আমি মহাভারতের পৃথা - ১৩তম অধ্যায়

 

আমি মহাভারতের পৃথা - ১৩তম অধ্যায় 



পৃথার হাত ধরে  পাঠক মহাভারতের গহন প্রদেশে যতই  প্রবেশ করবে ততই পাঠক দেখবেন, যেন চিরকালের সেই আমাদের পাশের বাড়ির চিরচেনা পারিবারিক বঞ্চনার সাক্ষাৎ প্রতিমূর্তি সেই অন্তঃপুরের  গড়পরতা    নারীর চরিত্র থেকে তিনি ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসছেন । প্রবেশ করছেন  এক বিশাল পৃথিবীতে নারীর  স্বাধিকার রক্ষার সংগ্রামে অবতীর্ণা এক যথার্থ আধুনিকা ক্ষত্রিয়ার  প্রতিমূর্তি হিসাবে। সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তিনি সেই অনন্য নারী, যিনি সমাজে যখন যেখানে নিজেকে যে চরিত্রে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সেখানে তিনি নিখুঁতভাবে নিজেকে বিকশিত করেছেন সেই পরিবেশে, এটাই তার ব্যক্তিত্ব। 

বিগত পর্বে মধ্য পান্ডবের সাথে হিড়িম্বা নামক এক অনার্য্য রমণীর ( রাক্ষসী ) সাথে তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাদের বিবাহ দিয়ে তিনি জাতপাতের উর্ধে  নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। সাধারণত এই ক্ষেত্রে আজকের অত্যাধুনিক নারী এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার পূর্বে নিশ্চিতভাবে কয়েকটা সিরিয়াল উত্তীর্ন করে ফেলতেন এবং বহু  নিকট জনের সাথে পৰ্য্যালোচনা করতেন আর যখন প্রস্তাবটা এক অনার্য নারীর পক্ষ থেকে এসেছে এবং ঘটনাচক্রে  তিনি পাত্রের মাতা। 

প্রেমের ক্ষেত্রে পৃথা বিশ্বাস করতেন প্রেম প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম অনুসারে মানুষের মধ্যে আসতেই পারে। প্রাকৃতিক নিয়মে যখন গাছেও ফুল ফুটে, ফল ধরে, কোন মানুষ কি প্রশ্ন করতে যায় ,গাছে  ফুল ফুটেছে কেন, ফল হচ্ছে কেন , পাখি তুমি ডালে বসে গান গাইছ  কেন, এর কোন উত্তর নেই। কেননা এটা বিশ্বপ্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মের একটা প্রতিফলন। প্রকৃতির এই স্বাভাবিক নিয়মেই এক  যুবককে এক যুবতী প্রেম নিবেদন করতেই পারে আর হিড়িম্বা যে রাক্ষস বা কোন অনার্য পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছেন কেন , সে ব্যাপারেও হিড়িম্বার  কোন হাত ছিলোনা। তাহলে, আপত্তি থাকার কোন কারণই নেই যে প্রেম হিড়িম্বার হৃদয়ে আসতেই পারে, এটাও তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।  তাই পৃথা সেই সত্যটাকে উপলদ্ধি করে, অনার্য নারীর প্রেমকে মান্যতা দিয়ে সমাজের তথাকথিত অন্ধ সংস্কারের উর্ধে নিজেকে দৃষ্টান্তমূলকভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। এখানে বেদের চতুর্বর্গের  অন্যতম বর্গ ধর্মকে মহাভারতে পৃথার মাধ্যমে সাধারনের কাছে সহজভাবে বোধগম্য করে তুলেছেন মহাভারতের কবি।  

দুর্বলের প্রতি সবলের অত্যাচার মানব ইতিহাসের এক কলঙ্কময় ধারাবাহিকতা। সেটা কাল ও ছিল আজও আছে, শুধু পাল্টেছে তার অত্যাচারের ফর্মাটটা।যেমন সুচারু গুনের অধিকারী মানুষকে বর্ণনা করা হয় মানবিক গুন সম্পন্ন হিসাবে, ঠিক তেমনি পশুর ন্যায় গুণ থাকলে বলা হয় দানবিক বা রাক্ষস সমতুল্য মানুষ হিসাবে।  অতীতে কোন কোন অঞ্চলের মানুষ আক্ষরিক অর্থে  নরমাংস  ভক্ষণ করতো এবং তখন সেই মানুষটার স্থুল শরীরটার তাৎক্ষণিক অস্তিত্বের অস্তিত্বলোপ  হতো।  আজ বর্তমানের সভ্য সমাজের কিছু মানুষরুপী দানব  অন্য মানুষদের কে সারাজীবন ধরে ধারাবাহিকভাবে শোষণ কায়েম করে। তার ফলে সেই  শোষিত জনসাধারণও  বিস্মৃতির অন্তরালে চলে যায় যে,  ভুলে যায় যে, তারা  কোন এক দিন  মানুষ ছিল।   এমনিই এক যথার্থ পশুসম নরখাদক ছিলেন বক, যার ভয়াবহতাকে এককথায় মহাভারত বর্ণনা করেছে রাক্ষস হিসাবে। 


ক্রমশঃ 

ব্লগার- রবীন মজুমদার 

বিঃদ্রঃ  ভালো লাগলে যত খুশি শেয়ার করুন আর  খারাপ লাগলে অবশ্যিই মন্তব্য করুন। 




মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৪২) নারীর একাল ও সেকাল