মহাভারতের যাজ্ঞসেনী -দশম অধ্যায়
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী -দশম অধ্যায়
রামায়ন, মহাভারত ও পুরাণে, বিভিন্ন যজ্ঞে দেখা যায়, যাদের প্রভাব দূর করার জন্য অনুষ্ঠান করা হয়, তখন তারা এসে যজ্ঞ ভেঙ্গে দেয়। তার উজ্জ্বল উদাহরণ, রামায়নে মেঘনাদের নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে লক্ষণ শুধু মাত্র যজ্ঞ ভেঙে দেয়নি, মেঘনাদকে মেরেও ফেলেছে।
মানুষের চরিত্র বিশ্লেষণ করলে দুই ধরনের মানুষের সন্ধান পাওয়া যায়, যেমন, প্রাকৃতিক শক্তির অধীনতাকে মেনে জীবন যাপন করে, অনেকটা পশুর মতো। আনন্দে হেসে উঠে আবার দুঃখে কেঁদে ভাষায়, খায় আর ঘুমায়। আরেকদল প্রকৃতির বুকে বিজয়কেতন উড়ায়। প্রথম দলটি সংখ্যায় বেশি।
প্রাচীন বেদে মানুষের সমস্যার সমাধানের বৈদিক ঋষিদের কাছে গেলে কোনদিন তারা খালি হাতে ফেরাতো না। কেউ হয়ত শত্রু হত্যার উপায়, ধন সম্পত্তি লাভ করার উদ্যেশ্যে আবার সন্তান লাভের উদ্দেশ্যে ঋষি,মুনিদের কাছে গেলে, তারা সমাধান বলে দিত এবং যজ্ঞ ছিল তার একমাত্র সমাধান। এই যজ্ঞের মাধ্যমে তাদের লাভ কতখানি হয়েছে তার কোনো স্ট্যাটিস্টিক্স জানা নেই কিন্তু তাদের উদ্বেগটা অধিকাংশে এই নিয়ম কানুনের বেড়াজালে আর টাইম টেকিং ফ্যাক্টরে চাওয়া ও পাওয়ার মাঝখানে বাস্তবতার পাঠটা পড়ে তাদের বাসনার নিবৃত্তি হয়, এটাই অনুমান। অবশ্য এছাড়া কোন উপায় ছিলনা তাদের অবাস্তব চাহিদা মিটাবার আর অসম্পূর্ন চাহিদা থেকে বিকৃত মানসিকতার জন্ম হতো , আর তার থেকে সমাজ কলুষতায় ভরে যেত । জীবাত্মার সাথে পরমাত্মার মিলনের দুরূহ সমীকরণটা বুঝে নিয়ে তাকে জীবনে ইমপ্লিমেন্ট করে দুঃখকে জয় করার মতো বৈপ্লবিক মানসিকতা সাধারণ মানূষের মধ্যে কখনই জমে উঠেনি বহুবিধ কারনে।
যুগে যুগে মানুষের নিজের অন্ধ সংস্কার ও অজ্ঞানতা থেকে তৈরী হওয়া দুখঃকষ্ট থেকে মুক্ত করার জন্য বেদের ঋষিরা, গৌতম বুদ্ধ এবং অন্যান্য মহামানবরা চেষ্টার ত্রুটি করেন নি। এই যজ্ঞ ও এক ধরনের সল্যুশন। যেমন, সমাজে কাম ও অর্থের মেকি চাহিদার অপূর্ণতার মাধ্যমে উৎপাদিত হাহাকার থেকে মানুষকে মুক্ত করার জন্য পরবর্তী সময়ে দেবদেবীর পূজাআর্চা ইন্ট্রোডিউস করে তার মাধ্যমে মানুষের মনকে ধর্মের দিকে নিয়ে যাবার চেষ্টা আজও চলে আসছে। নাভীর থেকে ক্রমেই নিম্নগামী মনকে হৃদয়ের দিকে নিবদ্ধ করার জন্য বিকল্প পদ্ধতি কিছু ছিল না বলে। একদিকে রাজনৈতিক নেতারা কাম আর অর্থের প্রতি প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে দলের ভোটব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে এসে তাদের যাত্রা শেষ করে আর অন্যদিকে সত্যিকারের ধর্মগুরু, ঋষিরা ( প্রচুর জাল ধর্মগুরুর আভির্ভাব ঘটেছে ) ধর্মের পথে মানুষের মুক্তির প্রচেষ্টা ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন। এই দুয়ের টানা পোড়োনে হতভাগ্য সাধারণ মানুষ আজও নাজেহাল। মানুষের মনের মধ্যে ইনবিল্ড স্ক্যানার না থাকার জন্য সত্য মিথ্যার ব্যবধানটা বুঝতে পারেন না।
ক্রমশঃ
১৮-১১-২১
বেলা ১১:৪৩ মিঃ
মন্তব্যসমূহ