নারদের মর্ত্যে ভ্রমণ - ষষ্ঠ সংখ্যা

 নারদের মর্ত্যে ভ্রমণ - ষষ্ঠ সংখ্যা 

[ বিশাল কনফারেন্স রুম - উপস্থিত দেবরাজ ইন্দ্র , অগ্নিদেব,ম্যাডাম সরস্বতী ,বেদব্যাস , ঋষি যাজ্ঞবল্ক , বিশ্বামিত্র  মুনি, বাল্মীকি মুনি , নারদ এবং  অধীর বাবু- এজেন্ডার সিডিউল অনুযায়ী চতুর্থ পর্বের  মানসিক স্বাস্থ্যের  অসমাপ্ত  রিপোর্টিংয়ের উপর আলোচনা  ] 
ইন্দ্র : মিঃ  নারদ আপনি তো আমাদের "বর্ডারলাইন পার্সোনালিটি ডিসর্ডার " -এই সাবজেক্টটা  মোটামুটি ভালোই ব্রিফ করলেন।  আপনি তাহলে  নিশ্চই জানেন, "অর্ডারলী পার্সোনালিটি কি ?"- সরি মিঃ নারদ, আগে কোনদিন কাউকে প্রশ্ন করিনি, আজকাল উপরে গিয়ে বহু না জানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।  তাই আগে থেকে সব জেনে নেওয়াটা ভালো। আচ্ছা  ঠিক আছে শুরু করুন। 

[💢 💢💢 ইন্দ্র মনে মনে ভাবছে ,  আগে তো বেশ ছিলাম, মাল খেতাম , মেনকাদের বেলি ডান্স দেখতাম , তাদের গায়ে মাথায় হাত বোলাতাম আর  সুন্দরী মহিলা দেখলেই  তো  কথাই নেই , ছলে বলে কৌশলে হাতিয়ে নিতাম। 
 

মর্ত্যে গিয়ে বহুবার অ্যাকশন করেছি যজ্ঞ ভাঙার , পাছে তারা সাসেসফুল যজ্ঞ করে ভগবানের ফেভার পেয়ে আমার থেকে বেশি  ক্ষমতা সম্পন্ন হয়ে উঠে ; এই ক্ষমতা নিয়েই সবাই ভীষণ চিন্তিত। বর্তমানে আমার এই পুরোনো পলিসিগুলি আজকে মর্ত্যের নেতা মন্ত্রীরা অভ্যাস করছে।  তাদের সাকসেস রেট বেশ ভালো। হোক না  কানা ছেলে , পদ্মলোচন  নিজেকে ভাবতে অসুবিধা  কি ?


 তাদেরতো আর ঋষি-মুনি নেই যে তাদের কাজে বাধা দেবে , আর যাও বা  কিছু পল্টন আছে তারাতো ধন্য হয়ে যায় নেতাদের পায়ের কাছে বসে । তাদের সার্ভিস রুল আর প্রিন্সিপাল ব্যাঙ্কের  লকারে রেখে, তার চাবিটা গঙ্গার জলে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। তাই তারা সফল। 


জনতা  কোন মন্ত্রবলে  প্রতিবাদ করবে তাদের মেরুদণ্ডের কাঠামোটা ঠিক রেখে   ভিতরের মজ্জাটাতো  রাজা-উজিররা ভ্যানিশ করে দিয়েছে। সেই ফাঁকা জায়গাটা কিন্তু খালি নেই, সেখানে যত্ন করে অনুদান আর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঠেসে ভরে দিয়েছে পাঁচ বছরের  জন্য , আবার  পাঁচ বছর  পরে  আবার রিনিউ করে নেয় । সেই মানুষের অকেজো মেরুদন্ড কাজও করেনা আর  তাই প্রতিরোধও হয়না। 


মাঝে  মাঝে ভাবি , এই রাজা -উজিররা  করবেই বা  কি ? এই সব রিপুগুলিতো  আমাদের এখান থেকেই  সাপ্লাই  হয়েছে। কোয়ালিটি-কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট ঠিকমতো কাজ করেনি।  সাধারণ একটা এনালাইসিস ,  একটা তম  গুনের বিপরীতে পাঁচটা   স্বতঃ গুণ আছে কিনা ? অর্থাৎ ১ : ৫ রেশিওতে।তাই-ই  ঠিক মতো করে উঠেনি।  অবশ্য QC( কোয়ালিটি-কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট) কি চাপ দেব, এতো প্রোডাকশন হলে ওরা  সীমাবদ্ধ সময়ের মধ্যে চেক  করবে কি করে  আর ডেসপ্যাচ করবে কি করে।  

  কাকে দোষ দেব , মা ষষ্ঠীকে না হতাশাগ্রস্ত মানুষকে, যারা নিরানন্দ মর্ত্যে ওই সৃষ্টির কাজ করে আনন্দ পায় ।   আমরা ধরে নেই বাকি তম গুনগুলি মানুষ মর্ত্যে গিয়ে পরিবেশ থেকে অর্জন করে নেবে , তাই ভালো গুণগুলি বেশি করে পাঠানো হয়।  যেন রেশিওটা পরবর্তী সময় ব্যালান্স হয়ে যায়। 


 হঠাৎ মনে  ভেসে উঠলো বছর পাঁচেক আগের  সেই সেমিনারের কথা।  ভগবান বিষ্ণু ছিলেন প্রধান বক্তা আর বক্তিতার  একটা পয়েন্ট ছিল সৃষ্টির বিবর্তনবাদ। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন  সৃষ্টিকর্তা ব্রম্মা যার পর নাই কি যে পরিশ্রম করেছিলেন সৃষ্টির ধারাকে অব্যাহত রাখতে। সৃষ্টি হল মানুষের।  বেদে ঋষিরা নির্ধারিত করল মানুষের জীবনের উদেশ্য কি হবে , কর্ম কি হবে আর শেষে লক্ষ্য কি হবে। জীবনের উদ্দেশ্যকে ভাগ করলো চার ভাগে করে  নাম দিল পুরুষার্থ- যথাক্রমে -ধর্ম , অর্থ (প্রগতি), কাম (পার্থিব সুখ ) আর মোক্ষ (আধ্যাত্বিক  ) মুক্তি। এখন প্রশ্ন হল কেন অর্থ আর কামকে এর মধ্যে রাখা হোল।  সেই প্রসঙ্গে ব্রম্মার অভিজ্ঞতার কথা তিনি বললেন। 


 সৃষ্টির প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে , সৃষ্টিকর্তা ব্রম্মা সৃষ্টি করলেন চারটি পুত্রের।   তার মানস পুত্রেরা  যথাক্রমে , সনক , সনন্দন , সনাতন ও সনৎকুমার। এই  পুত্ররা সংসারে প্রবেশ করেই অতিষ্ঠ হয়ে কমণ্ডল নিয়ে তপস্যা করতে বেরিয়ে গেলেন।  তার পর আবার তিনি সৃষ্টি করেন কিন্তু তারা সংসারে রইলো কিন্তু প্রায় না থাকার মতো।  সে সময় ঋষিগণ বিবাহিত হলেও সন্তান উৎপাদন করতে চাইতেন না আর জাগতিক কাজে অংশগ্রহণ করতে চাইতেন না। 


 আরেক শ্রেণীর সংখ্যাধিক্য মানুষ   ছিল তারা না যেত আধ্যাত্বিক পথে   আর তারা  কর্ম বিমুখ ছিল।  এদের মধ্যে কামিনী-কাঞ্চনের ভাবনার বীজ প্রোথিত হলে সুখের জন্য অর্থ উপাৰ্জন করতে হবে আর উপার্জনের জন্য কর্ম করতে হবে। 


        বর্তমান সময়ে ধর্ম আর মোক্ষকে শিকেয় তুলে অর্থ আর কামের পিছনে জীবনটা ব্যয় করার প্রবণতা উত্তরাত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।  আর এরা সমাজের বালান্সটা নষ্ট করে দিচ্ছে। ভগবান বিষ্ণুর মতে এই সংখ্যাটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে  পারলে বিশ্বব্রম্মান্ডে শান্তি ফিরে আসবে। 


 আর আমার ক্ষেত্রে ঠিক তার উল্টো। বারবার মন্ত্র ছুড়ে ঋষিরা দৌড় করিয়েছে। কি ভীষণ সেই মন্ত্রের শক্তি ! বহুবার ভগবান বিষ্ণুর কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে মুক্তি পেয়েছি। হায় ! আমার সেই সোনার দিনগুলি একে একে কোথায় হারিয়ে গেল। যাইহোক, যে ভাবে হোক আজকের দিনে নিজেকে আপডেট রাখতেই হবে  ] 


মিঃ  নারদ :স্যার ! আপনি কি একটু অনমনস্ক হয়ে গিয়েছিলেন ? আমি কি শুরু করতে পারি ?
ইন্দ্র : না না তেমন কিছু নয় , তবে স্মৃতি সব সময় মধুর বলে মনে হয়, তবে জানিনা কার কি অভিজ্ঞতা। হঠাৎ কেন জানি আমাশয়ের বেগের মতো মনের  দরজার গেটের সামনে এসে স্মৃতি কড়া নাড়ায়।  তখনই সব মনোযোগটা তার  দখলে চলে যায়। ভদ্রমহোদয় এবং  মহোদয়াগন অনিচ্ছাকৃত অপরাধের জন্য মার্জনা করবেন।  হ্যা ! হ্যা ! মিঃ নারদ ; আপনি শুরু করুন

 [এমন সময় নন্দীর প্রবেশ , মহেশ্বরের আহবান এবং দেবরাজের প্রস্থান  ]

ক্রমশঃ 


 



মন্তব্যসমূহ

My new blog বলেছেন…
পরবর্তী র অপেক্ষাতে রইলাম।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়