নারদের মর্ত্যে ভ্রমণ - অষ্টম সংখ্যা
নারদের মর্ত্যে ভ্রমণ - অষ্টম সংখ্যা
[ কনফারেন্স রুম - উপস্থিত দেবরাজ ইন্দ্র , অগ্নিদেব, ম্যাডাম সরস্বতী ,বেদব্যাস , ঋষি যাজ্ঞবল্ক , নারদ এবং অধীর বাবু- এজেন্ডার সিডিউল অনুযায়ী চতুর্থ পর্বের মানসিক স্বাস্থ্যের অসমাপ্ত রিপোর্টিং ]
[ কোন ভূমিকা না করে নারদ শুরু করলেন। চতুর্থ অধ্যায়ের পর থেকে। .... ]
নারদ: (ইন্দ্রের উদ্দেশে ) স্যার , এটাই বাকি ছিল মানুষের বায়োলজি আর সাইকোলজি বুঝার। এতো বোঝার থেকে " আমার কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে, জানিনা আজকে শেষ করতে পারবো কিনা ?" আজকের রিপোর্টিং সাধারণ ভাবে ব্যক্তিত্ব বলতে কি বুঝায় ?
(মূল প্রসঙ্গে না গিয়ে নারদ বলতে শুরু করলেন )
--দেহ আর মন যেন রাধা আর কৃষ্ণ। একে অপরকে ছাড়া থাকতেই পারেনা। একজন যদি দেহ হয় অন্যজন হয় মন , সে যদি মন হয় তাহলে অন্যজন হয় তার চেতনা।
প্রথমেই বলি এই মানুষ নামক প্রাণীটা বড়োই চালাক। ওই শরীরটা সৃষ্টিকর্তা কি ভাবে বানিয়েছেন তার রহস্যটা তো যে কোনদিন হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দেবে। খালি অহংকারের ডোজটা একটু কড়া করে দিয়েছেন বলে, কয়েকজন মানুষ ছাড়া আর কেউ বুঝে উঠতে পারেনি - "আসলে সে কে" ? চেষ্টা চলছে, কয়েকটা সংগঠন তো উঠে পরে লেগেছে , মানসিক অবস্থার উন্নতিকল্পে। আর যেদিন বুঝবে সেদিন এই স্বর্গের সর্বদিক থেকে উন্নত এক নতুন মর্ত্য গড়ে উঠবে।
সেখানে দেখবেন এই মর্তেই দেবতারা লটারিতে ফ্লাট কিনবে। আর আপনারা তো প্রথমেই ভুল করেছেন, বেদ কে ওদের হাতে তুলে দিয়ে। আর জার্মানির ওই ভদ্রলোক, মাক্সমুলার, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছ থেকে পয়সা খেয়ে ব্রাহ্মণদের আঁচলের তলায় দীর্ঘদিনের লুকোনো শক্তিকে ( হ্যা বেদ মানে জ্ঞান আর জ্ঞান মানে শক্তি, তাই শক্তিই বলব) মর্ত্যের খোলা আকাশের নিচে নিয়ে এলো।
ভাগ্যিস রজঃ আর তম গুনকে মর্ত্যের ব্যবসায়ীরা এমনভাবে প্রমোট করেছে যে, যত্ন করে মনের মধ্যে এমন কৃত্তিম অভাব সৃষ্টি করে দিয়েছে, আর এখানেই বোকা বানিয়েছে সাধারণ মানুষকে।
বাড়ির গিন্নি বলেন অমুক ব্রান্ডের সর্ষের তেল নিয়ে এসো , অমুক সাবানটা নিয়ে এসো, বর্তমান ফ্ল্যাটটা একটু ছোট হয়ে গেছে, অমুক জায়গায় ইনস্টলমেন্ট-এ ফ্লাট দিচ্ছে, একটা বুকিং করে দিও কিন্তু।
ছেলে বলছে তমুক ব্রান্ডের শার্ট টি ভি তে এড করছে বন্ধুরা সব কিনেছে , ব্র্যান্ডেড কোচিং সেন্টারে ভর্তি করে দাও, বন্ধুরা পড়ছে, কি সাংঘাতিক রেটিং।
মেয়ে বলছে সবাই স্মার্ট ফোন যেটা ব্যবহার করছে, সেটা নাকি মোবাইলের জগতে কৌলিন্য হারিয়েছে। অমুক ষ্টার যে মোবাইলটা হাতে নিয়ে টি ভি তে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, ওটাই চাই।
ওর দাম হয়তো সেই বাড়ির কর্তার মাসের ইনকামের দুই ডাবল। উদয়াস্ত পরিশ্রম করে তাকে হাসিল করার চেষ্টা করছে। এবার যারা পারছেনা তারা একে অপরকে ঠকিয়ে অর্থ সংগ্রহ করছে। যেমন মর্ত্যের নেতা মন্ত্রীরা। এবার যারা পারছেন না অথচ কামনা করছেন, সেখানেই আপনাদের এন্ডোক্রাইন সিস্টেমটা ভীষণ সক্রিয়। বোঁ বোঁ করে একগাদা অ্যাসিড ঢেলে দিচ্ছে হরমনের নামে। আর কি ! এবার দৌড়ও ডাক্তার -বৈদ্যের কাছে , " যেন একদল অশরীরী, মেরুদণ্ডের শিরার মধ্যে দিয়ে ঠিক মাথার উপরে গিয়ে কি যেন করে, তার পর থেকেই যেন সব জিনিস পত্র ছুড়বার ভীষণ ইচ্ছা করে।"
বাইরের খবর নেবার যে ইন্দ্রিয়গুলি মানুষকে দিয়েছেন, সেখান থেকে অপরিশুদ্ধ জল (খবর) তাদের মনে ঢুকে যাচ্ছে। প্রয়োজন -অপ্রয়োজন , পরিবেশ, পকেটের চিন্তা না করে সেটা হাসিল করার জন্য ইঁদুর দৌড়ে অংশগ্রহণ করছে। যারা হেরে যাচ্ছে , ওই যে ভিতরে গ্রন্থিগুলি দিয়েছেন সেখান থেকে তো সমানে হরমোন স্বাভাবিক নিয়মে বেরোচ্ছে। কিন্তু ওই পরাজয়ের বেদনা থেকে ধীরে ধীরে অপ্রয়োজনীয় হরমোন বেরিয়ে বিপজ্জনক মাত্রার উপর দিয়ে যাচ্ছে। সেটা কোথায় যাবে ? তাহলে কি দাড়ালো ? এক কথায় হোল শরীরে ইনপুট এক্সট্রা অ্যাসিড( থ্রু গ্লান্ড ) = আউটপুট "বর্ডার লাইন পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার। "
এ সবের পিছনে মূল কারন হিসাবে বলাযেতে পারে অনিশ্চয়তায় ভরা অর্থনীতি। এই অর্থনীতি পরিচালনা করছে রাজনীতি আর এই রাজনীতি প্রভাব ফেলছে সমাজনীতিতে, আর তার জন্য গ্রস সমস্যা গিয়ে পৌঁছাচ্ছে একবারে পরিবারের রান্নাঘরে। যেই না পরিবারে ঢুকল শুরু হয়ে অভাব অভিযোগের অপূর্ণতার চাপা অশান্তি।
এই পারিবারিক সমস্যা দেখে হাসছে পুঁজিপতি আর শাসক। তারা এখন নিশ্চিন্ত, কেউ তাদের দিকে আঙ্গুল তুলতে পারবে না। তারা নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। অথচ কি হওয়া উচিত ছিল ?
যেমন সংসারের নতুন অতিথির দায়িত্ব পরিবারের দায়িত্বশীল সদস্যরা নিয়ে নেয়। ঠিক তেমনি রাষ্ট্রের উচিত সন্তানসম নাগরিকদের লালন পালন করা। সেই থেকেই ঘুজবে আর্থিক অনিশ্চয়তা। অবশ্য আরেকটু সংযোজন আছে। তাতে করে পাল্টাবে সমাজ , পাল্টাবে পরিবার আর ওই গ্রন্থিগুলি তারা প্রয়োজন অতিরিক্ত অ্যাসিড সাপ্লাই করার ব্যাপারে একাধিক বার চিন্তা করবে। পৃথিবী এবার শান্ত হবে।
অগ্নিদেব : নারদকে একটু থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলো - এত ইনপুট কোথায় পেলেন ?
নারদ : আপনি তো আগেই জানতে পারতেন, আপনার সৌর্সদের পাল্টান।
অগ্নিদেব : কেন একথা বলছেন ?
\
নারদ : মর্ত্যে চায়ের দোকানে চা তো আগুন জ্বালিয়েই হয় আর ওই চায়ের দোকানেই লোকাল ব্রান্ডের দার্শনিক, ভবিষ্যদ্রষ্টারা, রাজনীতিজ্ঞ ,সেন্সর না করা খবরের রিপোর্টার সবই ওই খোঁচা খোঁচা দাড়ি ভর্তি মুখ, অবিনস্ত পোশাক, পায়ে হাওয়াই চটি , চোখে এক অদ্ভুত স্বপ্ন, যে স্বপ্ন কোনদিন পূরণ হয়নি কিন্তু স্বপ্ন দেখা তাদের থেমে থাকেনি। ওরাই তো খবর জোটায়। বিজ্ঞাপন পাবার বাধ্যবাধকতা নেই তাই নির্ভেজাল খবর।
মর্ত্যে খবরের কাগজওয়ালারা, যত না খবর বিক্রি করে যা ইনকাম করে তার থেকে বেশি ইনকাম করে সঠিক জায়গায় খবর বেঁচে। সাধারণমানুষ তার খবরই রাখেনা। প্রত্যক্ষদর্শী হওয়া সত্ত্বেও পরেরদিনের সংবাদপত্রে প্রত্যক্ষ করতে পারেনা, যে গতকাল সে এক বীভৎস ঘটনার সাক্ষী ছিল।
ইন্দ্র : আপনারা সব চায়ের দোকানের কথা বলে চায়ের পিপাসা বাড়িয়ে দিলেন। চলুন সবাই মিলে চা পান করে আসি।
ক্রমশঃ
মন্তব্যসমূহ