ট্রেন -বর্তমানে মিউজিয়ামে 

একদিকে ক্রমবর্ধমান বিপ্লবীদের প্রতি সাধারণ মানুষের সমর্থন বাড়তে থাকে।  বিপ্লবীদের কাছে সামগ্রিক পরিবেশটা  অনুকল থাকাতে  নতুন নতুন  পরিকল্পনা করে কাজ করতে তারা শুরু করে।  প্রথমেই বিপ্লবীরা সান্তাক্লারার সাথে কিউবার অন্যান্য স্থানের অস্ত্র সরবরাহের লাইনটা কেটে দেওয়ার জন্য সাঁজোয়া ট্রেনের উপর মলোটভ ককটেল দিয়ে আক্রমন শানায় এবং নিষ্ক্রিয় করে দেয় এবং বহু অস্ত্র তারা নিজেদের আয়ত্বে নিয়ে আস্তে সক্ষম হয়।  


১লা জানুয়ারী, ১৯৫৯ সান্তাক্লারা বিজয়ের পরে চে গুয়েভারা 

চে গুয়েভারার নেতৃত্বে এগ্রোনোমি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাক্টরগুলিকে যথাযথ ভাবে লাইনের উপর সাজিয়ে দেন এবং তাতে আরমুরিয়েড ট্রেনটি আটকে পরে।  ট্রেনের ভিতরে থাকা সাধারণ সৈনিক ও সামরিক অফিসাররা বিপ্লবী বাহিনীর  হাতে বন্দী হয়। সরকারি ও বিপ্লবীদের রেডিওতে পরষ্পর বিরোধী প্রচার চলে।

প্রত্যক্ষদর্শীর মতে যুদ্ধ চলা কালীন চে'র মেশিনগানটি হঠাৎ অকোজো হয়ে যায় তখন তিনি স্থানীয় মেকানিকের সহায়তায় আবার ঠিক করেন।  স্থানীয় জনসাধারণের সক্রিয় সহযোগিতায় মাত্র ১২ ঘন্টার অবরোধের  পর সান্তাক্লারা মুক্ত হয়ে যায়। বাতিস্তার  শেষ সৈন্যের আত্মসমর্পনের সাথে সাথে এই যুদ্ধের বিজয় ঘোষিত হয়।

 ২রা জানুয়ারি , ১৯৫৯ সালে বিনা যুদ্ধে সান্তিয়াগো দি কিউবা কাস্ত্রোর বাহিনীর হাতে এসে যায়। চে গুয়েভারার আর সিএনফুয়েগোসের বাহিনী প্রায় একই সময়ে হাভানায় পৌঁছে যায়। দীর্ঘ বিজয় মিছিল নিয়ে ৮ই জানুয়ারী , ১৯৫৯ সালে কাস্ত্রো হাভানায় পৌঁছায়।  ম্যানুয়েল উরুটিয়া ল্লেও ৩রা জানুয়ারী,১৯৫৯ কিউবার নতুন রাষ্ট্রপতি  হিসাবে কার্য্যভার গ্রহণ করেন।


ক্রমশঃ ..................................................................................................................................................


এর পর  ... কিউবার পুনর্গঠন ---- অর্থনীতি ---- জাতীয়করণ ----আন্তর্জাতিক সম্পর্ক - মিসাইল সংকট -কোল্ড ওয়ার -- চে'র গেরিলা যুদ্ধ ---কঙ্গোর অসমাপ্ত আন্দোলন ----- বলিভিয়া-- চে গুয়েভারার মৃত্যু ---- সি আই এর  রিপোর্ট ---- চে'র পরবর্তী পৃথিবীর মুক্তি আন্দোলন --- মূল্যায়ন।















মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়