আমি মহাভারতের পৃথা - অষ্টম পর্ব
আমি মহাভারতের পৃথা - অষ্টম পর্ব
প্রকৃতির রাজ্যে বসন্ত তার আগমনের বার্তা তার সৃষ্ট জগতের সব কুশীলবের কাছে পৌঁছে দেয়। তার বাহ্যিক রূপ প্রকাশিত হয় গাছে গাছে, ফুলে ফলে, দক্ষিণের বাতাস প্রাণীকুলের কাছে সেই বার্তা বহন করে তাদের অনুভূতিকে জাগ্রত করে। হঠাৎ আকাশবাণী এলো , হে মর্ত্যবাসীগন সাবধান! বসন্ত এসে গেছে। প্রকৃতির রাজ্যে যতি চিহ্নের কোন ব্যবহার নেই, শুধুই বাঁধ ভাঙ্গার গানের সাথে তাল মিলিয়ে নৃত্য করতে করতে প্রকৃতির বুকে হারিয়ে যাওয়া ছাড়া।
সেদিনও শাল পলাশ ফুল গাছে গাছে ফুটেছিল , দখিনা বাতাস বহন করেছিল কত বিস্মৃতির আড়ালে থাকা মধুর স্মৃতিকে। এক মাদকতার জোয়ারে প্রাণীকুলের দেহ মন অবশ হয়ে গিয়েছিল । সে উন্মত্ততা মানেনা কোন বয়সের বাধা বা না কোন মুনিঋষির অভিশাপ। সে শুধু প্রচন্ড মহিমায় উদগ্র কামনার জোয়ারে সব বাঁধাকে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে যায়।
ধীরে ধীরে পান্ডু আর মাদ্রীর ছবিটা পৃথার দৃষ্টির অন্তরালে হারিয়ে গেল। ক্রমেই তারা গভীর থেকে গভীরতর অরণ্যে প্রবেশ করলো। দীর্ঘ পথ পরিক্রমা করার পর তারা চারিদিকে পাহাড় দ্বারা ঘেরা এক জলাশয়ের সামনে এসে পৌঁছিল। সেই পাহাড় থেকে সুললিত ছন্দে পাহাড়ের উঁচু নিচু খাজগুলির সাথে লুকোচুরি খেলতে খেলতে দ্বিগুন উৎসাহ নিয়ে ঝরে পড়া ঝর্ণার জল নিচে থাকা হ্রদের সাথে যুগ যুগ ধরে নিবিড় আত্মীয়তা বজায় রেখে চলছে ।
দীর্ঘ পথ পরিক্রমার পর এ হেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রূপ মাদ্রীকে হাতছানি দিয়ে ঝর্ণার হ্রদের কাছে নিয়ে এলো। মাদ্রীর চপলতাকে উপভোগ করার জন্য একটু দূরে পান্ডু একটা পাথরের উপর বসে পর্য্যবেক্ষন করতে লাগলেন।
ঝর্নার জলের স্পর্শে মাদ্রীর অঙ্গের কাপড়টি জলের স্বচ্ছতার সাথে একাত্ম হয়ে পরনের কাপড়টি তার নিজ অস্তিত্ব হারিয়ে ফেললো। মাদ্রীর অঙ্গের ঢেউয়ের অনুরণন আছরে পড়ল পান্ডুর হৃদয়ে। চক্ষু ইন্দ্রিয় দ্বারা গ্রাহ্য বাহ্য প্রকৃতি থেকে নেওয়া সংবাদ পান্ডুর এন্ডোক্রিন সিস্টেমের গ্রন্থি থেকে অবিরত হরমোন বিসর্জন শুরু হোল আর তাকে বাধ্য করলো প্রকৃতির এই চিরন্তন রহস্যে আবৃত নারী দেহের মুমূর্মুহ নব নব রহস্যের উন্মোচনের দিকে ধেয়ে যেতে ।
তারপর দুই মানব মানবী আদিম প্রবৃত্তির সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল। আচম্বিতে মাত্রাহীন উত্তেজনা পান্ডুর দুর্বল চিত্ত গ্রহণ করতে পারলো না, কাল এসে হরণ করে নিয়ে গেল তার জীবন্ত সত্তাকে শুধুমাত্র অত্যাধিক কামনার লালসায় ।
মাদ্রীর ডাক শুনে ঘটনাস্থলে পৌঁছে সমস্ত ব্যাপারটা উপলদ্ধি করে দূরদৃষ্টি সম্পন্না বিদুষী মহিলা পৃথা তার পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করে ফেললেন। তিনি যেন সেই মুহূর্তে পান্ডুর স্ত্রী অপেক্ষা অধিকতর পাঁচ পুত্রের জননী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করলেন। তার সামনে একটি পথই খোলা রইলো যে, পুত্রদের হস্তিনাপুরে রাজপরিবারে আশ্রয় নিশ্চিত করা এবং রাজপুত্রের মর্যাদায় তাদের প্রতিষ্ঠিত করা।
দীর্ঘদিন পান্ডু রাজ্যের বাইরে থেকেছিলেন, তার পুত্ররা সেই অরন্যেই জন্মগ্রহন করেছিলেন রাজপরিবারের দৃষ্টির বাইরে , তারাই যে পান্ডুরই পুত্র, তাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য শতশৃঙ্গ পর্বতের ঋষিমুনিদের সাক্ষী হিসাবে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া এবং পান্ডু ও মাদ্রীর মৃতদেহ রাজকীয়ভাবে সৎকারের ব্যবস্থা করা।
ক্রমশঃ
ব্লগার : রবীন মজুমদার
বি: দ্রঃ ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর খারাপ লাগলে কমেন্ট করুন।
মন্তব্যসমূহ