আমি মহাভারতের পৃথা- একাদশ পর্ব

 আমি মহাভারতের পৃথা-  একাদশ  পর্ব 




( দশম -পর্বে  বিদুরের পরামর্শে বারানাবতের ঘটনার পর পৃথাসহ পঞ্চ পান্ডবদের অরণ্যে গমনের সাথে সাথে মহাভারতের সব থেকে বড় অধ্যায় বন পর্বের সূচনা  হলো )

মহাভারত তার মহাকাব্যিক  চরিত্রকে মহিমান্বিত করতে কবিত্ব শক্তিকে আশ্রয় করে সমসাময়িক কালের সমগ্র জাতির একটা সামগ্রিক ছবি মহাভারতের কবি  তার তুলির রেখায় ফুটিয়ে তুলেছিলেন, তার জন্য এই  বনপর্বের এক বিশিষ্ট ভূমিকা আছে।

তৎকালীন সমাজের সাথে, আর তার সংস্কৃতির সাথে একাত্ম না হলে সাহিত্য সৃষ্টির ইন্ট্রিগ্রিটিটা বোঝা যাবেনা।  তাই মেইনস্ট্রিম সোসাইটিকে গুডবাই করে তদানীন্তন বৃহত্তর সমাজের সাথে পরিচিত হতে পৃথার হাত ধরে মহাভারত  চললো অরণ্যের পথে।   এখানে  ভিন্নধারায় বেড়ে উঠা আদিবাসীদের সাথে পৃথা পরিচয় করলো তার পুত্রদের সাথে।  ধীরে ধীরে আগামী দিনের শাসক পাণ্ডবরা চলল সমতল ছড়িয়ে আরো দূরে পার্বত্য অঞ্চলে বেড়ে উঠা বিভিন্ন জনজাতির জীবনযাত্রাকে উপলদ্ধি করতে। 

সুসাহিত্য তার সৃষ্টির মধ্যে দিয়ে মানুষকে শেখায় মানবজীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে। আর মহাভারতের আবরণটা ইতিহাস দিয়ে মোড়া হলে কি হবে তার অন্দর মহলটা বেদ-বেদান্ত আর উপনিষদের সুগন্ধী দিয়ে ভরা। অনুস্টুপ ছন্দে লেখা একলক্ষ শ্লোকে ভরা মহাভারতের  পদে পদে তারই প্রকাশ। যে জনজাতি, রাজবংশ এবং সংকৃতির বর্ণনা মহাভারতের ছন্দে ছন্দে বর্ণিত হয়েছে তার প্রতিধ্বনি  বর্তমানের  নৃতাত্ত্বিক  গবেষণার পেপারের পাতায় পাতায়  খুঁজে পাওয়া যায়। গবেষণার মাধ্যমে যে সব তথ্য এখন পর্যন্ত নজরে এসেছে , সেই পরিপেক্ষিতে অনুসন্ধানকারীগণ মহাভারতের সময়কার সমাজের একটা চিত্র তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছেন। এই মহাকাব্যের ঘটনার  উপস্থিতি এই উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম এবং পশ্চিমের দিকে সর্ব্বাধিক পরিচয় পাওয়া যায়। 

বৈচিত্রতায় ভরা ভারতীয় সংস্কৃতির   উপস্থাপনার ক্ষেত্রে মহাকাব্যের বর্ণনায় সুশৃঙ্খলভাবে রাজা ও তার রাজ্য এবং রাজবংশের বংশ তালিকাসহ তাদের সাংস্কৃতিক জীবনযাত্রার একটা বিশ্বাসযোগ্য ছবি তুলে ধরেছেন এবং বহুধা বিভক্ত সমাজের বর্ণনাও  তাতে প্রকাশ পেয়েছে।পাহাড়ের সাথে অরণ্যের আর অরণ্যের সাথে সমতলের প্রকৃতিগত কারণেই বৈসাদৃশ্য অবশ্যিই আছে।  তৎকালীন ভারতীয় সমাজেও সমতলের অরণ্যবাসীদের সাথে পাহাড়ের বিভিন্ন স্তরে বাস করা জনজাতিদের মধ্যে  প্রকৃতিগত কারণেই বিভাজন ছিল। 

অধিকার রক্ষার সংগ্রামকে  আদর্শ করে পিছিয়ে পড়া জাতিগুলি মহাভারতের রঙ্গ মঞ্চে এসে একই  পতাকার তলায় ধর্মযুদ্ধের সাইনবোর্ডটাকে সামনে রেখে নিজ  নিজ  অধিকার রক্ষার উদ্দেশ্য অংশ গ্রহণ করছেন। সেই নিরবিচ্ছিন্নভাবে অন্যান্য  সংগ্রামের সাথে  আজ ও আদিবাসীদের লড়াই অব্যাহত। শুধু শাসক তার জার্সিটা পাল্টেছে। 

ক্রমশঃ 

ব্লগার -রবীন  মজুমদার 

বি দ্রঃ - ভালো লাগলে শেয়ার করুন আর খারাপ লাগলে মন্তব্য করুন।    


মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৪২) নারীর একাল ও সেকাল