নারদের মর্তে ভ্রমন - ১৬তম অধ্যায় -( পেশাদার রাজনৈতিক মানব সম্পদ উন্নয়নের ট্রেনিং প্রোগ্রাম ) প্রথম পর্ব

  

নারদের মর্তে ভ্রমন - ১৬তম  অধ্যায় 

 

দেবরাজ ইন্দ্র : নারদ মশাই  বর্তমানে স্বর্গের আর্থিক পরিস্থিতি ক্রমাগত দুর্বল হতে চলেছে। কেননা , মর্ত্যের প্রনামীর  উপর আমাদের অর্থনীতি এতদিন নির্ভরশীল ছিল। তাদের প্রণামীর যোগানটা দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে। আমাদের আর্থিক ক্ষেত্রে  উন্নতির জন্য বিকল্প ভাবনা করার সময় এসেছে। আপনি জানেন আমাদের এখানে অনেক শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদ  কাজকর্ম না পেয়ে বসে আছে। তাদের কিভাবে ব্যবহার করে আমাদের  আর্থিক সুরাহা হতে পারে সেই দৃষ্টিভঙ্গী থেকে  আপনি  আমাকে একটা প্রপোজাল পাঠান সঙ্গে অবশ্যই প্রজেক্টেড ব্যালান্স সীটটা পাঠাতে ভুলবেন না। 

নারদ : স্যার ! প্রথমত আপনাকে বলে রাখি আমাদের কালেকশন এজেন্ট এবং মন্দিরের পুরোহিত এই দুইয়ের মাঝখানে এক নতুন একদল  মানুষ এসে জুটেছে, তাদেরকে কমিশন না দিলে  আমাদের এজেন্টরা কোন কালেকশন করতে পারেনা। 

দেবরাজ ইন্দ্র : তারা কারা ?

নারদ : তারা মনুষ্য সৃষ্ট  সমাজের মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন একদল  নৈরাজ্যের ক্রমবর্ধমান বাসিন্দা। নিজ গৃহে তারা উদ্বৃত্ত, কেননা তাদের চাকরি নেই , কোন মেয়ের বাবা বিয়ের জন্য ভরসা করে তাদেরকে মেয়ে দেয়না কেননা কোন কোম্পানির অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টারে তাদের নাম নেই।  তাদের একমাত্র সম্পদ ভোটার কার্ড তাই তারা রাজনৈতিক দলের অন্যতম Consumer । 

দেবরাজ ইন্দ্র : আপনি "ক্রমবর্ধমান" শব্দটি ব্যবহার করেছেন কেন ?

নারদ : প্রতি বছর বিভিন্ন শিক্ষায়তন থেকে পাশ করে ছাত্র ছাত্রীরা বেরোচ্ছে , চাকরির জন্য দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে সামনে একমাত্র বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দরজাটা খোলা দেখে সেখানে গিয়ে নাম লেখায়। 

দেবরাজ ইন্দ্র : বাঃ ! ভীষণ ইন্টারেস্টিং, আরও বলুন। তাদের দৈনিন্দন জীবন যাত্রা, কি ভাবে তারা বিবাহিত না হয়েও কংজুগাল লাইফের স্মেল নেয়   ইত্যাদি ইত্যাদি। 

নারদ: কিছুদিন দাদাদের সাথে ঘুরে মক টেস্টটা  সেরে ফেলে। কোন কোন জায়গা থেকে ইনকাম হতে পারে বুঝে যায়, তার পর তাদের নেট ওয়ার্ক শুরু হয়ে যায় অর্থাৎ ভাগের বখরা নীচ থেকে ধীরে ধীরে একদম উপরে চলে যায়।  উপরতলা তাদের  যে কোন অপরাধের উপর নিরাপরাধের সীল মোহর দিয়ে দিলে বা ছোট ছেলেদের দুষ্টামি বা দুধ না পেলে তো ঘোলেই তার স্বাদ মিটাতে হবে, এই সব রক্ষককে আগে ভাগে বলে দিলে বেতনভুক মেরুদন্ডহীন রক্ষকেরা  আর তাদের সামনে ভক্ষক হয়ে দাঁড়ায় না। মানুষ কবেই ভুলে গেছে অন্যায় কাকে বলে।  চারদিকে শুধু উন্নয়ন ছাড়া তাদের আর কিছুই চোখে পড়েনা। 

দেবরাজ ইন্দ্র : বুঝলাম মর্তে যে সব পড়াশুনা চলছে তাতে করে এমপ্লয়মেন্ট এবং নতুন ইনভেস্টমেন্ট ছাড়া আপনার ক্রমবর্ধমান সংখ্যাটা কমবে না, ওটা এই মুহূর্তে আমাদের হাতে নেই।  কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য স্বর্গের ইনকাম বাড়ানো। সেটা কি ভাবে সম্ভব ?

নারদ : স্যার , সব দিক থেকে ফিসিবিলিটি এনালাইসিস করে দেখেছি  একটি মাত্র ট্রেনিং প্রোগ্রাম আমরা যদি কন্ডাক্ট করতে পারি যার ভবিষৎ ভীষণ উজ্জ্বল এবং আমাদের রেভিনিউ আনতে কোন অসুবিধা হবে না। 

দেবী সরস্বতী : নারদ বাবু আমাকে এক্ষুনি বলুন আমি চিত্রগুপ্তের কাছ থেকে আমাদের এখানের সব নামি দামী শিক্ষাবিদদের এবং  কিছু চার্টার্ড একাউন্টেন্ট এনে  আপনার কাছে হাজির করছি। যারা প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্টের কাজটা করবে। 

নারদ : অনাদি কাল থেকে রাজকার্যের সহযোগিতার জন্য বেতনভুক মন্ত্রীদের নিয়োগ করার প্রথা ছিল। রাজতন্ত্র বিদায় নিয়ে সে জায়গায় গণতন্ত্র এসেছে , সেখানে রাজার জায়গায় মন্ত্রীদের এমপ্লয়ার হিসাবে  এসেছে জনগণ (For the People, of the People, by the people)  অর্থাৎ নিয়োগকর্তা হচ্ছে জনগণ, তাদের মাস মাহিনা পাচ্ছে  জনগণের করের  পয়সায় যেটা রাজতন্ত্রের সময়ও হতো। রাজা ছিলেন উপাধি মাত্র। রাজা যেহেতু প্রজাদের করের টাকায় রাজ্য চালান তাই তিনি নীতিগতভাবে  প্রজার সেবক আবার গণতন্ত্রে মন্ত্রীরা জনগনের দ্বারা নির্বাচিত এবং জনগনের পরিশ্রমের উপাৰ্জনের পয়সা থেকে কর দিয়ে মন্ত্রীদের মাসে মাসে মাহিনা দেন, কারন তারা সাধারণ মানুষের সেবা করবেন, সেই  প্রত্যাশায় । অবশ্য  কার্য্য ক্ষেত্রে আমরা ঠিক উল্টো ফল দেখতে পাই। 

মহাভারতের শান্তি পর্বে  যুধিষ্ঠির ভীষ্মের কাছে রাজনীতির পাঠ যখন নিতে গেলেন তখন ভীষ্ম রাজসভার মন্ত্রীদের প্রসঙ্গে বলেন যে,বেতনভুক মন্ত্রীদের উপর নজর রাখবে ,তারা কিন্তু সুযোগ পেলেই অসৎ ভাবে অর্থ উপাৰ্জনের চেষ্টা করবে,দুর্নীতি করবে , স্বজনপোষণ করবে আর সেটাই  তাদের রেওয়াজ। দুর্নীতি  সেদিন ও হতো, আজও হয়, আবার আগামী দিনে হবে অন্তত আমাদের মতো দেশে চলবে । কারনটা অন্যত্র আলোচনা করা যাবে। 

এই মহুর্তে ভারতবর্ষে প্রায় তিরিশের অধিক প্রোফেসনাল কোর্স  আছে। যেখানে ছাত্রদের এডমিশন টেস্ট দিয়ে ভর্তি হতে হয়। পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থায় এই কোর্সগুলির অভিমুখ বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি ক্ষেত্রে  চাকরির যোগ্যতা অৰ্জন করা এবং পুঁজিবাদের অন্যতম সহযোগী হিসাবে  হিউমান মেশিনারি হয়ে তাদের মুনাফা বাড়ানো। 

শিক্ষান্তে আর্থিক প্যাকেজের মাপকাঠিতে যদি কোন কোর্সকে সেরা বলতে হয় তাহলে আমার প্রথম পছন্দ  "Diploma in Professional Political Services  " সংক্ষেপে DPPS এর বিকল্প কোন কোর্স হতে পারেনা। রাজনৈতিক দলের ক্যান্ডিডেটদের ৫ বছর অন্তর ভোটে দাঁড়াবার সময়  যে  আয়ব্যয়ের হিসাব দেয় তাতে প্রমাণিত হয় যে এই মুহূর্তে পৃথিবীর কোন প্রতিষ্ঠান এরকম আয়ের রাস্তা করে  দিতে পারবেনা। 

যদি এই কোর্সগুলির আমরা শুরু করতে পারি, তাহলে ভারতবর্ষে এই মুহূর্তে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জব প্যাকেজ হচ্ছে "রাজনৈতিক পরিষেবা " , যেটা নিয়ে কেউ এখনো পর্যন্ত ভাবেন নি অথচ কি বিশাল রেভেনিউ আসতে পারে সেখান থেকে।   

অথচ বহু অপ্রশিক্ষিত মানুষ একরকম জোর করে মানুষকে পরিষেবা দেবার জন্য ব্যাকুল।  আর ভবিষৎতে উন্নতির ভাবনায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পতাকা নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। এই প্রফেশনের আর্থিক পদন্নতির হিসাবটা নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের ইনকামের ডিক্লেয়ারেশনের ফর্মে তার আয়ের প্রতিফলন দেখলেই  বোঝা যায় গতবারের থেকে কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে সেই   হিসাবে। 

জনগণ হচ্ছে মালগাড়ির বগির মতো ইঞ্জিন (নিজেকে সেই হিসাবে প্রমাণিত করছে ) যেখানে টেনে নিয়ে যাবে বগিরা অন্ধের মতো অনুসরণ করবে।  উন্নত এবং প্রশিক্ষিত ইঞ্জিন হলে জনতা নামক বগিটাকে সঠিক নিশানায় নিয়ে যেতে পারবে।

দেবী লক্ষ্মী : ( খানিকটা উত্তেজনায়) নারদ দা কবে নাগাদ শুরু করা যে পারে ? ভাঁড়ের মা ভবানী ! কোষ তো অর্থের অভাবে দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়েযাবার মতো । 

নারদ: আমি পরবর্তী মিটিঙে কোর্স ডিজাইনটা করে দেব আর তার পর মার্কেটিং প্লানটা বলে দেব। ভীষণ ইন্টারেষ্টিং কিন্তু। ধৈর্য্য ধরুন। 


ক্রমশঃ 

ব্লগার -রবীন  মজুমদার 

বিঃদ্রঃ ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর খারাপ লাগলে মন্তব্য করুন 



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৪২) নারীর একাল ও সেকাল