নারদের মর্ত্যে ভ্ৰমণ -পাক্ষিক বিশ্লেষণ - চতুর্থ পর্ব (Fortnight Analysis - Indian Education System (4th part))
Fortnight Analysis - Indian Education System (4th part)
নারদের মর্ত্যে ভ্ৰমণ -পাক্ষিক বিশ্লেষণ - চতুর্থ পর্ব
দেবরাজ ইন্দ্র : নারদ মশাই আজকের মিটিঙে দেবী সরস্বতী উপস্থিত নেই, আপনি সংক্ষেপে সমস্যা ও তার সমাধানের কি উপায় হওয়া উচিত সে সম্পর্কে বলুন।
নারদ : আমার অবজারভেশন এবং সম্ভাব্য কি করা উচিত, সেই সম্পর্কে বলতে পারি। যেমন, প্রাথমিক শিক্ষা সংস্কৃতির আঁতুরঘর হচ্ছে পরিবার। স্যার ! একবার ভারতের গ্রাম এবং শহর ঘেঁষা অঞ্চলগুলিতে ঘুরে দেখে এলে আসলে তার প্রকৃত চেহারাটা কি তা খানিকটা উপলদ্ধি করতে পারবেন।
ভারতবর্ষে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বৈষম্য থাকার দরুন, বহুদিন থেকে শিক্ষার মূলস্রোতে ভারতের সংখ্যা গরিষ্ঠ অংশ ও অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া এবং সেই প্রান্তিক পরিবার থেকে খুব কমই ছাত্র শিক্ষা গ্রহণ করতো , কারন তাদের কাছে শিক্ষা গ্রহণের থেকে অন্ন গ্রহণ করে বেঁচে থাকার প্রশ্নটা অনেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
শিক্ষা দানের পদ্ধতি মোটেই আকর্ষণীয় নয় । শ্রেণী কক্ষে শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে তার একমাত্র অনুভবের ইন্দ্রিয় হল কান যার মাধ্যমে ছাত্ররা স্মৃতির ভাণ্ডারে শিক্ষাকে প্রেরণ করবে। কোন অবস্থায় যদি ছাত্রদের শোনার একাগ্রতা না থাকে তাহলে মাস্টার মশাইদের পাঠ গ্রহণ করা সব ছাত্রদের কর্ণকুহর দিয়ে স্মৃতির ভাণ্ডারে সমানভাবে প্রবেশ করবে না। সেই কারণে শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে ছাত্রদের পারদর্শিতার মানদন্ডে বৈষম্য ফুটে ওঠে এবং আশ্চর্য্য ব্যপার এই বৈষ্যমের কারণ অনুসন্ধানের জন্য সরকারী বা বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা দপ্তর ভীষণ উদাসীন।
আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলির চাপে পড়ে সর্বশিক্ষা অভিযানের নামে শুধু মাত্র ছাত্রের সংখ্যা ও তাদের নামগুলি অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টারে ভরে বিশ্বের সামনে তুলে ধরে তারা ভাবের ঘরে চুরি করছে। কোন আন্তরিকতা নেই আগামীদিনের নাগরিক তৈরি করার ক্ষেত্রে। সিলেবাস নামক একটা অক্টপাশে ছাত্রদের বেঁধে রাখছে তার বাস্তবতাকে কত খানি মান্যতা দিয়েছে, সে সম্পর্কে আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে।
বাস্তবে শ্রেণীকক্ষে তিন ধরনের ছাত্র পাওয়া যায় , ক) সাধারণ গড়ের নিচে। খ) সাধারণ গড়ের মাঝামাঝি। গ ) সাধারণ গড়ের উপরে।
শ্রেণী কক্ষে শিক্ষাদান এবং পরীক্ষা গ্রহণের মধ্যে তিনটি স্টেপ আছে - ১) পাঠ ২) অনুশীলন ৩) পরীক্ষার মাধ্যমে জানার পরিধি মাপা। শিক্ষা মনোবিদদের মতে, স্মৃতির কোঠায় থাকা বিদ্যাগুলির ৮০ শতাংশ কয়েক মাসের মধ্যে হারিয়ে যায় তাই প্রয়োজন পরে অনুশীলনের আর সিলেবাস শেষ করার চাপে সেই পর্বটি এড়িয়ে যায়। পরীক্ষা নেবার উদ্দেশ্যটি হচ্ছে ছাত্রদের দুর্ব্বলতাকে চিহ্নিত করা এবং তিনটি স্টেপের বাস্তবায়নের মাধ্যমে যতক্ষণ পর্যন্ত জানাটা পূর্ণমাত্রায় না হচ্ছে ততক্ষণ শিক্ষনকে চালু রাখা। (Process until success বা conditional loop) পরীক্ষা ছাত্রদের বাহ্যিক দিকটা যেমন তুলে ধরে ঠিক তেমনি অন্তঃপ্রকৃতির রায়টা জানার জন্য মনোবিদের বিশেষ প্রয়োজন শিক্ষার ক্ষেত্রে এবং এই দুইয়ের যৌথ প্রয়াসে শিক্ষা পরিণতির দিকে এগোয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে, একটা ক্লাসরুমে সব ছাত্র একই সাথে শিক্ষকের স্পীচ শুনছে কিন্তু কোন এজজন ছাত্র অমনোযোগী, সেক্ষেত্রে শিক্ষক তাকে ভৎসনার করার মধ্যেই তার কর্তব্য শেষ করে দিল কিন্তু একবারও সেই ছাত্রের সমস্যার উৎস জানার চেষ্টা করল না বা কিভাবে সেটা জানতে হয় তার কৌশল সম্পর্কে নিজেই ওয়াকিবহাল নয়। আসলে দেখা গেল ছাত্রটি আগের রাত্রিতে পারিবারিক হিংস্রতার শিকার হতে দেখেছে তার মা'কে আর মায়ের সেই আর্তনাদটা তখনও তার কানে বাজছিল এবং সেটাই তার অন্যমনস্কতার কারন।
১. যেমন ছাত্রদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার সময় ছাত্রের এবং তার পরিবারের স্ট্যাটিক ইনফরমেশনের ডাটা বেস মেইনটেইন করা হয় না। এইটা মেইনটেইন করলে পরবর্তী সময়ে ডায়নামিক ইনফরমেশন ( যেটা ক্লাসে ছাত্ররা শিখে স্কোর করে ) ইনপুট হয়ে কোম্পারিটেটিভে স্টাডি রিপোর্ট জেনারেট করে ছাত্রদের গ্রোথ রেট এবং তার সঙ্গে নেগেটিভ পার্টটা এনালাইসিস করে পিছিয়ে পরা ছাত্রদের জন্য পুনরায় রিপিট প্রোগ্রাম বানান যেতে পারে।
২. প্রত্যেক ছাত্রের দুই ধরনের বয়স থাকে -
২.১. ক্রোনোলজিক্যাল এইজ ,
২.২. মেন্টাল এইজ।
যেমন, ৬ বছরের ছাত্রের মেন্টাল এইজ ১০বছরের হতে পারে আবার ১০ বছরের ছাত্রের মেন্টাল এইজ ৫ বছরের হতে পারে। সুতরাং মনোবিদের পরামর্শ ব্যতিরেকে এই বিশ্লেষণ সঠিক হতে পারেনা। আবার যদি ধরে নেওয়া হয়, সিলেবাস তৈরি করার ক্ষেত্রে উভয় বয়সের মানদন্ডটি সঠিক ভাবে ওজন করে ছাত্রদের উপর চাপান হয়েছে কিন্তু এডমিশনের সময় আসলে ওজন করা হয়নি, তাহলে গোড়া থেকেই টোটাল সিস্টেমটার মধ্যে গলদ ঢুকে যায় এবং পরবর্তী সময়ে তা কলেবরে বৃদ্ধি প্রাপ্তি ঘটে।
ক্রমশঃ
Blogger - Rabin Majumder

মন্তব্যসমূহ