63 মহাভারতের যাজ্ঞসেনী - প্রথম পর্ব

   63   মহাভারতের যাজ্ঞসেনী -  প্রথম পর্ব 

যাজ্ঞসেনীসহ পঞ্চপাণ্ডব 

যাজ্ঞসেনীর জন্মলগ্নে মহাভারত এমন এক পর্য্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল যে মহামতি ব্যাসদেব মহাভারতের অন্যান্য সহনায়িকাদের ন্যায় তার শৈশব থেকে প্রাক যৌবন পর্য্যন্ত একেবারে স্কিপ করে যজ্ঞের অগ্নি থেকে তার আবির্ভাব ঘটিয়ে পাঠকের সামনে নিয়ে উপস্থিত করেছিল।  অবশ্য রিসার্চ পেপারগুলির ক্ষেত্রে যেমন রেফারেন্স বুকের ব্যবহার সুবিদিত ঠিক তেমনি সেই সময়ে সাপোর্টিং বুক হিসাবে  বহু পুরান রচনা করতে হয়েছিল। যেখানে সন্ধান করলে পাঠক তার উত্তর খুঁজে পাবেন। অবশ্য বর্তমানের পটভূমিতে পাঠকের বিশ্বাস অবিশ্বাসের প্রশ্নের উত্তর দেবার দায় মহাভারতের কবির নেই।  কাব্যে যদি কিছু ব্যঞ্জনা না থাকে তাহলে স্টিল ছবি দেখে মন ভরাতে হবে।  

মহাকাব্য রচনার মূল উদ্দেশ্য বেদের  নির্যাসকে  সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার আর পুরাণের  লক্ষ্য হল ধর্মকে গল্পের অবতারণা এবং  সরলীকরণ করে তার পরিণতি সমাজের সামনে  তুলে ধরা। খুব প্রাসঙ্গিকভাবে বেদের যুগের যজ্ঞ এবং অগ্নির উপাসনা ইত্যাদির অবতারণা না করলে খানিকটা অসম্পূর্ন থেকে যায়। 

জীবন মানেই সংঘর্ষ আর তার থেকে মানবজাতির পরিত্রানের মন্ত্রই সেই যুগে বেদের ঋষিরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন সৃষ্টির  ছন্দে। ঐতিহাসিকগণ  মানবসভ্যতার বিকাশের ধারার বর্ণনা করতে গিয়ে দেখলেন, যখন, আদিম যুগে মানুষ অগ্নি এবং চাকা'র আবিষ্কার করতে শিখলো, ঠিক তখন, থেকেই অন্যান্য জীবদের সাথে মানুষের ব্যবধান ভীষণভাবে লক্ষণীয় হয়ে উঠলো। 

অগ্নির একাধিক রূপ আছে , যা  মানুষ দেখে থাকে  তাকে বলে ভৌতিক রূপ আর যাঁকে দেখা যায়না অথচ আছে, তা হল আধ্যাতিক রূপ। বেদে অগ্নিকে সচ্চিদানন্দ অর্থাৎ নিত্য-জ্ঞান আনন্দ স্বরূপ ব্রহ্ম  হিসাবে বর্ননা করা হয়েছে। যেমন আজকে পূজার প্রারম্ভে গনেশকে বন্দনা করে শুরু করা হয়, বৈদিক যুগে প্রথমেই অগ্নির বন্দনা করে পূজার শুরু হোত। 

মহাভারতে অগ্নি :

মহাভারতের এক কাহিনীতে আছে একজন ঋষি কোন কারনে ভীষণ ত্রুদ্ধ হয়েছিলেন। তিনি মনস্থির করেন এই পৃথিবীর সব সৃষ্টিকে ধংস করে ছাড়বেন। সেই উদ্দেশ্যে তিনি মগ্ন হলেন গভীর তপস্যায়।  সারা স্বর্গলোক কেঁপে উঠলো তার তপস্যার শক্তিতে। বেগতিক দেখে দেবতারা নেমে এলেন মর্তে। দেবতারা অকৃপণভাবে অনুনয় বিনয় প্রদর্শন করলেন ঋষিবরকে, যাতে তিনি এই ধ্বংস প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করেন।  ঋষি তার নিরুপায় হয়ে  দেবতাদের বললেন, যাকে একবার আহবান করা হয়েগেছে তাকে যদি বিরত করা হয় তাহলে ঋষি নিজেই ধ্বংস হয়ে যাবেন। এই অগ্নিই হল ক্রোধাগ্নি। মানবজাতি বার বার এই ক্রোধাগ্নির সম্মুখীন হয়েছেন এবং ক্রোধ তার কার্য্য কারন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত চেয়ার টেবিল থেকে শুরু করে হাতের সামনে যা কিছু পেয়েছে তার  ধংস সাধন করেছেন। 

স্তম্ভিত দেবতারা, চলল ম্যারাথন আলাপ আর আলোচনা।  দীর্ঘ আলোচনার সমাপ্তিতে বেড়িয়ে এল তার ফলশ্রুতি।  যে দিগন্ত বিস্তারিত জল থেকেই জগতের সৃষ্টি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল, সেই জলেই ঋষি তার সমস্ত ক্রোধাগ্নিকে একত্রিত করে মহাসমুদ্রের মাঝখানে রেখে আসার পরমর্শ দেবতারা ঋষিকে দিলেন। সাগ্রহে ঋষি দেবতাদের পরামর্শ মতো মহাসমুদ্রের মাঝখানে রেখে এলেন।  সেই আগুন নাকি আজও জ্বলছে, সেই অগ্নির নামই বরডোরা। 

ক্রমশঃ 

ব্লগার -রবীন মজুমদার 


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৪২) নারীর একাল ও সেকাল