64 মহাভারতের যাজ্ঞসেনী - দ্বিতীয় পর্ব
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী - দ্বিতীয় পর্ব
মহাভারতের প্রথমপর্বে পাঠক দেখেছেন যে , পৃথা প্রশ্নাতীতভাবে নায়িকার স্থান অধিকার করে নিয়ে ছিলেন। সামনে দাঁড়িয়ে থেকে পাঁচ পুত্রদের নেতৃত্ব ও সংস্কার দিয়ে এসেছেন, আবার যখন অপর এক ব্যক্তিত্ব সম্পন্না নারী যাজ্ঞসেনী পান্ডবদের বধূ হিসাবে পৃথার সংসারে যখন এলো, তখন তথাকথিত শ্বাশুড়ি সুলভ চরিত্রে অবতীর্ণা না হয়ে অত্যন্ত বিচক্ষণ নারী হিসাবে পাণ্ডব পরিবারের সংসারের চাবিটা তার হাতে তুলে দিল। একই পদে একই ব্যক্তি যদি দীর্ঘদিন ধরে আসীন হয়ে থাকে এবং তাকে রিপ্লেস করার মতো পার্সোনালিটি যদি সংসার নামক প্রতিষ্ঠানে তৈরি না হয়; তাহলে মর্ডার্ন ম্যানেজমেন্টের কনসেপ্ট অনুযায়ী সেই সংগঠনটি কখন ডায়নামিক ম্যানেজমেন্ট হয়ে উঠেনা আর সেই পরিচালকমন্ডলীর গতিশীলতাই সংগঠনকে সাফল্যের চূড়ান্ত শিখরে নিয়ে যায়। যাইহোক, মনস্বিনী পৃথা এই নতুনের আগমন আর পুরাতনের নির্গমন, এই প্রাকৃতিক সৃষ্টির প্রক্রিয়ার বাস্তব ধারাকে যথেষ্ট মর্যাদা দিয়ে নবীনা যাজ্ঞসেনীকে তাঁর উপযুক্ত আসনটি ছেড়ে দিয়েছিলেন ।
( মহাভারতে বলা হোয়েছে যাজ্ঞসেনীর জন্ম যজ্ঞের আগুন থেকে -- বিগত পর্বের সূত্র ধরে --অগ্নির বৈচিত্রতা )
বেদে অগ্নি দেবতার রূপকে দুইভাগে ভাগ করেছে, আকাশে সূর্যের বিচ্ছুরণ সেটা যেমন অগ্নির রূপ ঠিক তেমনি যখন বিদ্যুৎ চমকে উঠাটাও অগ্নির আরেক দৈব রূপ। বৈদিক যুগে প্রত্যেকদিন ব্রাহ্মণরা খুব সকালে উঠে হোম করতেন। তখন তারা অরণিকাঠ ঘসে ঘসে আগুন জ্বালাতেন, আর সেই আগুনকে বলা হতো " অগ্নিহোত্র " । সেই জন্য তার নাম হয়ে গেল ' চির যুবক'।
বায়ুর সাথে অগ্নির নিবিড় আত্মীয়তা, অগ্নি যেখানে ধারক বায়ু সেখানে বাহক। স্বর্গ থেকে মর্তে বায়ুর হাত ধরে অগ্নি এসেছেন। অগ্নি সাধারণ মানুষ এবং দেবতাদের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজটা করে থাকেন। যজ্ঞের সময় দেবতাদের কাছে মানুষের অর্ঘ পৌঁছানোর একমাত্র মধ্যস্থাকারী অগ্নি। তাই তিনি পুরোহিতও বটে।
কর্ম ছাড়া অর্থ উপার্জ্জন করা যায়না। কিন্তু বৈদিক যুগে এখনকার মতো কাজের সুযোগ ছিলনা। যজ্ঞ, ধর্মাচারনা ছিল মানুষের মূল কর্ম। মানুষের বিশ্বাসবোধটা সেইভাবেই গড়ে উঠেছিল - স্বর্গই সব সুখের সেরা জায়গা। দেবতাদের সেবার মাধ্যমে সেই স্থানে যাওয়া যাবে। তাই দেবতাদের সন্তুষ্টিই তাদের কাজ। একমাত্র অগ্নিতে আহুতি দিয়েই সেই স্থানে যাওয়া যেতে পারে আর সেই নিবেদন সব দেবতার কাছে পৌঁছে যাবে। বেদের যুগে দেবতারা মানুষ ছিলেন কিন্তু তাদের প্রকৃতিদত্ত শক্তি ছিল গড় মানুষের শক্তির থেকে বেশী।
বৈদিক যুগে যজ্ঞের শুরুতে আবাহন করতে হতো আর এই আবাহনের কাজটি করতেন অগ্নি। মন্ত্রে অগ্নির সম্পর্কে কতগুলি উঁচু ধরনের গুনের কথা বলা হয়েছে। প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাসেও অগ্নির স্তুতি দেখা যায়। যে কোন ইন্দো-আর্য সভ্যতাতে অগ্নিকে খুব উঁচু স্থানে বসানো আছে। এই সভ্যতা থেকেই পার্সিদের জন্ম, তাই পার্সি সভ্যতায় অগ্নিকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
'অঙ্গার' নামক শব্দ থেকে অঙ্গিরাস এসেছে। অগ্নিকে স্বর্গলোক মর্তে নিয়ে আসার কাজটি অঙ্গিরাসকে দেওয়া হয়। তাই অগ্নির আরেক নাম " অঙ্গিরাস"।
ক্রমশঃ
ব্লগার - রবীন মজুমদার

মন্তব্যসমূহ