নারদের মর্ত্যে ভ্ৰমণ -পাক্ষিক বিশ্লেষণ - পঞ্চম পর্ব Fortnight Analysis - Indian Education System (5th part)
Fortnight Analysis - Indian Education System (5th part)
নারদের মর্ত্যে ভ্ৰমণ-পাক্ষিক বিশ্লেষণ - পঞ্চম পর্ব
নারদ : হে ভগবান ! এতদিন আমার আমার কর্তব্য নির্ধারিত ছিল সংবাদ প্রেরকের ভূমিকায়। আজ দেবরাজ আমাকে নতুন দায়িত্বে অভিষিক্ত করেছেন।
ভগবান বিষ্ণু : বৎস নারদ, তুমি আমাকে সব খুলে বল।
নারদ : হে ভগবান আপনি তো এই বিশ্বের স্রষ্টা, সবই তো আপনার নখ দর্পনে ।
ভগবান বিষ্ণু : ঠিকই বলেছো, তবে এই মানবরা যখন হাটতে শেখেনি তখন তো তাদের হাত ধরে হাটতে শিখিয়ে দিয়ে হাতটা ছেড়ে দিয়েছি , এবার তারা নিজেরা স্বাবলম্বী হয়েছে, বেদের ঋষিদের দিয়ে ধর্ম ,অর্থ , কাম ও মোক্ষ কি -তাকে বিশদ ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিয়েছি। ব্যাসদেব তো মহাভারত লিখে সাধারণ মানুষকে সেই শিক্ষাই দেবার চেষ্টা করেছে। জীবনকে কোন পথে চালিত করলে দুঃখের উর্ধে থাকা যায় এবং আমাদের মতো আর কেউ নিজেকে জানার কথা বলে নি আর অন্তঃপ্রকৃতিকে অনুসন্ধান করাই ছিল আমাদের শিক্ষার মূল ভিত্তি ; কিন্তু বর্তমানের পরিণতি নিয়ে আমরা ভীষণ চিন্তিত। আমাদের এই সৃষ্টিকে ধ্বংস করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। অবশ্য তার শেষের শুরু হয়ে গেছে।
নারদ : ভগবান ! সেটা কি ভাবে শুরু করেছেন।
ভগবান বিষ্ণু : আচ্ছা তোমার ও কি ওই অন্তর্দৃষ্টিহীন, বুদ্ধিহীন কতগুলি আত্মসুখ সর্বস্য ঐ মুষ্টিমেয় কতগুলি মানুষ যাদের আমি সমাজ ও রাজনৈতিক ক্ষমতার শীর্ষ আসনে বসিয়ে রেখেছি , ঠিক তাদের মতো কি তুমি কম বুঝতে শুরু করেছো। যদু বংশের ধংসের কথা কি তুমি ভুলে গেছ ? ওই মানুষগুলি ভাবছে দিব্যি সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে আমরা ক্ষমতা দখল করে বসে আছি। আসলে তারা ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ক্ষমতা হারানোর স্বপ্ন দেখে। ক্ষমতার জন্য আদর্শকে বিসর্জন দেয় ( অবশ্য আদতে আদর্শ ছিল কি না তা ব্লাডের হিস্ট্রি চেক করলে বোঝা যাবে )। ক্ষমতা ভীষণ খারাপ রোগ, দেখবে রাস্তায় হোমগার্ডদের একটা লাঠি চালানোর ক্ষমতা দিলে সে অকারনে নিরীহ বাসের উপর নির্দয়ভাবে আঘাত করে। মন্ত্রীরা নিজেদের গাড়ির সামনে স্টিকার লাগিয়ে এবং অকারনে সাইরেন বাজিয়ে সাউন্ড পলুশন বাড়িয়ে জনগণকে তাদের উপস্থিতি জানায়। আমি একবার মানুষের পোশাকে বিদেশে এক ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে কেনাকাটি করতে গিয়ে ছিলাম, টাকা দেবার লাইনে আমার পরে তাদের দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী ছিলেন, তিনি লাইন দিয়ে টাকা পেইড করে নিজের গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করে চলে গেলেন, আর কি বলব। এখানে এরা খুব সচেতনভাবে জানেন তারা মানুষকে ঠকাচ্ছেন, তাই মানুষ আমাদের আক্রমণ করতে পারেন এই আশঙ্কায় তারা বডি গার্ড ছাড়া রাস্তায় বেরোন না। কোথায় গেল গণতন্ত্রের সংজ্ঞাটা, ভুলে যায় তাদের দায়িত্বের কথা, জনগনের ভোট নির্বাচিত তারা। তাদের যে আশঙ্কার কথা আমি আগে বলেছি সেটা মিলিয়ে নিতে পারলে তো। তারা ভুলে যায় শাসকের সেই আদর্শের কথা " শাসন যদি করতে চাও তবে গোলাম বনে যাও"।
অর্থ অসৎ উপায়ে উপার্জন করে বিভিন্ন সময়ে হাফ অসৎ এজেন্সিদের দ্বারা বারে বারে নিগৃহীত হয়। কাল্পনিক জুজুর ভয়ে ভিতরে ভিতরে সিঁটিয়ে থাকে। সকাল থেকে রাত্রি পর্যন্ত অসৎ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে অসৎ রাজনৈতিক নেতারা কেবল ভয়ে ভয়েই তাদের জীবন কাটে। সমালোচনাকে ভীষণ তারা ভয় পায়। নিজের ছায়াকে বিশ্বাস করেনা । আমাকে কখন মহাদেবের মিসেসকে গোপনে তারা সব স্বীকার করে। এর মুলে আছে প্রকৃত শিক্ষার অভাব।
জনসাধারণ হয়ত তাদের সমীহ করে কিন্তু অন্তর থেকে তাদের সম্মান করেন না। পিতামাতার রাজনৈতিক জীবন দেখে তাদের পরবর্তী প্রজন্ম জীবনের শুরু থেকে উশৃঙ্খল জীবন যাপন শুরু করেন এবং সামগ্রিকভাবে তাদের জীবনে শান্তি নামক বস্তুটা কখন যে হারিয়ে যায় তারা নিজেরই জানেনা। পার্থিব সুখ খোঁজা আর স্বর্ণ মৃগ ধরা একই ব্যাপার। তারপর একদিন ব্যাসদেবের মতো কোন মহাকবি এসে আবার একটা নব মহাভারত লিখবে ভগবান ব্রম্মার কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে ।
যাকগে অনেক কথা বলা যেত, কিন্তু আমার আবার ধ্যানে বসার সময় হয়ে গেছে, এবার আরেকটু মর্তের জন্য বেশি কনসেনট্রেট করব আর ভগবান শ্রী কৃষ্ণের মতো কাউকে মানুষ হিসাবে পাঠাবার চেষ্টা করব। তবে সাধারণ মানুষের জীবনে ওদের মতো এতো সমস্যা নেই, শুধু একটু দারিদ্রতা ছাড়া। তবে ঐ নেতাদের মতো ভিখারি খুব কম আছে। তবে তোমার বর্তমানের দায়িত্বটা খুবই ভালো, সব কিছুর পিছনেই শিক্ষার দুৰ্বলতাই প্রধান কারন। কোন ব্রান্ডের শিক্ষা প্রচলন করবে তা তোমাকে নতুন করে বোঝাতে হবেনা।
নারদ : যথা আজ্ঞা ভগবান।
ক্রমশঃ
ব্লগার - রবীন মজুমদার

মন্তব্যসমূহ