নারদের মর্ত্যে ভ্রমণের পাক্ষিক বিশ্লেষেণ - দ্বিতীয় সংখ্যা Fortnight Analysis - Indian Education System (2nd part)

নারদের মর্ত্যে ভ্রমণের পাক্ষিক বিশ্লেষেণ  - দ্বিতীয় সংখ্যা 

Fortnight Analysis -   Indian Education System (2nd part)


 { স্বর্গের কনফারেন্স রুম  - দেবরাজ ইন্দ্র, মিঃ নারদ, মিঃ অগ্নিদেব, ম্যাডাম  সরস্বতী   , কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন  বেদব্যাস ,শ্রী শ্রী গনেশ, লক্ষ্মী ম্যাডাম , বরুন দেব,  ঋষি যাজ্ঞবল্ক , ঋষি বৈশম্পায়ন , জনক রাজা, অষ্টবক্র মুনি, ঋষি জৈমিনি, ঋষি পৈলা, ঋষি সুমন্ত, গার্গী , রাজা জনমেজয়   উপস্থিত }

(গত সংখ্যায় সমস্যার সমাধানকল্পে সঠিক সিদ্ধান্ত নেবার  লক্ষ্য পূরণের জন্য চিন্তা  ভাবনার  বিশৃঙ্খলাকে  শৃঙ্খলিত করার বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি গ্রহণ করার   প্রস্তুতি পর্ব  ) 

কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসদেব - যুগ যুগ ধরে মনজগৎকে একচেটিয়া ভাবে চিন্তা ভাবনা দখল  করে বসে আছে এবং তাকে  নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বুদ্ধি মশাই  আছেন কিন্তু চিন্তা নামক শিশুর   অবাধ্যতার শেষ নেই।  প্রতিমুহূর্তে বুদ্ধি নামক অভিবাবকের অনমনস্কতার সুযোগ নিয়ে  মনের জগতকে  তার খেলার মাঠ বানিয়ে ফেলেছে নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা না  করে ।  এটা চিন্তার স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। এর তাৎক্ষণিক এবং সুদূর প্রসারী ফলভোগ করছে মানুষের স্থুল শরীর। তার কারন হিসাবে যে মনোজগতের বা সুক্ষ শরীরের আবাসিক যে চিন্তা  সে তো বুদ্ধির নিয়ন্ত্রনের শিথিলতার চূড়ান্ত সুযোগ নিয়ে  অশনি সংকেত ডেকে নিয়ে আসছে। তার ফল স্বরূপ মানুষের  ব্লাডপ্রেশার মাপার যন্ত্রের পারদটা  কখন  যে ঊর্ধ্বগামী হয়ে উঠছে আবার কখনো সুগার মাপার রিপোর্টটা সংকেত দিচ্ছে যে বিপদ সীমার উপর দিয়ে সুগার কিন্তু হাটতে শুরু করেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। 

অগণিত জলরাশি এ'পার জানেনা তার ও'পারে কি আছে আর জলরাশিও জানেনা তার অন্দরের বাসিন্দা কারা কি তাদের পরিচয়, সে কি শত্রু ? না মিত্র  ? ইত্যাদি ।  না জানাই হচ্ছে ভ্রম  ! আর চিন্তার যাত্রা শুরু সেই না জানাকে সঙ্গে নিয়ে সেই অচিনপুরের পথে ।  প্রতি পদে পদে যে ভ্রান্তি তাও তো  সে জানেনা, কেননা ভুল কি, তাকে চিহ্নিত করতে গেলেও  তো বুদ্ধির পরামর্শ নিতে হবে আর বুদ্ধিকে নিতে হবে জ্ঞানের কাছ থেকে আর জ্ঞানকে নিতে হবে শিক্ষার কাছ থেকে , এটাই বিশ্ব সংসারের  hierarchy বা শ্রেণীবিন্যাস। চিন্তা সে তো সবার  অজান্তে পাড়ি দিয়েছে সেই অজানা পথের সন্ধানে শুধু মাত্র ইন্দ্রিয় থেকে গ্রহণ করা অপরীক্ষিত সংবাদের উপসংহার খুঁজতে। 

সাগর যাত্রার  শুরুতে যে আকারটা ছিল ক্ষুদ্র একটি  প্রশ্ন , যার উত্তর খুঁজতে গিয়ে চিন্তার সাগরটা তোলপাড় হয়ে গেল আর তার থেকে বেরিয়ে এলো পর্বতের মূষিক প্রসবের মতো একটা হেয়ালি উত্তর। শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে এই  সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী দুষ্ট মনের চিন্তাকে বাঁধনের শিকল পড়ানোর  যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল  তা আজও তা একই গতিতে বিদ্যমান, স্বার্থকতা এখনো বহুদূর । শুধুমাত্র সময়ের প্রয়োজনে পূর্বেকার সামগ্রিক ব্যাপ্তিকে সংক্ষেপ করে কম্পার্টমেন্টাল  করা হয়েছে। 

বর্তমানে  অধিকাংশ দেশে  পুঁজিবাদী সমাজব্যবস্থা কায়েম রয়েছে।  এই সমাজব্যবস্থা থেকে উদ্ভূত বহু সমস্যা নিত্য নতুন তৈরী হচ্ছে আর চূড়ান্ত গতিশীল সমাজ তার সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় সূত্র আবিষ্কার করে যাচ্ছে পণ্য উৎপাদনের মতো।  সেই আবিষ্কারের মূল কারিগর হচ্ছে মানুষ আর তার মননশীলতা । জন্ম লগ্ন থেকে যে তাবিচ কুণ্ডল নিয়ে সে  জন্মেছে সেটাই  তার স্বাভাবিকতা কিন্তু পরিবেশের সাথে মানানসই হতে গেলে তাকে গতিশীল এবং বস্তুধর্মের নিয়ম অর্থাৎ পরিবর্তনশীলতাকে   অবশ্যই চলার পথের পাথেয় করতেই হবে। 

সেই মানুষ যখন কর্মময় জীবনে প্রবেশ করে উৎপাদন ব্যবস্থার শরিক হয় তখন তাকে প্রতিনিয়ত প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে হয় এবং  সমস্যা জর্জরিত, মুনাফা নির্ভর অর্থনীতিতে টিকে থাকার জন্য এক বিশেষ পদ্ধতিকে অনুসরণ করে সমস্যার আশু সমাধান করে এগিয়ে যেতে হয়। সেখানেই যাকে আশ্রয় করে মানুষ সেই কার্য্য সম্পাদন করে তার মূল উপাদান চিন্তা আর ইপ্সিত বস্তুকে অর্জন  হচ্ছে তা হচ্ছে  চিন্তনের ফসল। চিন্তার সুদীর্ঘ ইতিহাসের সাথে মানুষ  পরিচিত তাই বিশৃঙ্খলাকে এড়াতে চিন্তাকে শিকল পড়ানোই হচ্ছে এই সিক্স হাট চিন্তন পদ্ধতি। এই পদ্ধতিকে ধার করে শিক্ষার ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধানে ব্রতী হতে হবে। 

এই ব্যস্ত পৃথিবীতে বর্তমানে সময়ের মূল্য অপরিসীম। মূল বিষয়কে কেন্দ্র করে বহুবিধ সহযোগী পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত উপ বিষয় থাকে। সেই উপ বিষয়ের বিচার বিশ্লেষনের    আলোচনা করার ক্ষেত্রে যাঁরা অংশ গ্রহণ করবেন তাদের  আগে থেকেই  ডেকোরাম বা সাজসজ্জা সম্পর্কিত বিবিধ জ্ঞান  এবং সীমারেখা সম্পর্কে সচেতনকরা হয়। সে ব্যাপারে প্রত্যেক টিমের  লিডার  দায়িত্ব নিয়ে সে কাজটা সম্পাদন করেন। এই পদ্ধতিতে আলোচনা করলে গতানুগতিক অপ্রাসঙ্গিক আলোচনার কোন জায়গা থাকে না । তার অবিশ্যম্ভাবী  ফল হিসাবে মিটিঙের সময় অনেক কম লাগে এবং এন্ড অফ দ্য সেশন সেটা  উৎপাদনশীল হয়।  

 ব্যক্তিগত সমস্যার থেকে শুরু করে প্রতিষ্ঠানগত সমাধানের ক্ষেত্রে  মানুষের ভরসা সেই চিন্তন। মন  জন্মলগ্ন থেকেই  চঞ্চল স্বভাবের।  আধুনিক পন্ডিতরা  তার কিছু সূত্র নির্ধারণ করেছেন।   বিভিন্ন রঙের  টুপির  ব্যবহার করে  দুষ্ট  মনকে বেড়ি পরিয়ে নিজেদের কাজ হাসিল করাতে। সেই লক্ষ্যে মনকে নিপুণভাবে কিভাবে পর্যায়ক্রমে কি ধরনের  বাঁধন দিয়ে বাধল তাতে করে কি সমাধান  লাভ হোল  আজকের আলোচনা ঠিক সেসব নিয়ে। সবাই মনোযোগ দিয়ে শুনুন এটির প্রয়োগ সমস্যাভরা জীবনের অন্যতম প্রসঙ্গ উল্লেখপূর্ব্বক বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে সমাধানের উপায়  বিশ্লেষণ।


ক্রমশঃ 

ব্লগার - রবীন মজুমদার 



মন্তব্যসমূহ

Ani বলেছেন…
ভালো লাগলো লেখাটা, যা গভীর চিন্তার ফসল।

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়