10. Che Guevara- the revolutionary Icon all the time (part III) চে গুয়েভারা - সর্বকালের বিপ্লবী আইকন (তৃতীয় অংশ)
চে গুয়েভারা - সর্বকালের বিপ্লবী আইকন (তৃতীয় অংশ)
তৃতীয় পর্ব
[ পূর্বানুবৃত্তি : বাতিস্তার কিউবা ত্যাগ রাষ্ট্রপতি হিসাবে ম্যানুয়েল উড়ুটিয়া ল্লেও র অভিষেক । ]
ইতিহাস যতদিন থাকবে আর পৃথিবীর বুকে মানবতার ধর্ষণ চলবে ততদিন এই চে গুয়েভারারা নতুন বাড়ির সন্ধান চালিয়ে যাবেন, সেই রাস্তা সবসময়ে সঠিক হবে তার কোন মানে নেই। অতীততে তারা এটাই করেছে , বর্তমানে করছে বা আগামী দিনে পাহাড়ে, জঙ্গলে তারা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে তাদের এই পচা গলা সমাজের উপর নতুন বাড়ি করার প্রচেষ্টা চালাবে। চে গুয়েভারারা কোন একক ব্যক্তি নয় , তারা প্রতিবাদী একটা প্রতিষ্ঠান। এই বিষয়টি ফিজিক্স ,কেমেস্ট্রি বা ম্যাথেমেটিক্স-এর মতো আচ্ছাদনে ঢাকা ঘরের মধ্যে ফর্মুলা সমহারে উপাদান মিলিয়ে ঈপ্সিত উত্তরের সঠিক ঠিকানা দেওয়া যাবে না।
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইটা আজকের নয়, তার এক সুদীর্ঘ ইতিহাস আছে। বহু রাষ্ট্রনায়ক, সমাজ সংস্কারকের আবির্ভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে এই পৃথিবী কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে চে গুয়েভারা এক অন্য স্বাদের রেসিপি এই সমাজকে উপহার দিয়েছে। তার জীবনটা একটা সম্পূর্ণ কবিতা , সেখানে আছে রোমান্টিকতা, শ্বাশত জিজ্ঞাসা , চিরন্তন আদর্শ পূরণের আপোষহীন প্রচেষ্টা ,বন্দুক হাতে সমাজ পাল্টানোর লড়াই, যে নাকি ফিনিক্স পাখির মতো পার্থিব জগতের সীমারেখাকে থোড়াই কেয়ার করে অসীমের মাঝে মিলিয়ে যায়। সব থেকে কঠিন হল তার জীবনের সুর যা মানুষের কর্ণকুহরে একবার প্রবেশে করলে তার সাথে তাল মিলাতে না পারলে একটা গ্লানি সারা জীবন বহন করে বেড়াতে হয়।
যুগে যুগে বহুরূপীর পোশাক পরে মানুষরূপি কতিপয় জন্তু লোভের জঙ্গলে বসে অর্থনৈতিক ভাবে দুর্ব্বল সেই সমাজের বরিষ্ঠ অংশের কান্না,ঘাম ও রক্তের ককটেল ঠান্ডা ঘরে বসে নিয়মিত স্ট্র দিয়ে পান করছে। তাদের পোষা জনপ্রতিনিধিরা দূরে বসে তাদের পালিত পাহারাদারদের দিয়ে পুঁজিবাদীদের, নব্য সাম্রাযাজ্যবাদীদের অসামাজিক কাজ কর্মকে বিভিন্ন প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করছে। কিন্তু, ইতিহাস বলছে যে, শেষ কথাটি সেই সংখ্যাগরিষ্ঠ অর্ধশিক্ষিত, অর্ধাহারে থাকা মানুষ গুলিই বলবে ।
সেই ১৯৫৬ সালের নভেম্বর মাস, মেক্সিকো থেকে যে বিপ্লবের ভ্রূণ স্থাপিত হয়েছিল কিউবার জঠরে তা পরিণত হলো ১৯৫৯ জানুয়ারি মাসে জন্ম নিল সেই নতুন শিশু একনায়কতন্ত্রের গর্ভ থেকে। এই দীর্ঘ সময় ধরে চে গুয়েভারার হাঁপানিতে আক্রান্ত ফুসফুসটি কোন উল্লেখযোগ্যভাবে তার উপর কোন প্রভাব খাটায়নি । কিন্তু ১৯৫৯ জানুয়ারী মাসের মাঝামাঝি নাগাদ ,এই হাঁপানি তাকে কিছুদিনের জন্য বাধ্য করলো কাজের চাপের মধ্যে থেকে অব্যাহতি দিতে। চে' আটলান্টিক মহাসাগরের নিকটবর্তী 'টারারা' নামে এক স্থানে কিছুদিনের জন্য বিশ্রাম নিতে গেলেন। এখানে বসেই তিনি আগামীদিনে কিউবার আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিকাঠামোর রূপরেখা তৈরি করেন। তার "গেরিলা যুদ্ধ " বইটি তিনি এখানে বসে রচনা করেন। এই বছরের ফেব্রূয়ারি মাসে ফিদেল কাস্ত্রোর সরকার চে'কে কিউবার নাগরিকত্ব দেয়।
![]() |
চে গুয়েভারা ও এলিদা মার্চ |
১৯৫৯ সালের জানুয়ারী মাসের শেষে চে'র পত্নী হিলদা গেদে কিউবাতে আসেন। তিনি তার পত্নীকে জানান যে, কিউবাতে তিনি এলিদা মার্চ নামে সহকর্মী এক মহিলার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন। হিলদা গেদে ও চে'র মধ্যে সোহার্দ্য পূর্ন পরিবেশে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ২রা জুন.১৯৫৯ সালে এলিদা মার্চের সাথে চে গুয়েভারার বিবাহ সম্পন্ন হয়।
ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার সমাধির উপর সমাজতন্ত্রের সৌধ নির্মাণ করতে গিয়ে চে গুয়েভারা কতকগুলি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন। "সাম্যবাদ "- এই মতবাদটি সম্পূর্ণ অর্থনীতির উপর নির্ভরশীল এক রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা। কার্ল মার্ক্সের উদ্বৃত্ত মূল্য তত্ত্বটির সঠিক ভাবে প্রয়োগ করতে গিয়ে তিনি পুঁজিবাদী ও সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি কি ভাবে তাদের দেশে নিয়ন্ত্রণ করেন সঞ্চয় ও উদ্বৃত্ত মুনাফার সূত্রটা, তা তিনি মনোযোগের সাথে লক্ষ্য করেছেন।
আর্নেস্তো চে গুয়েভারার কিউবার অর্থনৈতিক সংস্কারের উপর সারা পৃথিবীতে বহু সমীক্ষা, পরীক্ষা নিরীক্ষা, রিসার্চ হয়েছে বা এখনো তা প্রাসঙ্গিক। এখানে কিছু তথ্য ভিত্তিক বইয়ের উপর নির্ভর করে এই ব্লগটা লেখা হচ্ছে।
সমস্যার গভীরেই আছে সব রহস্যের সমাধান
সমস্যা
চে গুয়েভারা বিপ্লবের পূর্বে কিউবার আর্থ-সামাজিক পরিকাঠামোকে ভীষণ গভীর ভাবে লেখায় করেছেন , তা যথাক্রমে , (১) আর্থিক ক্ষেত্রে অসাম্য (২) শিল্প-বাণিজ্য ক্ষেত্রে, উন্নত প্রযুক্তির দ্বারা উৎপাদিত সামগ্রীর সাথে দেশীয় অন্নুনত প্রযুক্তির অসম প্রতিদন্দ্বিতা , (৩) বেকার সমস্যা , (৪) ভঙ্গুর গ্রামীণ অর্থনীতি , (৫) দেশীয় মূলধনের অভাবের জন্য কোন বিনিয়োগ নেই , (৬) পরনির্ভরশীল অর্থনীতি, আমদানি ও রপ্তানিতে বিদেশী নিয়ন্ত্রণ। অর্থনীতি মূলতঃ চিনির উপর নির্ভরশীল। গোটা অর্থনীতিই মূলতঃ মার্কিনিদের নিয়ন্ত্রণাধীন।
অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে কিউবা কে স্বাবলম্বী করতে গেলে কি কি করা প্রয়োজন -
- একটি অনুন্নত রাষ্ট্রে ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে একটা সমাজতান্তিক ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা করার বাস্তবতা বিশ্লেষণ ও সমাজতান্ত্রিক পদ্ধতিতে গঠনতান্ত্রিক পরিবর্তন।
- উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা কি ভাবে বাড়াতে হবে থেকে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতা কি ভাবে বাড়ানো যায়।
- উৎপাদনের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞনিক দৃষ্টিকোণ ও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার।
- অর্থনৈতিক পরিকাঠামোর সাথে জড়িত প্রতিষ্ঠান গুলির ব্যাপক সংস্কার।
- মহিলাদের অধিকার প্রদান
- বর্ন বৈষম্য দূরীকরণ ( সাদা ও কালো কিউবান )
- ধনী ও দরিদ্রের মধ্যে ব্যবধান
- সার্বজনীন শিক্ষার অধিকার
- সার্বজনীন চিকিৎসার ব্যবস্থা
- আবাসন সমস্যা দূরীকরণ
- যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি করণ
- দারিদ্রতা দূরীকরণ
- সাংকৃতিক পরিকাঠামো গঠন
সমাধান ও বাস্তবায়ন
- আর্থিক প্রকল্পগুলিকে বাস্তবায়িত করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নির্মাণ এবং তার নিয়ন্ত্রণের খসড়া রচনা।
- বুনিয়াদ গঠনের জন্য পুঁথিগত ও পেশাগত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা।
- কারখানা পরিচালনক্ষেত্রে শ্রমিকদের বাধ্যতামূলক যোগদান।
- উপর্যপুরি গবেষণা ও উন্নয়ন ব্যবস্থা গ্রহণ।
- বিজ্ঞান এবং কারিগরি শিক্ষাকে উৎপাদনের কাজে ব্যবহার।
- বিপ্লবের পূর্বে যে সকল প্রতিশ্রুতি জনসাধারণকে দেওয়া হয়েছিল তাকে বাস্তবায়িত করা।
বাতিস্তা বিরোধী প্রগতিশীল বুর্জোয়ারা বিপ্লব পরবর্তী সরকারে অংশ গ্রহণ করে। এই পদক্ষেপে দেশে ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা খানিকটা বিপ্লবী সরকারের উদ্দেশ্য সম্পর্কে অস্পষ্ট ধারণা জন্মে ।
১৯৫৯ সালে চে গুয়েভারা ইন্ডাস্ট্রি মিনিস্টার হিসাবে একের পর এক সংস্কার শুরু করেন, তার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে "দ্যা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর এগ্রেরিয়ান রিফর্ম " (INRA) নামে একটি সংস্থা গঠন করেন এবং তার শীর্ষে ছিলেন তিনি নিজে। আইনের মাধ্যমে ভূমিসংস্কার করে বড় জমিদারের হাত থেকে জমি অধিগ্রহণ করে ছোট ছোট চাষীদের মধ্যে জমির বন্টন ব্যবস্থ্যা শুরু করেন এবং রাষ্ট্রের অধীনে সমবায় সমিতি গঠন করে তাদের উপর দায়িত্ব অর্পণ করেন।
সিয়েরা মাস্ত্রোর জঙ্গলে বিপ্লবীদের সাথে ছোট চাষীরা সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করে। জমিদারদের সাথে সংঘর্ষ করে তারা বাস্তু হারা হয়ে যায়। এই ভূমি সংস্কারের সুফলে তারা উপকৃত হয়। জমির অধিগ্রহনের জন্য জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ হিসাবে তাদের ২০ বছরের বন্ড দেওয়া হয় বার্ষিক ৪.৫% সুদে।
INRA এর মাধ্যমে চে গুয়েভারা ১০০,০০০ যুবকদের মিলিশিয়া হিসাবে নিয়োগ করেন, তাদের কাজ হল সরকারী প্রকল্পগুলি সঠিক ভাবে রূপায়ন হচ্ছে কিনা তার নজরদারি করা। পরবর্তী সময়ে এই যুব সম্প্রদায়কে প্রশিক্ষণ দিয়ে সৈন্যবাহিনীতে নিযুক্ত করেন।
বিপ্লবের সময়কার সাক্ষরতার হার ছিল ৬০-৭৬% এবং গ্রামীন বিদ্যালয় না থাকায় তার চেহারাটা ছিল আরো করুন। গুয়েভারা ১৯৬১ সালকে বেঁচে নেয় শিক্ষা প্রসারের বছর হিসাবে এবং তাকে বাস্তবায়িত করার জন্য ১,০০,০০০ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেন, তাদের নামকরণ করেন স্বাক্ষরতার যোদ্ধা । সারা কিউবা জুড়ে তারা কাজ করতে শুরু করেন, প্রান্তিক কৃষকদের শিক্ষার আলোকে নিয়ে আসেন এবং অচিরেই স্বাক্ষরতার অংকটা ৯৬% এসে পৌঁছায়। উচ্চ শিক্ষার অধিকারটা পূর্বে সাদা চামড়ার উচ্চবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, চে গুয়েভারা তাকে পুনঃনির্মান করে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলিকে জাতীয়করণ করে শিক্ষাকে সমাজের সর্বস্তরের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন।
কিউবার অভ্যন্তরীণ সংস্কারের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ UNITED NATIONS ECONOMIC COMMISSION OF LATIN AMERICA নামে যেই সংস্থাটি কিউবাতে কাজ করছিল , ইউ. এস. এ. র আঙ্গুলি হেলনে তাদের পরামর্শদাতাদের ও টেকনিশানদের কিউবা থেকে তুলে নেয়। অবশ্য প্রায় সঙ্গে সঙ্গে কিউবা সমাজতান্ত্রিক দেশগুলি থেকে এই সহায়তাগুলি গ্রহণ করে।
চে গুয়েভারা, কিউবার অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সর্বক্ষেত্রে রাষ্ট্রের একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগোতে থাকে। ১৯৬০ সালে অক্টোবর মাসে INTERNATIONAL FINANCIAL INSTITUTE -কে মার্কিনিদের প্রভাব থেকে মুক্ত করে। ব্যাংকগুলোকে জাতীয়করণ করা হয়। রাজনৈতিক পট - পরিবর্তনের সাথে সাথে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু অর্থনৈতিক সমীকরণ হয়। যেমন, ৩রা জুলাই , মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ার কিউবা থেকে যে ৭,০০,০০০ টন চিনি আমেরিকায় রপ্তানি হোত তা বন্ধ করে দেয়। সঙ্গে সঙ্গে ২০ শে জুলাই সোভিয়েতের সাথে চুক্তি করে আমেরিকার পুরো কোটার চিনিটা রাশিয়ায় পাঠিয়ে দেয়। ২১ এবং ২২ শে জুলাই কিউবায় অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পরিচালিত সবথেকে বৃহত্তম চিনি কলটি কিউবা অধিগ্রহণ করে নেয়। ১৭ই , সেপ্টেম্বর , কিউবায় অবস্থিত USA -এর ব্যাংকগুলি জাতীয়করণ করে নেওয়া হয়। ১৩ই অক্টোবর সবরকমের ব্যক্তিগত মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে রাষ্ট্রীয়করণ করা হয়। ফেব্রুয়ারী মাসের ২৩ তারিখে , চে গুয়েভারা তখন মিনিস্টার অফ ইন্ডাস্ট্রিজ , তখন তিনি একটি নির্দেশনামা জারি করে কৃষি ঋণ , শিল্প ঋণ এবং আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে রাষ্ট্রের একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠা করে।
১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে ৮৩.৬% শিল্পকে জাতীয়করণ করা হয়। ৪২.৫% জমি, অধিকাংশ ব্যবসা , ব্যাঙ্ক, যোগাযোগ ব্যবস্থা সবই জাতীয়করণ করা হয়। একটি সংহত আর্থিক পরিকল্পনা এবং দেশের অর্থনৈতিক স্থায়ী পুনর্জীবনের জন্য ও তাকে নিয়ন্ত্রণের জন্য চে গুয়েভারা, জাতীয় ব্যাঙ্ক , দেশের সমস্ত আর্থিক ক্ষমতাকে কেন্দ্রভূত করেন।
চে গুয়েভারার The Budgetary Finance System (BFS) :
সারা বিশ্বে তার পরিচয় একজন রোমান্টিক আদর্শবাদী বিপ্লবী যোদ্ধা হিসাবে। অদম্য জ্ঞান অর্জনের প্রতি আগ্রহ তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে ও পড়াশুনা থেকে বিরত রাখতে পারেনি ,তার পিঠে হ্যাভারস্যাকে আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই থাকত , যা তিনি একটু অবসরে তার পাঠোদ্ধার করতেন। পৃথিবী থেকে সাম্রাজ্যবাদ , পুঁজিবাদকে উৎখাত করার পরবর্তী সেই পৃথিবীতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তার আর্থিক পরিকল্পনার রূপটা কি হবে তার স্বচ্ছ ছবিটাকে তিনি তার কাছে সযত্নে তৈরি করে রেখে দিয়েছিলেন । তিনি নিজেকে তৈরি করে রেখেছিলেন মার্ক্সের দর্শন ও অর্থনৈতিক ভাবধারায় কিউবার অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের কি ভাবে ঘটানো যায়। চে 'র সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আর্থিক সংস্কারের তত্ত্বটি সোভিয়েত ও পূর্ব ইউরোপের থেকে আলাদা ছিল।
সমাজতান্ত্রিক রাষ্টে , উদ্যোগ মূলধনের জন্য ব্যাংকার কাছ থেকে ঋণ নেয় উৎপাদন করার জন্য , উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রয় করে , রাষ্ট্রকে তার লভ্যাংশের প্রস্তাবিত অংশ দেয় বাকিটা রেখে দেওয়া হয় রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন প্রয়োজনের জন্য। এখানে একটি ব্যবধান আছে তা হল , রাষ্ট্র কোন কিছু বিক্রি করেনা কিন্তু উৎপাদিত সামগ্রী শ্রমিকদের মধ্যে বন্টন করা হয় । (CHE GUEVARA, op.cit.in. Conference "Economy and Plan" of the People's University, 1961. Translated from Spanish)
সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিল্পের উৎপাদনের জন্য উন্নয়ন , মূলত , ভারী শিল্পের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্ত জমির উপর প্রতিষ্ঠা। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উপর কোন রকমের নির্ভরতা ছাড়াই ,প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প। যার উদ্দেশ্য একটা শক্ত ভিত্তির জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ একটি অর্থনীতি এবং দেশ গঠন।
চে গুয়েভারার The Budgetary Finance System (BFS) :
সারা বিশ্বে তার পরিচয় একজন রোমান্টিক আদর্শবাদী বিপ্লবী যোদ্ধা হিসাবে। অদম্য জ্ঞান অর্জনের প্রতি আগ্রহ তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে ও পড়াশুনা থেকে বিরত রাখতে পারেনি ,তার পিঠে হ্যাভারস্যাকে আগ্নেয়াস্ত্রের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের বই থাকত , যা তিনি একটু অবসরে তার পাঠোদ্ধার করতেন। পৃথিবী থেকে সাম্রাজ্যবাদ , পুঁজিবাদকে উৎখাত করার পরবর্তী সেই পৃথিবীতে রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তার আর্থিক পরিকল্পনার রূপটা কি হবে তার স্বচ্ছ ছবিটাকে তিনি তার কাছে সযত্নে তৈরি করে রেখে দিয়েছিলেন । তিনি নিজেকে তৈরি করে রেখেছিলেন মার্ক্সের দর্শন ও অর্থনৈতিক ভাবধারায় কিউবার অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের কি ভাবে ঘটানো যায়। চে 'র সমাজতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আর্থিক সংস্কারের তত্ত্বটি সোভিয়েত ও পূর্ব ইউরোপের থেকে আলাদা ছিল।
সাধারণ ভাবে , Budgetary Control System হচ্ছে এক গুচ্ছ আর্থিক প্রকল্পের সমষ্টিগত লক্ষ্য , যার মাধ্যমে পরিচালকমন্ডলী বুঝতে পারেন পূর্ব নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা সেই লক্ষ্যের কতখানি পৌঁছাতে পেরেছেন তার মূল্যায়ন। সব কটি পর্বে বাজেট ও বাস্তব কাজের মধ্যে তুলামূলক মূল্যায়ন এবং তার ফলাফলের পরিপেক্ষিতে পরিচালকমন্ডলীর আগামী দিনের কর্ম পদ্ধতির সিদ্ধান্ত গ্রহণ। এক কথায় Budgetary Control System হচ্ছে সেই সুশৃঙ্খল পদ্ধতি যায় মাধ্যমে পরিচালক তার কাজের খতিয়ানের বিশ্লেষণ করে তার আউটপুটের ভিত্তিতে দ্রুত পরবর্তী সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সমাজতান্ত্রিক রাষ্টে , উদ্যোগ মূলধনের জন্য ব্যাংকার কাছ থেকে ঋণ নেয় উৎপাদন করার জন্য , উৎপাদিত সামগ্রী বিক্রয় করে , রাষ্ট্রকে তার লভ্যাংশের প্রস্তাবিত অংশ দেয় বাকিটা রেখে দেওয়া হয় রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীন প্রয়োজনের জন্য। এখানে একটি ব্যবধান আছে তা হল , রাষ্ট্র কোন কিছু বিক্রি করেনা কিন্তু উৎপাদিত সামগ্রী শ্রমিকদের মধ্যে বন্টন করা হয় । (CHE GUEVARA, op.cit.in. Conference "Economy and Plan" of the People's University, 1961. Translated from Spanish)
সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতির মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিল্পের উৎপাদনের জন্য উন্নয়ন , মূলত , ভারী শিল্পের প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্থনীতিকে শক্ত জমির উপর প্রতিষ্ঠা। সাম্রাজ্যবাদী শক্তির উপর কোন রকমের নির্ভরতা ছাড়াই ,প্রযুক্তি নির্ভর শিল্প। যার উদ্দেশ্য একটা শক্ত ভিত্তির জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ একটি অর্থনীতি এবং দেশ গঠন।
Commodity-Money Relations and the Law of Value
কমোডিটি বা পণ্য বলতে বুঝায় কোন দ্রব্য বা কোন সার্ভিসকে তা উৎপাদিত হয় শ্রমিকের শ্রম দানের পরিবর্তে এবং তা বিক্রিত হয় বাজারে। অন্যভাবে বলা যায় পণ্য হচ্ছে একটি ব্যবহারের মান (use value) । ( কি ব্যবহৃত হচ্ছে তার উপর মূল্য নির্ধারিত হয়, যেমন প্রকৃতির দান বায়ু , আলো , জল ইত্যাদি উৎপাদিত হয়না কেননা তা প্রকৃতির কাছ থেকে মানুষ পেয়ে থাকে , আবার শ্রম উৎপাদিত হয়না প্রকৃতির কাছ থেকে পেয়ে থাকে কিন্তু প্রথমটির জন্য বিনিময় মূল্য দিতে হয়না অথচ শ্রমের জন্য একটা বিনিময় মূল্য দিতে হয় ) অর্থাৎ কোন ক্ষেত্রে তা ব্যবহৃত হচ্ছে তার উপর বিনিময় মূল্য নির্ধারিত হয়।
Productive Capital : (উৎপাদনী মূলধন ) উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত মূলধন এবং শ্রমশক্তি এই উভয় মিলে হয় উৎপাদনী মূলধন।
Circulating Capital : উদ্বৃত্ত অর্থের (মুনাফা) উৎস খুঁজতে গিয়ে মার্কস উৎপাদনে ব্যবহৃত মূলধনের উপর জোর দেন। মূলধন উৎপাদনের বৃত্তে ঘুরছে , যখন মূলধনের দ্বারা উৎপাদন সংঘটিত হয় তখন তাকে পণ্য মূলধন বা টাকা 'মূলধন' বলে। আবার সেই মূলধন যখন রূপান্তরিত হয় তখন তাকে উৎপাদনক্ষম মূলধন বলে। Commodity Capital বা Money Capitalকে কিন্তু Circulating Capital বলে না। ফিক্সড ক্যাপিটাল এবং সারকুলেটিং ক্যাপিটাল কে শুধু মাত্র প্রোডাকটিভ ক্যাপিটাল বলা হয়। উৎপাদনের প্রক্রিয়ার মধ্যে মূলধনের চরিত্রগত পরিবর্তনটি লক্ষ্যণীয়, যেমন, কস্ট অফ লেবার বাদ দিলে শুধুমাত্র উৎপাদনে ব্যবহৃত মূলধনটি হচ্ছে "constant capital " কিন্তু labour এর জন্য যে ক্যাপিটালটি ইনভেস্টমেন্ট হয় সেটা হচ্ছে "variable ক্যাপিটাল " । ফিক্সড ক্যাপিটালের পরিবর্তিত মূল্য হচ্ছে পণ্য এবং তার চরিত্র হচ্ছে কনস্ট্যান্ট ক্যাপিটাল। কিন্তু সারকুলেটিং ক্যাপিটালের গঠন কনস্ট্যান্ট এবং ভ্যারিয়েবল ক্যাপিটালের সমন্বয়ে।
অর্থ (Money) : প্রথমতঃ অর্থ হচ্ছে এক সার্বজনীন পণ্য বা বিনিয়মের মাধ্যম বা মোটের উপর একটি পদ্ধতি যেখানে জমা এবং খরচ একই সাথে সহাবস্থান করে।
The law of Value : ভ্যালু বলতে এখানে তিনি বুঝিয়েছেন , বিশেষ কোন পণ্য উৎপাদনের জন্য কত শ্রমদিবস ব্যবহৃত হয়েছে সে হিসাবে। ল অফ ভ্যালু নির্ধারণের ক্ষেত্রে এটি বিশেষ ভাবে লক্ষ্যণীয় যে, একটি নির্দ্দিষ্ট সামাজিক প্রকল্পে ঠিক নিদ্দিষ্ট মানে কতখানি সামাজিক শ্রম ব্যবহৃত হয়েছে তা নির্নয় করা। চে গুয়েভারার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা মূলত Budgetary system-এর ভাবনার অন্তভুর্ত ছিল। গুয়েভারার আর্থিক পরিকল্পনা অধিকাংশই স্তালিনের Economic Problem-র দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে ছিল।
ক্রমশঃ। .....................................
মন্তব্যসমূহ