আমি মহাভারতের পৃথা - চতুর্থ পর্ব

  

আমি মহাভারতের পৃথা - চতুর্থ পর্ব  





কল্পনার সাথে বাস্তবের চিরন্তন সংঘাত : 

যে সুখ থেকে জীবনের শুরু থেকে পৃথা বঞ্চিত ছিলেন, আশা করেছিলেন শ্বশুরবাড়িতে তা পুষিয়ে নেবেন। বাস্তব ভীষণ নিষ্ঠূর, তার পরিবর্তে তাকে এক নতুন বধ্যভূমিতে নিয়ে এসে দাঁড় করাল। এক্ষেত্রে তার রূপ যৌবন আর ব্যক্তিত্ব তার জীবনে এগিয়ে যাবার পথে অন্তরায় হয়ে দাঁড়াল। পান্ডুর মতো বাস্তব জীবনের অনভিজ্ঞ ছাত্র  স্বভাবতই জীবন যুদ্ধের পোড় খাওয়া পৃথার বংশবদ হবে তা আর নতুন কি। তার পরিনাম হিসাবে বিবাহের গন্ধ যেতে না যেতে শ্বশুরমশাই সতীন নিয়ে এসে পৃথার একাধিপত্য হরণ করার চেষ্টা করলেন। 

পরিবারই  রাজনীতির আঁতুরঘর : 

পরিবার রাজনীতির প্রথম রঙ্গমঞ্চ। নব বধূর আচার আচরণকে ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় প্রতিটি গতিবিধি মনের ফ্রেমে বন্দী করে রিভিউ করে বিশ্লেষণ করে পরিবারের অন্যান্য মাতব্বর সদস্যরা।  যারা ছায়ার সাথে যুদ্ধ করে কখন কাকে শত্রু বানিয়ে ফেলে তা আগে  থেকে বোঝা কখনই সম্ভব হয়ে উঠেনা। কোন কোন ক্ষেত্রে অপরাধীই জানেনা তার অপরাধটা কোথায়; অথচ তার মৃত্যু দণ্ডের  আদেশ দেওয়া হয়ে গেছে। পরবর্তী ক্ষেত্রে তাদের কাছে বোঝাটাই বোজা হয়ে দাঁড়ায়। 

রাজনীতি এক বিচিত্র  পরিসর  কোন পারিবারিক সম্পর্কই  সেক্ষেত্রে শত্রু চিহ্নিত করতে কোনরূপ  বাধা হয়ে দাঁড়ায় না, ক্ষমতাই তার বুনিয়াদের একমাত্র মাপকাঠি। পৃথার অসামান্য  রূপ এবং ব্যক্তিত্ব ছিল অন্তঃপুরের   আলোচনার বিষয়বস্তু যা দাসীদের মারফত  তিনি  জানতে পারলেন , তাছাড়া শ্বশুরমশাই ভীষ্ম, পান্ডূর প্রতি তার স্ত্রীর  অধিক প্রভাবে যদি  তার  একচেটিয়া আধিপত্য কমে যায়, সেই আশঙ্কায় মদ্ররাজের কন্যা মাদ্রীর সাথে তড়িঘড়ি বিবাহের আয়োজন করেন। পৃথার দিক থেকে তার  স্বামীর দৃষ্টি ঘোরানোর ব্যবস্থা করলেন।  পান্ডুর মধ্যে যে যৌন বিলাসিতা বিদ্যমান  ছিল তা  কুন্তীর ব্যক্তিত্বের কাছে সেটি  নিমিয়মান ছিল আর মাদ্রীর আগমনে তা পূর্ণতা পেল ।  রাজপ্রাসাদের অলিন্দে কান পাতলে শোনা যায় স্বামীর জৈবিক পিতা কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন বেদব্যাসের সাথে ভীষ্মের  একটা ঠান্ডা লড়াই  দীর্ঘ দিন ধরে ভীষণ পরিশীলিত ভাবে লালিত পালিত হচ্ছিলো রাজপুরীর অন্দরমহলে।যার যাত্রা  শুরু হয়েছিল সত্যবতীর দ্বারা ব্যাসদেবকে 'নিয়োগ'' পদ্ধতিতে অম্বিকা ও অম্বালিকার গর্ভ সঞ্চারের মধ্যে দিয়ে এবং অম্বিকা কর্তৃক বর্ণ বৈষ্যমের বিষ ফল রোপনের মাধ্যমে। ধৃতরাষ্ট্র, পান্ডু এবং বিদুরের জন্মের সাথে সাথে রাজমহলে একটা প্রশ্ন ঘুরে বেড়াতে লাগলো অনার্য্য রক্তের বীজ যে আর্য পরিবারে মহাভারতের কবি আর সত্যবতীর হাত ধরে যে প্রোথিত হল তার বংশ বিস্তারের মাধ্যমে হস্তিনাপুর কি জারজ সন্তান আর অনার্যদের করায়ত্ত হয়ত হয়ে যেতে পারে ; সেই আশঙ্কাই  খাঁটি আর্য্য বংশভুত কেয়ারটেকার শাসক ভীষ্মকে পীড়িত করছিল। ঠিক তার পাশাপাশি আর্য্য নারী অম্বিকার অপমানের জ্বালা দ্বৈপায়নকে হস্তিনাপুরের সিংহাসনে অনার্যদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে তার সংকল্পকে বাস্তবায়িত করার জন্য ধাপে ধাপে অগ্রসর হবার প্রবন্ধ রচনা  শুরু করেছিলেন। তার প্রমান স্বরূপ  পৃথার  যদু বংশীয় জৈবিক পিতা শূরসেনের সম্মতিতে এবং পালকপিতা কুন্তিভোজের উপস্থিতিতে বিবাহ সংক্রান্ত ব্যাপারের ভারতবংশের  পক্ষ থেকে ত্রিকালদর্শী  মহামতি বেদব্যাসই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেছিলেন। যাতে করে আগামী দিনে যদু বংশের সাথে পারিবারিক বন্ধনটি  পান্ডুর দিক থেকে সুদৃঢ় হয়।  

ক্রমশঃ 
ব্লগার - রবীন মজুমদার 

বি. দ্রঃ ভালো লাগলে শেয়ার করুন। 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়