নারদের মর্ত্যে ভ্রমণ - পঞ্চম সংখ্যা

 

নারদের  মর্ত্যে ভ্রমণ - পঞ্চম সংখ্যা 

পঞ্চম দিন

 

[ স্বর্গের বাগানের পূর্ব দিকে  কৈলাশ পর্বত  আকাশকে  স্পর্শ করার  নীরব স্পর্ধা  নিয়ে বৃদ্ধ সাধুর ন্যায় দঁড়িয়ে আছে।  ভোরের আকাশে  সূর্যদেব প্রতিদিনের মতো তার আলোর ছটা তার অফুরন্ত রশ্মির ভান্ডার থেকে  একটু একটু করে সন্তর্পনে বরফের   চূড়াতে ছড়িয়ে দিচ্ছে , যেন  এক শিল্পীর পরিণত  হাতে  ক্যানভাসে রঙের মূর্ছনার মতো । 

মানস  সরোবরের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বাতাস যেন কৈলাসের বরফ গায়ে মেখে  মৃদুমন্দ  তালে তার উপস্থিতি ঘোষণা করছে আর সাথে নিয়ে এসেছে বাগানের ফুটে উঠা ফুলগুলির সম্মিলিত গন্ধের সুরভী। বাতাসের প্রেরণায় ফুলের গাছগুলি আনন্দে উদ্বেল হয়ে একে অন্যের গায়ে ঢলে পড়ছে আর ফুলের মধুর পিপাসী মৌমাছিরা বসতে না পেরে তিরিং বিরিং করে উড়ে বেড়াচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে  কবে এদের খেলা শেষ হবে। 

ভোরের আলোর সাথে সাথে পাখিদেরও  কর্ম ব্যস্ততা যেন বেড়ে যায়।  ওদের মধ্যে যারা একটু কম আবেগপ্রবণ তাদের কাছে আলো ফুটলেই মনে হয় ফ্যাক্টরির সাইরেন বেজে গেছে তখন তারা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে নিরুদ্দেশ যাত্রায় বের  হয়ে যায় উড়তে উড়তে তারা আকাশে বিন্দু থেকে বিন্দুতর হয়ে আকাশেই যেন মিলিয়ে যায়। আবার সন্ধ্যে নামার আগে ঠিক আগের মতো বাড়ি ফিরে আসে।  নিত্য দিন তাদের এই আসা যাবার খেলা চলতেই থাকে। আর আবেগ প্রবন পাখিরা বেশি দূরে কোথাও যায়না, ভোরের আলো ফোটার আগে থেকে বিচিত্র সুরের ঐকতান যেন   ঘোষণা করে সব প্রাণী আর নিদ্রা নয় সকাল তোমাদের  কাছে নব জীবনের বার্তা নিয়ে  এসেছে ।  সেই সুরকে অনুসরণ করে বার্তা পাবার আশায় প্রাণীরা সারাটা দিন পার করে দেয় , কেউ পায়, কেউ বা পায়না , ক্লান্ত দেহ মন বিশ্রাম চায় আবার পরের দিন আশায় বুক বেঁধে এগিয়ে যায় জীবন যুদ্ধে।  এ যেন  তৈলাক্ত বাঁশের উপর নামা উঠার খেলা, একমাত্র চরম মুহূর্তই মুক্তি পাবার রাস্তা। 

সরোবরে একদল রাজঁহাস পুচ্ছ উঁচিয়ে, গ্রীবা  নাড়িয়ে পরস্পরের সাথে কি যেন বলতে বলতে উদ্ধত ভঙ্গিতে মাঝে মাঝে ডানার ঝাপটা মারতে মারতে  ধীর গতিতে কেলি করতে করতে এগিয়ে যাচ্ছে। ]

[ কুটিরের  সামনে নারদ এই ছবি দেখে আর ঘরে থাকতে পারলেন না,  তিনি একতারা নিয়ে "মধুকৈটভ  বিধ্বংসী" বলে দেবী বন্দনার গান গাইতে গাইতে সরোবরের পাশ দিয়ে  হাটতে লাগলেন। 

খানিকটা যাবার পর, তিনি শুনতে পেলেন কে যেন উদাত্ত কন্ঠে  গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ করছেন।  কাছে গিয়ে  যা দেখলেন, তা দেখে নারদ মশাইয়ে চক্ষু চরক গাছ। দেখলেন, মন্ত্র-তন্ত্র থেকে কয়েকশ যোজন দূরে থাকা দেবরাজ ইন্দ্র মন্ত্র পাঠ করছেন। 

 এখন নারদ মনে মনে ভাবলেন, নন্দীর কাছ থেকে তিনি ঠিকই শুনেছিলেন যে সব দেবতাকে রিফ্রেশার কোর্স করতেই হবে এবং তার আগে মনকে রিফ্রেশ করার জন্য মন্ত্র পড়াটা কম্পালসরি টাস্ক। অবশ্য খবর দেওয়ার জন্য নন্দী-ভৃঙ্গিকে মাঝে মাঝে গাঁজার পুরিয়া দিতে হয়। ওই  গুলো অবশ্য নারকোটিকস ডিপার্টমেন্টের সিল  করা মাল থেকে ইঁদুর নিয়ে এসে স্বর্গে সাপ্লাই দেয় আর   তার পরিবর্তে শত চেষ্টা করে মর্ত্যের মানুষরা যাতে তাদের মারতে না পারে, সেই  ব্যাবস্থা দেবতারা করে দেন।   

মর্ত্যের ঢেউ স্বর্গে এসে পড়েছে ,ব্রাহ্মণ্যবাদ  মর্ত্যে ধুয়ে মুছে সাফ হওয়ার মুখে , ধর্মকে রাজনীতির সাথে ককটেল করে বাজারে বেঁচে দিচ্ছে , যারা এতদিন এই সব ভেদাভেদ নিয়ে যাঁরা  সোচ্চার ছিল, তাদের দেখানো পথকে ন্যাপথালিন দিয়ে বাস্কে বন্দি করে রেখেছে। স্বর্গের দেবতাদের আজ খুব একটা পাত্তা মর্ত্যের মানুষেরা দেননা ।

 আরও সব খবর বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে যে, মর্ত্যের সাধারণ মানুষকে আর মরতে দেওয়া যাবেনা। কেননা এটাতো অস্বীকার করে লাভ নেই এই গৃহস্থ্য যদি না থাকতো তাহলে  আগেকার দিনের ঋষি-মুনি,সন্ন্যাসি ,বৌদ্ধভিক্ষু , দেবতা আর আজকের দিনের নেতা, মন্ত্রী, পুঁজিপতিরা কি বেঁচে থাকতেন ? বলতে কষ্ট নেই ,  এই শ্রেণীর প্রাণী আর দেবতারা একই পংক্তিতে পরে , তাদের  একটাই পরিচয়  শোষক আর  পরজীবী।  সাধারণ মানুষেরা উদয়াস্ত পরিশ্রম করছে , জেনারেশন তৈরি করার জন্য তাদের সন্তানদের লেখাপড়া শিখাচ্ছে তার পর তারা উপাৰ্জন করছে আর পরজীবীরা  বিভিন্ন উপায়ে তাদের কাছ থেকে ছলে বলে সব কিছু নিয়ে তাদের  অস্তিত্ত্ব বজায় রেখে চলছে । 

নারদ ভাবলো , এইসব খবর তো 'আমার দেওয়ার কথা ছিল' , বোধ হয় ভগবান, তিনি তো অন্তর্যামী, সবই বুঝেতে পারেন, যাইহোক , এখুনি বেরোতে হবে , মর্ত্যের খাবার দাবার খেয়ে একটু কনস্টিপেশন হয়ে গেছে , সময় লাগছে কর্মফল বিসর্জন দিতে  ]

ক্রমশঃ 

মন্তব্যসমূহ

My new blog বলেছেন…
Ha ha besh ভালই হচ্ছে। আরো একটু ইন্টারেস্টিং করো।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়