মহাভারতের যাজ্ঞসেনী - একাদশ অধ্যায়

 মহাভারতের যাজ্ঞসেনী - একাদশ অধ্যায় 


শিল্পী সাহিত্যিকরা  সমাজ এবং সাধারণ মানুষের সাথে মিশে তাদের আনন্দ ও  দুঃখের সাথে খুব সহজেই একাত্ম হতে পারেন এবং তাদের দূরদৃষ্টতা অনেকাংশে বেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের তুলনায়। আবার বাণিজ্যিক কারনে তাদের সৃষ্টি কখন আধ্যাতিক জগৎকে সাধারনের কাছে তুলে ধরার প্রতি তাদের দ্বায়বদ্ধতাও নেই। সেই কারনে নারী-পুরুষের রসালো গল্পের প্রাধান্যই  বেশী থাকে, কেননা, পাঠক সেটাই শুনতে চায় বলে । 

ভারতীয় আধ্যাত্মবাদ এবং সাম্যবাদী ভাবধারার মধ্যে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায় , যেমন, সাম্যবাদীরা ভাবেন সর্বহারার একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা হলেই প্রথমেই সমাজে সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠা হবে আর অধ্যাত্মবাদীরা বলেন একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে মানুষের চৈতন্যের  উন্মেষ ঘটলে মানুষের মনে খুব স্বাভাবিক ভাবেই কোন ভেদাভেদ থাকবেনা এবং তারা অর্জন করবে একের (অদ্বৈত বাদ) জ্ঞান তাই খুব স্বাভাবিকভাবেই মানুষের মনের গভীরতম প্রদেশ থেকে সাম্যবাদ উচ্চারিত হবে  এবং চিরস্থায়ী রূপে তা প্রতিষ্ঠিত  হবে।  তার জন্য  আলাদা করে কম্যুনিস্টদের মতো সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রয়োজন পড়বেনা। প্রকান্তরে সাম্যবাদীরা মানবের মনোজগতের উন্মেষ ঘটানোর কথাই বলেছেন, তবে তার বাঁধনটা আর প্রক্রিয়াটা অধ্যাত্মবাদীদের মতো  অতটা শক্তপোক্ত নয়। আধ্যাতিকতার একটা পরম্পরা আছে, কিন্তু তুলনামূলকভাবে সাম্যবাদী চিন্তাধারা নিঃসন্দেহে ভালো কিন্তু তার সেইভাবে কোন পরম্পরা নেই। উভয়ের ভাবধারা মানুষের মননের উপর কাজ করে মানুষের চেতনার উন্মেষ ঘটানোই তার একমাত্র লক্ষ্য। এহেন রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষ বা দলটি প্রগতিশীল ভূমিকা পালন করতে করতে, একসময়ে প্রতিক্রিয়াশীল ভূমিকায় অবতীর্ন হন। কেননা, পরিবর্তনশীল জগতের নিয়ম অনুসারে যেই মানুষগুলি যেই মতাদর্শকে  সামনে রেখে  ক্ষমতা দখল করেছিল সেই আদর্শ ভোগবাদী দুনিয়ার হাতছানিতে মতবাদটি বৃদ্ধ হবার আগে তার যৌবনেই আস্তে আস্তে ধনতান্ত্রিক  ব্যবস্থার  কবলে চলে গেছে।   (পূর্ব য়ুরোপ ) এই নিদর্শন পৃথিবীর ইতিহাসে অজস্র আছে। পাশাপাশি, যে মানুষের একবার চৈতন্যের উদয় হয়েছে এবং সে জেনেছে তার প্রকৃত স্বরূপ তখন  (আমি কে ?) তাকে আর ভোগবাদী দুনিয়াতে  ফিরানো যায়নি। কারনটি সহজেই অনুমেয়। 

দৈনিন্দন জীবনে মানুষ প্রতি মুহূর্তে শিক্ষিত হয় জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে আর সমৃদ্ধ হয় তার জ্ঞানের ভান্ডার। সে ক্ষেত্রে অনেকাংশে প্রচলিত ধারণার জায়গাটির পরিবর্তে নতুন ধারণা এসে  প্রবেশ করে। এইভাবেই মানবসভ্যতা এগিয়ে যায়।  পুরাতনের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে নতুনের আগমন ঘটে। ধনতান্ত্রিক দুনিয়াতে ঘন ঘন পরিমার্জন আর পরিবর্তন এবং কমিউনিস্টদের প্লেনাম করে বাই 'ল-য়ের  সংশোধন, সংবিধানের ধারাবাহিক সংশোধনের পাশাপাশি পাঁচহাজার বছর আগের বৈদিক মন্ত্রের এবং সনাতন হিন্দু ধর্মের আচার আচরণের কোন পরিবর্তন হয়নি কিংবা প্রয়োজন পড়েনি। কারণ, গভীর অন্তরদৃষ্টি থেকে উঠে আসা উন্নত জীবন গঠনের  মন্ত্রগুলির রচয়িতা, একদল প্রাণপাত করা কৃচ্ছসাধন করা ঋষিরা। শুধুমাত্র মানুষের কল্যাণের জন্য নিঃস্বার্থভাবে তারা কাজ করে গিয়েছিলেন এবং সেটাই সত্য আর সত্যবস্তুর কোন পরিবর্তন হয় না। যেমন গাছের ফল যখন মাটিতে পরে তখন সে কোন অবস্থায় আকাশপানে উঠে যায়না  মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আছে বলে, সেটা কালও ছিল আজও আছে, আগামী দিনেও থাকবে।  

ক্রমশঃ রবীন মজুমদার 
২০-১১-২১ সময় সকাল ৪:৪৬ মিঃ 
স্থান : কলকাতা 







মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়