আমি মহাভারতের পৃথা : সপ্তম পর্ব।

 



আমি মহাভারতের পৃথা : সপ্তম  পর্ব।

অসম্পূর্ণতাই  মানব জীবনের অন্তিম  পরিণতি। এক জীবনে পূর্ণতার স্বাদ কখন পাওয়া যায় কিনা  জানা নেই। পূর্ণতার আকাঙ্খাই হচ্ছে  সৃষ্টির  কাঁচামাল, বেঁচে থাকার রসদ । জীবনে সবকিছু পেয়ে গেলে সেই ব্যক্তির  ইন্দ্রিয়ের কোন কাজ থাকবেনা, ইন্দ্রিয়ের কোন কাজ না থাকলে গ্রন্থিগুলির কাছে পৌঁছাবে না তাদের দৈনিন্দন অন্নের ভান্ডার । রসদের  অভাবে বন্ধ হবে দেহের যান্ত্রিক প্রক্রিয়া এবং তার   সুদূর প্রসারী প্রভাবে অভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে চূড়ান্ত বিরোধিতার সম্মুখীন হবে দেহের  রাজা প্রাণবায়ুর। শরীরের  অভ্যন্তরে তীব্র কর্ম হীনতার  সমস্যা দেখা দেবে আর তার প্রতিক্রিয়ায় দেহের রাজা প্রাণকে   বাধ্য হয়ে  তাকে  দেহ নামক দেশ  ছেড়ে  অন্যত্র চলে যেতে হবে। বাস্তবে তাইই হয়, কেননা দেহের অভ্যন্তরীন জগতে অতন্দ্র প্রহরীরা বিদ্রোহ করলে বা পরাজিত হলে  তো প্রাণবায়ু  দেহ ছেড়ে পালিয়ে যায়।আবার পরিমিত আহার যেমন শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে. ঠিক তেমনি অপরিমিত আহার শরীরকে অসুস্থ করতে সাহায্য করে । 

মানুষের মনের যা কিছু ভালো ও মন্দ তাকে বহন করে তার স্থুল শরীর। বহির্বিশ্বে আকর্ষণীয় বহু বস্তু আছে, তা দেখে দেহমনে ক্ষুধার উদ্বেগ হয়।  তার মধ্যে মধুময় ফল যেমন আছে তেমনি বিষময় ফল ও আছে। কামনা বাসনার বশবর্তী হয়ে অভিজ্ঞতার অভাবে  মনের দরজাটা সপাটে খুলে দিয়ে অন্তঃপৃথিবীতে  জায়গা দিয়ে দিলে, তার অবিশ্যম্ভাবী ফল মানুষকে  ভোগ তো  করাতেই হবে, এটাই বাস্তব। শিল্পের সুষমা যেমন প্রকাশিত হয় সীমারেখার মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রেখে , ঠিক তেমনি বাহ্য প্রকৃতি থেকে অন্তঃপ্রকৃতিতে  গ্রহণের করার ক্ষেত্রেও সংরক্ষন থাকাটা  অনিবার্য ।  

(আমি মহাভারতের পৃথা -ষষ্ঠ পর্বের পর ) 

পান্ডু  শুধুমাত্র  জীবনে "কামনা" পুরুষার্থের দ্বারা বিশেষভাবে  প্রভাবিত হয়ে  তার দেহটাকে  মৃত্যুর কাছে সমর্পন করলেন। ঠিক তার পাশাপাশি পৃথা "ধর্ম" পুরুষার্থের সঠিক অনুসরণে জীবনে ভোগ বা কামনার  যথার্থ  সীমারেখার মধ্যে নিজেকে আবদ্ধ রেখে এক মহিয়সী নারীর মর্যাদায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করলেন। 

রান্নাতে অতিরিক্ত লবন বা অত্যাধিক ঝাল বা আধা সেদ্ধ কিংবা কোন মশলার অতিরিক্ত ব্যবহার খাদ্য বস্তুকে গ্রহণ অযোগ্য করে তোলে, ঠিক তেমনি রান্নায় ব্যবহৃত উপাদানের সমব্যবহার রান্নাকে সুস্বাদু করে তোলে। প্রথমটির জন্য জায়গা হয় ডাস্টবিনে আর দ্বিতীয়টিতে তৃপ্ত হয় রসনাতে । সীমাবদ্ধতাই হচ্ছে আর্ট বা শিল্প। 

মানুষ হওয়ার প্রকৃত  অর্থ কি, তাকে খুঁজে বেড়ানোই সাহিত্যের কাজ । সাহিত্য সমাজকে সাহায্য করে মানুষকে বুঝতে, সমাজের ঘটে যাওয়া ঘটনা এবং সংস্কৃতিকে বুঝতে ও উপলদ্ধি করতে । 

প্রাচীন বেদের সৃষ্টিকর্তা ঋষিমুনিরা নিঃস্বার্থভাবে মানবসভ্যতার উন্নয়নের জন্য বেদ রচনা করে গিয়েছিলেন। কিন্তু সমস্যা হয়েছিল বেদের ব্যাপকতা ও তার  ভাষা এবং বোধগম্যতার  জটিলতাকে নিয়ে । সেই জ্ঞান যদি মানুষের কাছে না পৌঁছায় তবে তার সৃষ্টি বৃথা। 

রামায়ণ , পুরান কাহিনী এবং  মহাভারত  রচনার পশ্চাতে উদ্দেশ্য ছিল বেদের মূল    সুরগুলিকে  সাহিত্যাকারে  সরলীকরণ করে  সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার।  "ধর্ম", "কাম" ,"অর্থ" এবং "মোক্ষ" এই চারটি নিয়ে  "পুরুষার্থ", সেটাই  মানবজীবনের মূল লক্ষ্য। বেদে ধর্মের অর্থ   নীতিবোধ এবং আধ্যাত্মিকতা, কাম অর্থাৎ পার্থিব সুখ , অর্থ অর্থাৎ জাগতিক এবং অর্থনৈতিক প্রগতি, পরিশেষে মোক্ষ মানে আধ্যাত্বিক জগতে মুক্তি। সারা মহাভারত জুড়ে সেটাই বোঝানো হয়েছে। 


ক্রমশঃ 
ব্লগার -রবীন মজুমদার 

বি: দ্রঃ -ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর খারাপ লাগলে মন্তব্য করুন ।।



 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়