নারদের মর্ত্য ভ্রমণ -তৃতীয় সংখ্যা

 

নারদের মর্ত্য ভ্রমণ -তৃতীয় সংখ্যা 

তৃতীয় দিন 

[ দেবরাজ ইন্দ্রের কনফারেন্স রুম-  দেওয়ালে বিরাট বিরাট ম্যাপ , বিশ্ব - ব্রম্মান্ডের, কোন কোন গ্রহতে প্রজেক্ট হয়ে  গেছে আর অন্য্  কোন গ্রহ গুলিতে কবে কবে হবে তার রূপরেখা ।  কোন কোন এজেন্সী গ্রহগুলিতে সার্ভে করতে গেছে আর কবে রিপোর্ট জমা দেবে তার একটা লিস্ট। মুখোমুখি ইন্দ্র আর নারদ আর ডান  পাশে ম্যাডাম স্বরসতী, তার পাশে বেদব্যাস , বাঁ পাশে ম্যাডাম লক্ষ্মী আর  মিঃ অগ্নিদেব তার পরে স্টেনোগ্রাফার অধীরবাবু। ডিম্ আকৃতির টেবিলে প্রত্যেকের পাশে পানীয়র গ্লাস আর ল্যাপটপ, ইন্দ্রের সামনে এজেন্ডা আর নারদের দেওয়া ব্রিফিংটা খোলা, এই মাত্র একজন দ্বাররক্ষী এজেন্ডা আর ব্রিফ রিপোর্টের প্রতিলিপি সবার টেবিলে দিয়ে গেল  ]

ইন্দ্র : তাহলে মিটিংটা শুরু হোক। 

[সবাই বলে উঠল yes স্যার। ] 

লক্ষ্মী ম্যাডাম : ইন্দ্রদা আমার ফাঙ্কশন তো অনেক পরে। আপনারা সবাই এব্যাপারে একমত হবেন তারপর ড্রাফট রিপোর্ট হবে , তার পর প্রজেক্ট বানাবেন তারপর  উপরতলায় গিয়ে approved হয়ে আসবে তারপর আমার কাজ  ]

মিঃ অগ্নিদেব : হ্যাঁ ! একদম ঠিক, ইন্দ্র তুমি ওকে ছেড়ে দাও ও আবার মেয়েকে ফিনান্সিয়াল একাউন্টিং বোঝাবে। আরে! নেপোটিজমের শুরুতো এখান  থেকেই। পরবর্তী ফিনান্স মিনিস্টার  মেয়েকে করবে। যাইহোক, আমার চেহারাটা সাংঘাতিক হলে কি হবে, আমার মুখটা কিন্তু বেশ পাতলা। আচ্ছা! লক্ষ্মী একটু জেনে আমাকে বলবে ওই যে নারদ যেখান থেকে এলো সেখানটার  বাজেটটা কে  বানায় আর যে অর্থনীতি পরিচালনা  করে, তাকে কে এসব শিখিয়েছে ?

লক্ষ্মী ম্যাডাম : আরে অগ্নিদা, আপনি আবার এসব কি করে জানলেন ?

মিঃ অগ্নিদেব : তুমি কি বাচ্চাদের মতো প্রশ্ন করলে ! যুগ যুগান্ত থেকে যত পূজা, যাগযজ্ঞ হয় তাতে তো আমাকেই ব্রম্মা বানায় ওরা, আর গ্যাস খেয়ে সব দেবতাদের আমিই তো যজ্ঞে বলে কয়ে নিয়ে আসি, তা কি তুমি জানোনা ?

লক্ষ্মী ম্যাডাম : আবার তোমায় জিজ্ঞাসা করি, কে কি বাজেট করলো তাতে তোমার কি ?

মিঃ অগ্নিদেব : হায় ! কে যে তোমাকে দায়িত্ব দিল এই পদটার, অবশ্য কেউ না জানলে তোমার বাবাতো জানে।  তোমাকে পরিস্কার বলি, আবার সেই যজ্ঞ , সেখানে যাঁরা সব সর্বসান্ত হয়েছে , সেখানেও আমাকে সবাই প্রথমেই ডাকে । 

লক্ষ্মী ম্যাডাম : এই মাত্র অগ্নিদা তোমার প্রথম প্রশ্নের কোয়ারিটা পাঠিয়েছিলাম , যা উত্তর এসেছে তাই তোমায় জানাই।  আমাদের মতো ওখানেও আউট সৌর্সইং শুরু হয়ে গেছে, তবে একটু অন্যরকমের।  কিছু ব্যবসায়ী (তাদের শিল্পপতি বলবোনা ) তাদের মনোরঞ্জনের জন্য সেইসব  তৈয়ারি হয়েছে  তাদের মতো করে-এটাই খবর । 

ইন্দ্র : সাইট টক্ করতে করতে অনেক সময় চলে গেল। মিঃ নারদ, আপনার এজেন্ডার প্রথম পয়েন্ট স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ।  বলুন কি অবস্থা।

নারদ : মা ষষ্ঠীর দয়ায় যে ভাবে তিনি করুণা করেছেন তাতে তো মানুষের সুনামি হয়ে গেছে। তার সাথে আছে দূরদৃষ্টিহীন পরিকল্পনা তাতে চিকিৎসা ব্যবস্থা একদম ভেঙ্গে পড়েছে। এটা হচ্ছে সামগ্রিক রূপ। আমাদের এজেন্ডায় স্বাস্থ্যকে দুইভাগে ভাগ করা আছে।  

এজেন্ডা- স্বাস্থ্য বিষয়ক 

১।  স্থুল শরীরের স্বাস্থ্য অর্থাৎ অন্ন ময় কোষ 

১.১ ।   স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবা কেন্দ্র 

১.২।    ডাক্তার এবং নার্স  সংখ্যা কত ?

১.৩।  একটা ডাক্তার পিছু রুগী কয় জন অর্থাৎ ratio কি ?

১.৪ ।  আন্তর্জাতিক মানচিত্রে বেদভূমির চেহারা কি ?

২।  সুক্ষ শরীরের স্বাস্থ্য অর্থাৎ মনময় কোষ

 ২.১ ।   স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবা কেন্দ্র 

২.২।    ডাক্তার এবং নার্স  সংখ্যা কত ?  

২.৩।  একটা ডাক্তার পিছু রুগী কয় জন অর্থাৎ ratio কি ?

২.৪ ।  আন্তর্জাতিক মানচিত্রে বেদভূমির চেহারা কি ?

রিপোর্ট : স্বাস্থ্য 

১ .১ ।   স্বাস্থ্য সংক্রান্ত পরিষেবা কেন্দ্র = ৫৪২ ( ২০২০ সাল )

 ১.১.১। পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষা কেন্দ্র =৬৪ (২০২০ সাল )

১.২।   গ্রাজুয়েট ডাক্তার   = ১২,৫৫,৭৮৬ অ্যালোপ্যাথি ডাক্তার

 ১.২.১।  স্পেলাশিস্ট ডাক্তার=৩,৭১,৮৭০ অ্যালোপ্যাথি ডাক্তার 

১.২.২। রেজিস্টার্ড নার্সের সংখ্যা =২১,৫১,৮৫০ জন 

১.২.৩।  অক্সিলারি নার্স =    ৮,৯২,৮২৯ জন 

১.৩।     ডাক্তার আর জনসংখ্যার রেশিও  = ১: ১৩৪৩  (১৩৪৩ জন             মানুষ পিছু ১ জন ডাক্তার )

১.৪।  একজন ডাক্তার পিছু নার্সের রেশিও  = ১ : ০.১ 

১.৫।  নার্স এবং পেসেন্ট রেশিও - ১: ৬৫৮

আন্তর্জাতিক মানচিত্রে বেদভূমির চেহারা 

১.    অস্ট্রেলিয়া = ৩.৩: ১০০০ (প্রতি ১০০০ জন মানুষের জন্য  ৩.৩জন ডাক্তার)

২.    ব্রাজিল = ১.৮: ১০০০

৩.    চায়না = ১.৪৯ : ১০০০

৪.    ফ্রান্স = ৩.২২:১০০0

৫.    জার্মানি = ৪.১২:১০০০

৬.    রাশিয়া =৩.৩৬:১০০০

৭.    আমেরিকা =২.৫:১০০০

৮.    আফগানিস্তান =০.৩০:১০০0

৯.    বাংলাদেশ =০.৩৮:১০০০

১০.    পাকিস্তান = ০.৮০:১০০0 

১১.    ইন্ডিয়া  = ০.৭৭:১০০০ 

৩০.১২.২০১৭ সালের ২২তম ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ এন্ড নিউরোমেডিসিনের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের সময়ের রিপোর্ট অনুযায়ী  বেদ ভূমি ২০২২ সালে মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থ্যা  এক বিপজ্জনক মহামারীর আকার ধারণ করবে এই সংখ্যাটি জাপানের মোট জনসংখ্যার থেকে বেশি হবে। বর্তমানে প্রায় ৫০০০ মনোরোগ বিশেষজ্ঞ আর ২০০০ ক্লিনিকাল মনোবিজ্ঞানী আছে।  

[ এমন সময় দেবরাজ ইন্দ্রের রথের সারথি এসে খবর দিয়ে গেলেন ভগবান বিষ্ণু এখনিই দেখা করতে বলেছেন ]

ক্রমশ:


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়