(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )
(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন)
যখন মানুষ তার সৃষ্টির ইতিহাসকে অস্বীকার করতে উদ্যত হয় বিভাজনকে আঁকড়ে ধরে , তখন রবীন্দ্রচর্চা ভীষণ প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে।
রবীন্দ্রসৃষ্টি নিয়ে একটি কোলাজ
"ভুবনেশ্বর হে, মোচন কর' বন্ধন সব মোচন কর' হে " - ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনাকে নৈবিদ্য সাজিয়ে কবির মিনতি। এই কবিতায় কবি, মোহ, কামনা বাসনা আর অহংকারের প্রাচীর দিয়ে ঘেরা জীবনের এই অন্ধকার থেকে মুক্তির আলোতে উত্তরণের জন্য মানব হৃদয়ের আকুতি চিরন্তন।
* * *
" আলোয় আলোকময় করে হে এলে আলোর আলো। "
জ্ঞানের আলোকবর্তিকায় যখন অন্তর আলোকিত, তখন কবির কাছে এই জগৎটা প্রেমময়, তাই তিনি তার গানে, কবিতায় উচ্ছাসিত হয়ে সেই কথাই বলে উঠেছেন।
* * *" আমার জ্বলেনি আলো অন্ধকারে"
যে সুর আনন্দে বিষাদে একই গন্তব্য পথে গিয়ে হৃদয়ে আন্দোলিত হয়, আকুল হয়ে আত্মিক আহবান জানায় সেই সর্বময় কর্তাকে। এই আধ্যাত্মিকতা, প্রেম, এবং মানবিক ব্যাকুলতাকে একত্রে কথায় রূপ দিয়েছেন।
* * *
"মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল-মাঝে"
অখণ্ডের সাথে খণ্ডিতের আকর্ষণ চিরন্তন। এক গভীর আত্মজিজ্ঞাসা, এক অন্তর্দৃষ্টি, যেখানে মানুষ ঈশ্বরের সাথে এক গভীর নির্ভীক সম্পর্কের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করে।
* * *
" দিবস রজনী, আমি যেন কার আশায় আশায় থাকি"
এ এক অজানা কারো জন্য গভীর অন্তর্লীন ভালোবাসা ও প্রতীক্ষার ব্যাকুলতা, যা মানবমনের এক অতল গভীর অনুভূতির প্রকাশ। এ এক প্রেম, যা বাস্তবতাকে অতিক্রম করে, স্বপ্ন, অনুভব, প্রত্যাশা আর অন্তর্যামের মাঝে চলতে থাকে।
* * *
"এই উদাসী হাওয়ার পথে পথে মুকুলগুলি ঝরে"
বহুদূর থেকে এক অপার্থিব প্রেমের কাঙাল প্রেমিক তার কাল্পনিক প্রেমের ডালি সাজিয়ে নিবেদন করছেন তার প্রেমাস্পদকে। আসলে তারা এই প্রকৃতিরই সন্তান, তাই প্রকৃতির সব ক্রিয়ার সাথে তাদের অনুভূতি একাত্ম হয়ে ফুটে উঠেছে এই গানে।
* * *
"আনমনা গো, আনমনা,
তোমার কাছে আমার বাণীর মালাখানি আনব না"।
এতো গান নয়, এ যেন এক চিত্রপট, যেখানে রবি কবি আশা-নিরাশা, প্রেম-বিরহ , দিন-রাত্রিকে একটা পটে চিত্রিত করে নিখিলের সাথে অন্তরের মেল বন্ধন ঘটিয়ে শ্রোতাকে সেই পথের পথিক করে তোলে।
* * *
"প্রথম আদি তব শক্তি--আদি পরমোজ্জ্বল জ্যোতি তোমারি হে"
এই গানটি এক ধরণের দার্শনিক ও আধ্যাত্মিক স্তবগীতি, যেখানে রবীন্দ্রনাথ সৃষ্টির আদি শক্তি, সর্বব্যাপী চেতনাশক্তি ও কাব্যিক অনুপ্রেরণার উৎসকে বন্দনা করেছেন। তিনি এই সত্ত্বাকে আলোক, আনন্দ, কাব্য ও প্রাণের উৎস রূপে কল্পনা করেছেন। গানটি গভীর ভাবজগৎ ও অতীন্দ্রিয় চেতনার প্রতিফলন। এই সর্বব্যাপী চেতনা দাবি করে দেহ মনকে এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে বাঁধতে।
* * *
ছায়া ঘনাইছে বনে বনে, গগনে গগনে ডাকে দেয়া"।
বাইরে যখন ছায়া ঘনিয়েছে তখন দৃষ্টি তখন নিবদ্ধ হচ্ছে অন্তরে। যেখানে আছে প্রেমের মধুর স্মৃতি যে, বর্ষার ছন্দের সাথে তাল মিলিয়ে কোন এক গোপন গহ্বর কে বেরিয়ে এসে দেহ মনকে আলোড়িত করছে। শুধু কি তাই ? সে একটা সেতু বন্ধন রচনা করেছে এক মানসিক পরিভ্রমণের।
এ যেন এক ধরনের বিমূর্ত, মনস্তাত্ত্বিক প্রেম ও আবেগঘন প্রতিচ্ছবি। এটি প্রকৃতি ও অন্তর্লোকের সংলাপে এক রহস্যময়, লুকানো ভালোবাসার ইঙ্গিত দেয়।
* * *
" জীবনে আমার যত আনন্দ পেয়েছি দিবস-রাত"
জীবনের পার্থিব বস্তুর সাথে চলতে গিয়ে কবি কখনো ভুলতে পারেননি সবার পশ্চাতে তার অদৃশ্য উপস্থিতিকে , সেই অনন্তরূপী চৈতন্যেই তো আসল চালিকা শক্তি। কবি ভীষণ সচেতন ভাবে পরমেশ্বর আর তার সৃষ্টির সাথে মেল বন্ধন ঘটিয়েছেন।
* * *
ক্রমশঃ
ব্লগার -রবীন মজুমদার
তারিখ -০৭/০৫/২৫

মন্তব্যসমূহ