মহাভারতের রাজনীতি ও নারীদের নীরব বলিদান-চতুর্থ পর্ব

 

মহাভারতের রাজনীতি ও নারীদের নীরব বলিদান-চতুর্থ পর্ব 

The untold story of the Mahabharata (4)

( মহাভারতের "যৌন নৈতিকতা")

প্রিয় অম্বিকা ,

অনন্ত কালের আহবানে বিচিত্রবীর্য্য চলে যাওয়াতে রাজসিংহাসনের উত্তারিধকারীর প্রশ্নে যে অপূরণীয় শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছিল, তাকে পূরণের জন্য রাজমাতা হিসাবে আমার একমাত্র করণীয় ছিল,  যে বাৎসল্য প্রেমে বঞ্চিত আমার দুই কন্যাসম পুত্রবধূদের জঠরে বীজ  উৎপাদন করানোর আশু ব্যবস্থা করার। তাই আমি তোমাদের  সাহায্য প্রার্থী হয়েছিলাম। তুমি যদিও আমার কথা রেখেছো কিন্তু তার সাথে যৌন নৈতিকতার  প্রশ্ন তুলে ধরেছো।  এ সম্পর্কে আমার অবস্থান তোমাকে স্পষ্ট করছি। 

যে স্বপ্নের রাজপুরুষের ছবিটা  তোমার মানসপটে এঁকে ছিলে যার সাথে একাত্ম হয়ে তুমি  হস্তিনাপুরের নব ইতিহাস রচনা করবে বলে ভেবেছিলে ; কিন্তু তার পরিবর্তে যখন  বাস্তবে কোন এক অতীতের পাতা থেকে খসে পড়া মনুষ্যরূপী প্রাগতিহাসিক  জীব তোমাকে আলিঙ্গন শুধু  নয়,  পুত্র উৎপাদনে তোমার নারী জীবনের একান্ত গোপন অন্দরমহলের আতিথিয়তা গ্রহণ করবে, আর তোমার জঠরে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করবে   - সেটা তোমার ভাবনার  অতীত ছিল। 

জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখ, ওই যতদূর তোমার দৃষ্টি যায়, তারও ওপারে , রাষ্ট্রের সেই সব  মানুষের  দিকে, কেউ বা বুনছে তাঁত , কেউবা ধরছে মাছ, কেউবা করছে চাষাবাদ, অতন্দ্র প্রহরীর মতো দিনরাত সৈনিক পাহারা দিচ্ছে আর সমগ্র দেশের মানুষ তাই  নিশ্চিন্তে নিদ্রা যাচ্ছে। এনাদের সম্মিলিত প্রচেস্টায় মজবুত হচ্ছে রাষ্ট্রের বুনিয়াদ। দেশ হচ্ছে বৃক্ষের মতো আর তার শিকড় হচ্ছে রাজা। রাজাই যদি না থাকে তাহলে এই রাজ্যটাই অচল। আর এই রাজকার্য চালাবার জন্যই তো নিয়ম কানুন। এখন প্রশ্ন কর নিজেকে নিয়মের জন্য রাষ্ট্র না রাষ্ট্রের জন্য নিয়ম। 
 
নীতি কি ? নীতি হচ্ছে 'নী' ধাতু থেকে উৎপন্ন যার অর্থ হচ্ছে টেনে নিয়ে যাওয়া উত্তরণের পথে , নির্দ্দিষ্ট লক্ষ্যে পূরণের অভিমুখে । অন্যদিকে স্থবিরতা মানে কালের নিয়মে হারিয়ে যাওয়া। যৌন নৈতিকতাকে আমরা কোথায় পাই?  নীতি দর্শনের একটি শাখায় তার বর্ণনা করা আছে। নীতিবোধের জন্ম কোন বইয়ের পাতায় নয়। সামাজিক,সাংস্কৃতিক এবং দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গির পারস্পরিক সম্পর্কের পরিপেক্ষিতে  এই বোধের জন্ম হয়। এই বোধ বা অনুভূতির জন্ম হয় বাস্তবের পটভূমিতে। ব্যক্তিগত পছন্দের  অন্যতম ভিত্তি নৈতিকতা। ভিত্তিবাদ জ্ঞানের এক দার্শনিক তত্ত্ব এবং সেই তত্ত্ব নির্ভর করে বিশ্বাসের উপর।এই বিশ্বাসকে যদি ধর্মের আখ্যা না দেওয়া যায় তাহলে পরের কাজটা অসম্পূর্ন থেকে যাবে। 

'ধৃ' ধাতুর সাথে 'মন' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে ধর্ম শব্দটি গঠিত হয়েছে। 'ধৃ'ধাতুর অর্থ ধারণ করা। এর দুই রকমের অর্থ হয়, যেমন যে মানুষ ধর্মকে ধারণ করে বেঁচে থাকে আবার ধর্ম তাকে ধারণ করে বেঁচে থাকে অর্থাৎ যে ধর্ম চারণ করে।বেদ,  স্মৃতি,সদাচর - এই তিনটি ধর্মের লক্ষণ এবং চতুর্থটি হল প্রয়োজন। 

এত কিছুর অবতারণা এই কারনে করতে হল যে, বৃহত্তর স্বার্থে ক্ষুদ্রতর স্বার্থ বিসর্জন- এটাই ধর্ম। আমাকে এই ধর্মই পালন করতে হোয়েছে এবং আগামী দিনে বারংবার  আমাকে এই পথেই হাটতে হবে। এটাই আপৎকালীন ধর্ম পালন, এটাই রাজধর্ম আর এই নীতিই হচ্ছে রাজনীতি। আমরা নারীরা এই যূপকাষ্ঠে বার বার বলি হবো কখন প্রয়োজনের নামে কখন ধর্মের নামে। ইতিহাস তার সাক্ষ্য বহন করে চলবে । 

ইতি - 

মহারানী সত্যবতী।

  ক্রমশঃ   





মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৪২) নারীর একাল ও সেকাল