নারদের মর্ত্যে ভ্রমণ - সপ্তম অধ্যায়
নারদের মর্ত্যে ভ্রমণ - সপ্তম অধ্যায়
কয়েকজন পাঠক দ্বিতীয় এবং ষষ্ঠ অধ্যায়ে উল্লিখিত স্বতঃ, রজ , তম এই শব্দ গুলির অর্থ কি-জানতে চেয়েছেন।
এককথায় বলতে গেলে সত্ত্ব মানে ধর্মজ্ঞান। রজঃ মানে রাজসিক অর্থাৎ অহংকার। তম মানে তামসিক অর্থাৎ অন্ধকার। এই তিনটি গুনের বর্ণনা গীতায় এবং কথামৃততে পাওয়া যায়।
.
সত্ত্ব, রজঃ এবং তম এই তিনটি ভিন্ন প্রকৃতির উপাদান দিয়ে এই বিশ্ব প্রকৃতি তার সৃষ্টির কাজকে অব্যাহত রাখে। মানুষ অবশ্যিই এই প্রকৃতির এক অনন্য সৃষ্টি। যখন এই বিশ্ব মানুষের অস্তিত্বকে আঁচল পেতে গ্রহণ করে নেয়, তখন তার দেহের সাথে যত্ন করে এই তিনটি উপাদান তার অন্তঃকরনে প্রোথিত করে। নতুন শিশুর ধীরে ধীরে পূর্ন মাত্রায় বিকাশের সাথে তার গুণগুলি প্রকাশিত হয়ে প্রমান করে যে ,সে কোন গুনটির বাহক ।
সত্ত্বঃ - এই শব্দটির উৎপত্তি "সৎ" নামক শব্দ থেকে। সৎ শব্দের অর্থ হল সাধু অর্থাৎ যে জীবনে চলার পথে সত্যকে ,ন্যায়কে এবং ধর্মকে সঙ্গী করে এগিয়ে যায়। তিনিই পরিচিত হন সাত্ত্বিক এবং সত্ত্বঃ গুনের অধিকারী হিসাবে। .
তমঃ- তামসিক অর্থাৎ অন্ধকার। "তামসিক" শব্দটি তমঃ থেকে উৎপত্তি। এই গুনের অধিকারীরা যখন কোন কর্ম করে তখন ন্যায় অন্যায়ের কোন বিচার বিশ্লেষণ করেনা। কারোর আদেশ পালনের ক্ষেত্রেও একই নিয়মে কর্ম করে থাকে। যেমন, কাউকে মারার জন্য আদেশ করলো, সে নির্দ্বিধায় তা পালন করে। তারা জন্তুদের মতো শারীরিক চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে।
রজঃ - রাজসিক শব্দটি রজঃ থেকেই উৎপত্তি। এর অর্থ হোল অহংকার। এই গুনের অধিকারীরা জানেন সত্য কি ,ন্যায়,ধর্ম কি কিন্তু তা জানা সত্ত্বেও তাদের দেহ মন আছন্ন থাকে ভরপুর কামনা আর বাসনায়। তাদের প্রকাশে প্রচ্ছন্ন অহংকারকেই প্রকাশ করে ।
উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মহাভারতের দুর্যোধনের কর্ম এবং ধর্মকে। একদিন ভগবান কৃষ্ণ দুর্যোধনকে জিজ্ঞাসা করলেন ," হে দুর্যোধন ! তুমি যে এই অধর্ম করছো সেটা তুমি জান ?" তার উত্তরে দুর্যোধন বললেন, "হে কৃষ্ণ! তুমি আমাকে জ্ঞান দিতে এসোনা , কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ আমি খুবই ভালো করে জানি , কিন্তু অধর্ম করার সময় আমি নিজেকে সেই কাজ করা থেকে বিরত রাখতে পারিনা। "
**** বেদের ব্যাখ্যা অনুযায়ীএই তিনটি গুনের উপর সমগ্র সৃষ্টি দাঁড়িয়ে আছে। এখানে এটা তার একটা ঝলক মাত্র।
ক্রমশঃ
মন্তব্যসমূহ