65 মহাভারতের যাজ্ঞসেনী -তৃতীয় পর্ব

 মহাভারতের যাজ্ঞসেনী -তৃতীয় পর্ব 

অগ্নি দেবতার প্রতিমূর্তি 

( যজ্ঞের বেদীর আগুন থেকে যাজ্ঞসেনীর জন্ম  দ্বিতীয়   পর্বের  সূত্র ধরে -  অগ্নির বৈচিত্রতা )
 
অগ্নির বৈচিত্রতার  প্রসঙ্গে  বর্তমানের বিশ্লেষকরা যে সমস্ত তৎকালীন সাহিত্য (বেদ) , ধর্মপুস্তককে আশ্রয় করে তাদের তথ্য নির্ভর  বর্ণনার অবতারণা করেছেন, তার আলোকে সংক্ষিপ্তসারে এখানে সেটি পরিবেশন করার চেষ্টা করা হয়েছে। 

ভাবনার বিবর্তন :

বেদের যুগে অগ্নি একাধারে স্বর্গের দেবতা এবং মর্ত্যে যজ্ঞের  পুরোহিত। পুরোহিত ছাড়া কোন কাজই সম্পাদন হতো না।  নিত্যদিন যিনি পূজা যাগযজ্ঞ করেন তিনি পুরোহিত নামে পরিচিত  আবার বিশেষ দিনে যিনি যজ্ঞে আহুতি দেন তাঁকে ঋত্বিক নামে ভূষিত করা হয়। ধীরে ধীরে যজ্ঞে একমাত্র "অগ্নিই শ্রেষ্ঠ " সেই ভাবটা সরে গিয়ে দেবী দূর্গা, মা চন্ডী, মা কালীর ক্ষেত্রে লক্ষণীয় হয়ে উঠে তাদের শ্রেষ্ঠতার  প্রদর্শনের ।  

গীতার দশম অধ্যায় স্বয়ং শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন, যাবতীয় বস্তু এই বিশ্ব ব্রম্মান্ডে আছে তার মধ্যে আমিই শ্রেষ্ঠ। এখানে ভাবটা অগ্নির থেকে সরে গিয়ে বিষ্ণু ও শিবের উপর গিয়ে পরল। বর্তমানে যে বন্দনা বা স্তুতি করা হয় তা ভগবান বিষ্ণু, শিব এবং শক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ। 

বেদের ঋষিরা মানুষকে দিব্যত্ব ( কামনা, বাসনা থেকে মুক্তির মন্ত্র ) দিতে চাইছিলেন, তাকে দেহবোধ থেকে পূর্ণত্ববোধের  দিকে নিয়ে যেতে চাইছিলেন,  কিন্তু       অগ্নি কামধেনুর  ( ইচ্ছাপূরণকারী দৈব  শক্তির অধিকারী পুরাণে বর্ণিত এক গাভী ন্যায়  হয়ে গেলেন, সময়ের রকমফেরে অগ্নি  হয়ে গেলেন দেবতা।  

পরবর্তী ঋষিরা এসে সমতা বজায় রাখার জন্য বিষ্ণু দেবতা, রুদ্র দেবতা প্রভৃতি এই রকম কয়েক জন দেবতার মধ্যে পরমাত্মার ( সৃষ্টি কর্তা ) ভাবটা নিয়ে এলো। এর সাথে হারিয়ে গেল ইন্দ্র, বরুন ইত্যাদি দেবতারা। অগ্নির চাহিদা সেক্ষেত্রে সময়কে অতিক্রম করে এখনো  প্রতিষ্ঠিত আছে। 

এখন প্রশ্ন হল দেবতা হতে গেলে তাকে কি কি গুনের অধিকারী হতে হবে। প্রথমত, যিনি প্রয়োজনে দান করতে পারেন, দ্বিতীয়ত, যিনি আলোকিত করতে পারেন, তিনিই দেবতা। এই দুইটি গুনের অধিকারী অগ্নি। স্থুল শরীরের ছায়া পড়ে কিন্তু সূক্ষ শরীরের ছায়া পড়েনা, তাই তিনি দেবতার গুন সম্পন্ন। 
.
একই শব্দ কিন্তু বিভিন্ন সময়ে তার ভিন্ন ভিন্ন অর্থ : 

ঈশ্বরের আরাধনা করলে সব কিছুই  পাওয়া যায়। অগ্নির উপাসনা করলেই সেই রমণীয় বস্তুকে লাভ করা যাবে। "রত্নধাতমম্" অর্থাৎ রত্ন মানে বহু মূল্যবান বস্তু। সেটা হীরা, মুক্ত বা মানিক্য হতে পারে আবার সন্তানও হতে পারে অর্থাৎ যার মাধ্যমে মানুষের অন্তরাত্মা পরিপূর্ন হয়ে উঠে ইপ্সিত বস্তু লাভে । নিজের সন্তানকে মানুষ খুব ভালোবাসে এবং সেটা মানুষের কাছে রত্ন স্বরূপ।  যেমন মহারাজ দ্রুপদ তার বিশেষ হেতুতে সন্তান কামনায় অগ্নিদেবের কাছে প্রার্থনা করেছিলেন এবং রত্ন লাভ করেছিলেন। সায়ণাচার্য আবার আরেক জায়গায় রত্নধাতমের সহজ অর্থ করেছেন, যা মানুষকে ফল দেয় তাই রত্নধাতম। 

বেদের সময় দুহিতার অর্থ ছিল, যে রমণী গরুর দুধ দোহন করে, তিনিই দুহিতা। কালের পরিবর্তনে কন্যা সন্তানকে 'দুহিতা' বলে সম্বোধন করা হয়। 

অগ্নির বিভিন্ন নাম আছে।  পৃথিবীতে অগ্নি রূপে, সূর্য্যের মধ্যে তাপ  রূপে।  তাই অগ্নির আরেক নাম বিপ্র।  আবার বিপ্র ব্রাহ্মণদের বলা হয়।  অগ্নি আবার ত্রিকালদর্শী তাই তার নাম 'কবি' . বেদে  'কবি'  হলেন ভগবান। 

ক্রমশঃ 
ব্লগার - রবীন মজুমদার। 







মন্তব্যসমূহ

Unknown বলেছেন…
Khub sundar agni samandhe rule dhorechen.anek kichu Janet parlam.

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৪২) নারীর একাল ও সেকাল