আমি মহাভারতের পৃথা -ষষ্ঠদশ অধ্যায়

 আমি মহাভারতের পৃথা -ষষ্ঠদশ অধ্যায় 



আত্মপ্রকাশ

আত্মগোপনের পর একটা রাস্তাই খোলা থাকে সেটা হল আত্মপ্রকাশ। আত্মানুসন্ধানের আদর্শ পরিবেশ অরণ্য।  আত্মানুসন্ধান মানবের মনে প্রকৃত জ্ঞানের উন্মেষ ঘটায়। সত্যান্বেষী মহাভারতের কবিকে আগামীদিনের নায়ক আর নায়িকা নির্বাচন  করতে গিয়ে নিজেকেই  মেন্টরের ভূমিকায় বারবার অবতীর্ন হতে হয়েছিল ।  সেক্ষেত্রে হয়ত আগামীদিনে পান্ডবদের প্রতি তার অনুরাগ  নিয়ে প্রশ্নের উদয় হতে পারে, তাই বলে কবি তো নিজের সৃষ্টির উদ্যেশ্যকে বিসর্জন দিতে পারেনা না। ভারতীয় সংকৃতির একটা প্রামাণ্য দলিল মহাভারত। এই সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য বেদের মূল ভাবকে সাধারনের বোধগম্য করে তোলা।  

ইতিহাসের রূপকার

কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসদেব তার  লক্ষ্য স্থির রেখে একের পর এক তার কর্মকান্ডকে বাস্তবায়িত করছেন। যে বাস্তবসম্মত শিক্ষার জন্য পান্ডবদের আত্মগোপনের প্রয়োজন ছিল তা পৃথার নেতৃত্বে একের পর এক ঘটনার পরম্পরায় পান্ডবরা উত্তীর্ন হয়েছেন সেই পরীক্ষায়। অন্তরের আর বাইরে সংঘাতে বিজয়ী যারা, তারাই তো আগামীদিনের ইতিহাসের রূপকার। কবির লেখনীর ছন্দে ছন্দে তারই  তো প্রকাশ পেয়েছে তার সৃষ্টিতে , যা প্রতিধ্বনিত হয়েছে  আগামীদিনে মানুষের মনে প্রাণে  সেই সুরের মূর্ছনা।

 আদর্শ

একাধারে রচনার কাজ আর অন্যদিকে তার উপযুক্ত পটভূমি গঠনের কাজ। দুইটি কাজে সমান সিদ্ধহস্ত মহাভারতের কবি। সুদৃঢ় এই কালের যাত্রায়  সঙ্গী তার অফুরন্ত জ্ঞানের ভান্ডার, অধ্যবসায় আর সংযম,  তার সাথে যুক্ত হয়েছে কবির  জনসংযোগ। সংশয় যেখানে অধ্যবসায়কে অতিক্রম করতে চায় জ্ঞান সেখানে কবিকে মূল স্রোতে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। যদি কখন  কন্টক বাধার সৃষ্টি করে , সংযম সেখানে কাঁটাকে দূরে সরিয়ে পথকে মসৃন করে দেয়। চক্রান্তের জাল যেখানে বিছানো, বুদ্ধি সুকৌশলে ছিন্ন করে তার ফাঁদ। কবি জানেন, তাদের এই নেতিবাচক ভাবনার ভিত্তি কোন সুদৃঢ় জমির উপর প্রতিষ্ঠিত  নয়, এর জন্ম  মানসিকভাবে দুর্ব্বল ও অহংকারী মানুষের মনে এবং সামাজিক আদর্শের পরিপন্থী বলে তার স্থায়িত্বও সাময়িক, ইতিহাস এই শিক্ষাই দেয়।   

হোম ওয়ার্ক

পাঞ্চালের এই রঙ্গমঞ্চে আবির্ভূত হবেন ভারতবর্ষের রাজনীতির নিয়ন্ত্রক মহারাজ জরাসন্ধ, যাদবশ্রেষ্ঠ কৃষ্ণ, দেবতাদের প্রতিনিধি, কৌরবরা এবং আরো অনেক  রাজন্যবর্গ। স্বভাবতই দ্বৈপায়নের হোম ওয়ার্কটা বেশ ডেডিকেটেড। প্রাথমিক কাজ সম্পাদনের জন্য দরকার ছিল বিশেষ কতকগুলি পয়েন্টের উপর ডাটা কালেকশন, তার উপর ভিত্তি করে তাদের সবলতার ও দুর্ব্বলতার বিশ্লেষণ করে একটা ব্রিফ প্রেজেন্টেশন   এবং লক্ষ্য ভেদের ধনুকের স্পেসিফিকেশনটাও উল্লেখ করে  তিনি মহারাজ দ্রুপদের হাতে আগাম তুলে দেন। স্বয়ংবর পরবর্তী রাজন্যবর্গের যুদ্ধানদেহী আচরণের প্রকাশ সম্পর্কে  সংবাদও স্বয়ংবরের পূর্বেই  মহারাজকে দিতে ব্যাসদেব ভোলেন নি।  

দ্রৌপদী

কবির উদ্দেশ্য ছিল, শৌর্য্য, বীর্য্যের অধিকারী, মানবতার পূজারী,  ন্যায়ের প্রতিমূর্তি পঞ্চ পান্ডবকে উপস্থাপনা  করা ও তাদের গ্রহনযোগ্যতা যেন প্রতিষ্ঠিত  হয় ভারতবর্ষের তৎকালীন শক্তিবর্গের কাছে। এই সঙ্গে তাদের  যোগ্য প্রেরণাদাত্রী হিসাবে অপূর্ব লাবণ্যময়ী, বুদ্ধিমতী, দূরদৃষ্টিসম্পন্না, কৃষ্ণসখী,  রাজরাজাদের স্বপ্নহরণকারী  দ্রৌপদীকে মহাভারতের রঙ্গমঞ্চে অবতীর্ন করার এবং মহাভারতের নায়কের যোগ্যসঙ্গী হিসাবে প্রতিপন্ন  করার। 

ক্রমশঃ 

ব্লগার -রবীন  মজুমদার 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৪২) নারীর একাল ও সেকাল