নারদের মর্ত্যে ভ্রমণ - নবম সংখ্যা
নারদের মর্ত্যে ভ্রমণ - নবম সংখ্যা
এই পর্বে থাকছে ০০০০০
পাঠকের মতামত ও তার সম্ভাব্য উত্তর -
বহু মন্তব্যের উত্তর এক সংখ্যায় দেয়া সম্ভব হচ্ছেনা, তাই এক এক করে উত্তর দেবার চেষ্টা করছি ।
অবশ্যই, প্রত্যেকের প্রশ্ন এক নয় , সবই " ওপেন এন্ডেড কোয়েশ্চেন " বক্তব্যের আবেদন যেখানে এক, সেখানে সেই সব প্রশ্নকে বক্তব্যের ভাবের সামঞ্জস অনুযায়ী কোডিং করে কমন প্রশ্ন হিসাবে সাজিয়ে নিয়ে উত্তর দেবার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কিছু পাঠক জানতে চেয়েছেন -
১) এই ভারতবর্ষ তথা পৃথিবীতে কি এমন সাংঘাতিক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, যার জন্য গোটা ব্যাপারটিকে বর্ণনা করার জন্য স্বর্গ , বেদ ও ভারতীয় পুরান থেকে নারদ নামক চরিত্র ও অন্যান্য দেব দেবীকে টেনে এই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়ে আসা হচ্ছে।
আমাদের সঠিক উদাহরণ দিয়ে ব্যাখ্যা করুন। আর প্রত্যেক দেবতার নিজস্ব কতগুলি পকেট এই বিশ্বে আছে। অজান্তে তাদেরকে আঘাত দিচ্ছেন না তো ?
---- এর মধ্যে অনেক প্রশ্ন লুকিয়ে আছে। তাই উত্তর দেবার সময় আলাদা আলাদা করে দিতে হবে।
প্রথমত আমরা একটু তাকালেই দেখতে পাব, বিভিন্ন দেওয়ালে, দেব-দেবী ও মহাপুরুষদের ছবি দিয়ে তার বাণী প্রচার করার একটা প্রবণতা সাধারন মানুষের আছে। সেটা সোশ্যাল মিডিয়ার দেওয়াল হোক বা আক্ষরিক দেওয়াল হোক । যিনি বিশ্বাস করেন তার জীবনের জিজ্ঞাসাটা লুকিয়ে আছে মনীষীদের উক্তিতে তখন তিনি তাকে সার্বজনীন করে তোলার জন্যিই পোস্ট এবং শেয়ার করেন । আবার এর সাথে সাথে তিনি জানেন যে, মনীষীর লোগোটা না থাকলে কেউ সেই অনামীর উপলদ্ধিটা ভাগ করে নেবেন না। (এখানে একটা জিনিস মনে রাখা প্রয়োজন যে, আদর্শগত কারনে প্রতিষ্ঠিত শিল্পীর প্রোডাক্টের বিজ্ঞাপনের সাথে এই বিষয়বস্তুকে এক করা একদমই ঠিক হবেনা ।)
প্রসঙ্গত বলা ভালো, যারা সোশ্যাল মিডিয়াতে ঘোরা ফেরা করেন, একটু নজর করে দেখবেন, দেব-দেবী এবং সোশ্যাল রিফর্মাররা যাঁরা আছেন, তাদের ছবি লাগিয়ে দিয়ে কত লেখকের নিজের সৃজনশীলতাকে , তাদের উপদেশ হিসাবে চালিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে, কেননা বাস্তব পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছে ব্রান্ডটাকে ব্যবহার করার। সব থেকে আশ্চর্য্যের ব্যাপার, সারা পৃথিবীতে মানুষ গ্রোগ্রাসে গিলছে। সেই ভিডিওর ভিউয়ারের সংখ্যা কত অল্প দিনে বহু মানুষকে স্পর্শ করেছে। ঘটনার সত্যতা যে কেউ সোশ্যাল মিডিয়াতে দেখে নিতে পারেন।
এটাই প্রমান করছে মানুষ শান্তির জন্য নিরবিচ্ছিন্ন খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছে, কেননা, দৈনিন্দিন জীবনে সুখ হয়তবা আছে কিন্তু শান্তি নেই। তাই অধিক সংখ্যক লোক আজ বেশি করে আধ্যাত্বিকতার দিকে ঝুঁকছে। সোশ্যাল মিডিয়ায়কেই এর প্লাটফর্ম বানিয়ে ফেলেছে। উদ্দেশ্য একটাই - আমি এবং আপনি সবাই ভালো থাকি।
আরেকটা জিনিস ভীষণ লক্ষ্যণীয় , কোন মিটিং মিছিলে ভিড় বাড়ানোর জন্য রাজনৈতিক দলেরা , কখনো উপঢৌকনের আশ্রয় নেয় ।
পাশাপাশি ধর্মীয় আহবানে মানুষকে আনার জন্য কোন বাস বা লরির ব্যবস্থা করতে হয়না । এবার রাজনৈতিক সমাবেশ এবং ধর্মীয় সমাবেশের মধ্যে সাধারণ মানুষের মধ্যে যোগদান করা আর না করার ব্যবধানটা কি ?
রাজনৈতিক দলের গোড়া সমর্থকদের বাদ দিয়ে যারা ভয়ে বা আর্থিক লাভের জন্য যোগদান করেন , সেই মানুষেরা আসেন স্থুল উদ্দেশে আর ধর্মীয় অনুষ্ঠানে আসেন প্রাণের টানে আসেন। এটাই আমাদের ভারতবর্ষ।
বাস্তবে যখন মানুষ তার যে কোন সমস্যার সমাধানের জন্য পরিবার থেকে শুরু করে বিচার ব্যবস্থার দরজা নাড়িয়ে কোন সাড়া পান না, সেখানে হয় সে বাগী আর তা না হলে তখন তার যাত্রার অভিমুখ হয় মন্দির, মসজিদ বা চার্চের দরজা।
এখানে পরিবারের কথাটা খুব সচেতন ভাবে বললাম কেননা, পরিবার বহু অপরাধের জন্ম দেয়। বাল্য বিবাহ থেকে বধূ নির্যাতন, সম্পত্তির ভাগ, এতো নিত্য দিনের গল্প। এই ঘটনার আঁতুরঘর তো পরিবার। শহরে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে স্মার্ট ফোনে শহরের ১৩-১৪ বছরের টিনএজের মেয়েরা ফেসবুক, হোয়াটসআপ আর ইউটিউবে যেখানে মজে আছে আবার সেই দেশেই তারই সমবয়সী মেয়েটাকে আমরা দেখি , গোড়ালির থেকে অনেকটা উঠে আছে তার শাড়িটা, রেডিমেড ব্লাউজটা তার কাঁধের মাপের থেকে বেশ বড় দেখেই মনে হচ্ছে রেডিমেড ব্লাউজ , হাট থেকে কেনা , সে যেদিকে হেলে যাচ্ছে, তার কাঁধের পুটটা অনায়াসে নেমে গিয়ে কনুইটাকে আড়াল করছে , বাচ্ছা কাঁখে নিয়ে এক হাতে দেওয়ালে নিঃশব্দে গোবর দিয়ে ঘুটে লেপছে, পাশে কয়েকটা গরু বাধা আছে আর সকালবেলা সারা উঠানটা মল ত্যাগ করে ছাড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে । সেখানেই সে চোখে মুখে এক পরম নিশ্চিন্ততার ভাব নিয়ে কাজটা করে যাচ্ছে। যেন এই কাজটা করার জন্যই বহু জন্মের পুণ্যের ফসল এই মানব জন্ম তার স্বার্থক। অল্প বয়সেই রক্তাল্পতা রোগের শিকার । দারিদ্র আর বহু সন্তানের জননী হবার সুবাদে। আপাদমস্তকে কোন প্রতিবাদের লেশমাত্র নেই। এ এক বাল্য বিবাহের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
এ সব গল্প কথা নয়, নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা। NGO সাথে কাজ করতে গিয়ে, এনাদের শারীরিক অবস্থার পরিণতিও চাক্ষুস দেখার সুযোগ হয়েছে এবং কারণটাও জানা গেছে, হেলথ সেন্টার চালাবার সুবাদে।
পরিবার যে অপরাধকে জন্ম দেয়, মহাভারত তো তার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। এই জন্যই তো পৃথিবীর ইতিহাসে এত বড়ো ধর্মযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। ইতিহাস বা মহাকাব্য যাই-ই তাকে বলা হোকনা কেন তার আসল মেসেজটা কিন্তু সমাজ গ্রহণ করেনি বা গ্রহণ করতে পারেনি।
- তাই আমাদের রচনার কুশি লবেরা স্বর্গ থেকে নেওয়া , আয়বব আর তার নাম স্বর্গ থেকে ধার করা, কিন্তু ভিতরে সব মর্ত্যের মেশিনারি।
যখন থেকে আমরা বুঝতে শিখছি , আমাদের কে শেখানো হয়েছে যা কিছু সব সময়ের জন্য সুন্দর সেটা একমাত্র স্বর্গেই পাওয়া যায়। আর ওখানে যাবার পারমিটটা তখনিই পাওয়া যাবে যখন সারা জীবন সেই মানুষটা ধর্মের ধারাপাতটা মুখস্ত করে সারা জীবন কাজ করবে আর একটা অদৃশ হাত থাকবে তাকে শাসন করার যদি কোন ভুল করে বসে তাকে সংশোধন করার জন্য।
সংসারে এসে সেই মানুষটি পদে পদে পাঁকে হবু ডুবু খাবে কিন্তু গায়ে পাঁক মাখবে না। বুঝুন কি কঠিন পরিস্থিতি। এই প্রসঙ্গটা ভীষণ সময় সাপেক্ষ্য। এই অন্তঃপ্রকৃতির অনুসন্ধানে এই ভারত ভূমিতে জীবনের মূল্যবান বত্রিশটা বছর ধরে তারা আত্ম্যস্থ্য করেছে প্রাচীন ভারতের শিক্ষার্থীরা যারা পরিচিত হয়েছে পরবর্তী জীবনে আমাদের পথপ্রদর্শক হিসাবে । এই প্রসঙ্গে আমরা আলোচনা করবো অন্য্ সংখ্যা গুলিতে।
যাইহোক, স্বর্গের ফোটা ফুলের সুরভিটা এই বিশ্বের বায়ুমন্ডলে পাওয়াটাই মানুষের জীবনের লক্ষ্য। সেটা জ্ঞানেই কিংবা অজ্ঞানে হোক তার অন্বেশন চলতেই থাকবে। লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে কিনা সেটা সময় বলবে। আমরাও এর ব্যতিক্রমী নই।
ক্রমশঃ
মন্তব্যসমূহ