একটা জাতীয় নায়ক আর এক মুঠো ভাত ।।

 একটা জাতীয় নায়ক আর এক মুঠো ভাত ।।


খ্রিস্টপূর্ব কয়েক হাজার বছর আগে থেকে এই ভারতের মাটি উর্ব্বর হয়েছে বহু মহাপুরুষের আবির্ভাবে। ইদানিং কালে, ঠিক প্রাক স্বাধীনতার সময় এক ঝাঁক মনীষী এসে সমৃদ্ধ করেছে ভারতবর্ষকে। ভারতের ঘোষিত স্বাধীনতার ৭৪ বছর পার হয়ে গেছে।  এমন একটা মানুষ খুঁজে পেলাম না যাকে  আমরা  বহুদিনের ফাঁকা থাকা নায়কের আসনটিতে বসাব ।   

তাহলে কি আমরা ধরে নেব, উদ্দেশ্য  ছাড়া সৃষ্টি হয়না। ভারতের ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যায় ১৪৮৬ খ্রিস্টাব্দে শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু জন্ম গ্রহণ করেছিলেন এমন এক সময়ে যখন মানবধর্ম সংকটে পরে গিয়েছিল। তার পর বহু বছর পার হয়ে গেছে , যখন পলাশীর প্রান্তরে সিরাজের পতনের মধ্যে দিয়ে সূচিত হোল এক নতুন ইতিহাস।  ধর্ষিত হোল মানুষের অধিকার , বিপন্ন হল বর্ষ প্রাচীন সংস্কৃতি তখন সেই আঘাত থেকে ভারতভূমিকে রক্ষা করতে একে একে মহামানবদের আবির্ভাব হল। তারা  ভিন্ন ভিন্ন ক্ষেত্রে স্বকীয় প্রতিভায় ভাস্বর ।  "দেশপ্রেম"  বলে একটা শব্দ প্রতিনিয়ত চর্চিত হতে শুরু করল।  ভারতীয়রা আগে তার নাম শুনেছিল, এখন হাতে কলমে অভ্যাস করতে শিখলো। আর এর সাথে ভারতীয়দের অস্থি মজ্জায়, আবেগে ঢুকে গেল "দেশপ্রেম" নামক শব্দের মাহাত্ম এবং কার্য্যকারিতা। 

ইতিহাসের নিজস্ব একটি টাইম ফ্রেম আছে, একটা সময়ের পর তাকে ছবি করে দেওয়ালে টানাবেই। কারোর চাওয়া বা পাওয়ার উপর সে নির্ভরশীল নয়। সেই মেয়াদ পূর্ন  চলে গেল ইংরেজ।প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যাইই কারন থাকুকনা কেন।  অনেককিছুর মধ্যে আমরা পেলাম যেমন "দেশপ্রেম" আবার পেলাম একশ্রেণীর দেশীয় বেনে সম্প্রদায়। স্বাধীনাতার পরে , ওই দেশপ্রেমের শ্লোগান তুলে ব্রিটিশের ফেলে যাওয়া মডেলের উপর দেশীয় শিল্প গড়ার ধুয়ো তুলে তারা  সংগঠিত পুঁজিবাদের জন্ম দিল। 

ভারতকে ভেঙ্গে দুই টুকরো হয়ে গেল সাহেবদের আর কিছু মোশাসাহেবদের বদান্যতায়। আর যত্ন করে কিছু বীজ ঢুকিয়ে দিল।  সেটা  আগামীদিনে বড় হয়ে ফল দিতে শুরু করল। পেলাম আমরা  একটা  দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা , অস্ত্র কেনার মেলা,  আর দেশপ্রেম দেখানোর যাত্রা পালা। রাজাবাবুরা  শুরু করেন আর তাকে শত গুণ  করেন তাদের পোষা মিডিয়ারা।  

এই দেশপ্রেমের গান শুনিয়ে কত সংগঠন গড়ে উঠেছে। বীররসে পরিপূর্ন ঘটনা দিয়ে কনসার্ট  তৈরি করে দীর্ঘদিনের ঘুমিয়ে থাকা ভারতবাসীকে ঘুম ভাঙানোর গান শুনাচ্ছে। 

ভাগ্যিস, আমাদের পাশে পাকিস্তান ছিল , তা না হলে সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হতেন সত্যিকারের দেশপ্রেমিক দেখতে। 

স্বাধীনতার পর ভারতের না জন্মালো নায়ক আর কোন স্মরণ করার মতো  ভিলেন।  কতগুলি অ্যাভারেজ চরিত্র আজ দেশের ক্যানভাসে উড়ে বেড়াচ্ছে। আগামীদিন এদের কাউকে স্মরণ করবে না সাধারণ মানুষ। কোন শিল্পী আর সাহিত্যিক এদের জন্য কোন পেন আর তুলির ব্যবহার করবেন  না। 

তবে আমরা কিন্তু বসে নেই।  নাই বা পেলাম আজকের নায়ক, কালকের নায়কদের আসনে বসিয়ে শুধু মাত্র বাৎসরিক বন্দনা করি, ভুলেও  কিন্তু তাদের আর্দশকে অনুসরণ করিনা। 

রামায়ন,মহাভারতের মতো মহাকাব্য আর আমরা পেলাম না।  আর পাবোই বা কি ভাবে। এখন সাহিত্য হয়ে গেছে অর্থনীতি নির্ভর। সেই  কোন কালে উচ্চবিত্ত পরিবার উঠে আসা গুটি কয়েক শিল্পী সাহিত্যিক এসে শিল্প-সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন, বাদবাকি সবই তো মধ্যবিত্ত বা তার  নিচের থেকে উঠে এসেছেন।

প্রথম জীবনে জন্মগত প্রতিভা তাঁকে সৃষ্টির দিকে টেনে নিয়ে গেছে। প্রসঙ্গক্রমে, প্রাচীন বেদে অগ্নিবন্দনায় একটি মন্ত্রের মধ্যে "কবিক্রেতু " বলে একটি শব্দ আছে। এই শব্দকে বেদ  ব্যাখ্যা করছেন বুদ্ধির দিক থেকে যিনি শ্রেষ্ঠ  তিনি "কবি" আর কর্মের দিক থেকে যিনি শ্রেষ্ঠ তিনি হলেন "ক্রেতু"।  

কিন্তু  হায় !   আজকে সেই কবিকে কবিতা লিখতে হয়, সিনেমার স্ক্রিপ্ট অনুযায়ী নায়ক কিংবা নায়িকার মুখে কোন লিরিকটা   মানাবে সেই অনুযায়ী তাকে সৃষ্টিটা করতে হয়। সাহিত্যিককে গল্পটা লিখতে হয় সিনেমার জন্য, প্রজেক্টেড কুশি-লবের পার্সোনালিটি অনুযায়ী। আর বড় বড় প্রকাশকের আবদার ও হুমকি দুইই আছে।  শিল্পীকে ছবি বানাতে হয়, পাঁচতারা হোটেলের লাউঞ্জে কোন ছবিটা কর্পোরেটেরা চায় তার উপরে। সম্ভভাবাপূর্ন রাজনৈতিক নেতাকে রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে সরে যেতে হয় ,  কর্পোরেটের আঙ্গুলি লেহনে। বড় চিকিৎসক, শিক্ষবিদ সবাইকে চলতে হয় এক শ্রেণীর অশিক্ষিত শাসকের আর তার গোলামের  আঙ্গুলি লেহনে। 

 মজার ব্যাপার হোল আজকে কিছু আর্থিক লেনদেন করতে গেলে জি এস  টি করতে হবে আর সেটা বানাতে গেলে ট্রেড লাইসেন্স নিতে হবে। এখন প্রশ্ন হোল চিত্রকর, সাহিত্যিক, কবি  যখন ট্রেড লাইসেন্স করাবেন তখন " নেচার অফ ট্রেডের" জায়গায় কি লিখবেন ? তিনি অরিজিনালি কি সেটা তো লিখতে পারবেন না, কারন , কর্পোরেটের দক্ষিণ্যে তাদের স্টেটাস চেঞ্জ হয়ে গেছে।  তারা তো  আজ আইনত " অর্ডার সাপ্লাইয়ার "।

যেই বলে বলীয়ান হয়ে মানুষ নিজ প্রতিভার জোরে সাধারণ থেকে অতিমানব হোতে পারতো, কিন্তু আজ তা পারবেনা।  সিস্টেম তাকে বেঁধে দিয়েছে।  সিস্টেম বলছে তুমি সেটাই করবে , যেটা আমরা চাই। তুমি আমাদের নির্দেশিত পথে চলো তোমার অন্ন আমরা জোগাবো। 


Blogger -Rabin Majumder



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়