মহাভারতের যাজ্ঞসেনী -দ্বাদশ অধ্যায়
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী -দ্বাদশ অধ্যায়
"সত্যবস্তুর কোন পরিবর্তন হয় না।" গত সংখ্যার পর। ......................
জ্ঞানের দুটি দিক আছে, যথাক্রমে তত্ত্ব এবং তথ্য। যে ধারণা বা অনুমান পরীক্ষিত হয়ে জন্ম নেয় তাকে তত্ত্ব বলা হয়। বিজ্ঞান, দর্শন শাস্ত্র , গণিত এবং যুক্তি বিজ্ঞানে প্রভৃতিতে তত্ত্বের বহু ব্যবহার আছে। সবসময়ের জন্য যেটা সত্য সেটাই তত্ত্ব। যেমন, আগুনে হাত দিলে হাত পুড়ে যায়। সব ধর্ম শাস্ত্রই সর্ব কালে সত্য তাই সেটা তত্ত্ব। জাগতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ধর্ম শাস্ত্রকে ব্যাখ্যা করলে সেই ব্যাখ্যাটি সম্পূর্ণ হবে না। ভারতীয় দর্শনের একটা পরম্পরা আছে। সৃষ্টি থেকে প্রথমে চৈতন্যের জন্ম , চৈতন্য থেকে ভাবের জন্ম , ভাব বা চিন্তা থেকে জন্ম নিচ্ছে শব্দ, শব্দ থেকে জন্ম হচ্ছে শক্তির আর শক্তির থেকে বিষয়।
তথ্য সম্পর্কে বলা যেতে পারে - বিশেষ কোন কিছু সম্পর্কে ধারণা বা জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্য যখন শব্দগুলিকে (DATA ) শৃঙ্খলিত কাঠামোর (FORMAT) সাহায্যে ইপ্সিত ফলের জন্য প্রক্রিয়াকরণ (PROESSS ) করা হয় তখনই তাকে তথ্য(ইনফরমেশন) বলা যায়।
কেন যজ্ঞ এবং মন্ত্র পাঠ আজও সমাদৃত।
দেশপ্রেমিকরা ভাত ঘুম থেকে উঠে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করতে শুরু করল আর ফাঁকিবাজি নয় কিন্তু ! পরীক্ষা এসে গেছে। আমরা সবাই এখন থেকে ছাত্র আর জনতা কিন্তু আমাদের শিক্ষক। এত দিনের সহবতটা একদিনে ব্যালেট পেপারে তার উত্তর লিখে দেবে। ব্যাস ! "আমাদের শরীরটা এতদিনের ভোগের অভ্যাস থেকে বঞ্চিত হবে, শুধু তাই নয় কৃতকর্মের জন্য টিকটিকি পিছনে লেগে যাবে"।
নেতাদের অশান্ত মন, চারিদিকে মিটিং মিছিলের জোয়ার উঠেছে, নেতারা ভেবেই কুল কিনারা করতে পাচ্ছেন না, জন স্রোতটি কোন দিকে বইছে। কারন অবশ্য আছে, সারা বছর আড্ডামারা ফাঁকিবাজ ছাত্ররা যেমন পরীক্ষা এসে গেলে রাত জেগে পড়ে অথবা টুকলি করার ( বুথ দখল কিংবা উৎকোচ দেওয়া, যেটা ইতিপূর্বে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ভোট প্রস্তুতির আগে নেতারা আদায় করতো আজ সেই নেতারা জনগনের হাতে উৎকোচ দিয়ে আসছেন ভোট পাবার আশায় ) হোমেওয়ার্কটা সেরে রাখে পাশ করার জন্য; ঠিক তেমনি নিজেদের বিগত পাঁচবছরের কাজের উপর নিজেদের এতই অবিশ্বাস তখন মন্দির, মজদিদ,গীর্জ্জায় প্রার্থনা, হোম যজ্ঞ না করা ছাড়া তাদের কাছে মনকে শান্ত করার বিকল্প কিছুই থাকেনা। অলৌকিকতার উপর নির্ভর করতে হয় এবং মন্ত্রতন্ত্রকে নামাবলীর মতো জড়িয়ে পেঁচিয়ে থাকতে হয়। কেননা জনগনের উপর নির্ভর না করার যথেষ্ট কারন যেমন আছে, ঠিক তেমনি , জনগনেরও নেতাদের অবিশ্বাস করার নির্দ্দিষ্ট অনেক কারন থাকে। যাই হোক অবশেষে, সেই মন্ত্র আর যজ্ঞই পরিত্রানের একমাত্র উপায়। তারা পুরুষকার নয় ধর্মকে ঢাল করে আদতে তারা কপটতায় বিশ্বাসী।
বেদের ঋষিদের দূরদর্শিতা।
বেদের ঋষিরা অনেক বড় দার্শনিক ছিলেন, বার বার মানুষ যে প্রকৃত জ্ঞানের অভাবে পন্ডিতদের দরজায় কড়া নাড়বেই- এটা তারা সেইদিনই বুঝেছিলেন, যেমন শরীর অসুস্থ হলে মানুষ ডাক্তারের কাছে যায়, ঠিক তেমনি মনের অসুখ হলে তাদের পন্ডিতদের কাছে যেতেই হবে। লকারে যত্ন করে রাখা আছে রোগের রকমভেদে নির্দ্দিষ্ট ঔষধ।
পাঁচহাজার বছর আগে যেমন ছিল আজকেও সেই ট্র্যাডিশনের কোন হেলদোল নেই , এটাই পরম্পরা। ঋষিদের ন্যায় আজকের পুরোহিতরা সব সমস্যার সমাধান বলে দেন। ঠিক যেই সমস্যায় মহারাজ দ্রুপদ দ্রোণের প্রতি প্রতিশোধ নেবার বাসনায়, পুত্র কামনায় অস্থির হয়ে যজ্ঞের আয়োজন করার জন্য উৎকচঃ দিতেও কার্পণ্য করেননি ঋষিদের । তাই বেদে স্তুতি করে অগ্নিকে নিয়ে এসে সিরিজের পর সিরিজ শুধু (পড়তে হবে সিরিজের জায়গায় সুক্ত ) এটা ওটা আবদার করে গেছে।
মহামতি ব্যাসদেব তাই লিখছেন, "যজ্ঞের বেদীর আগুন থেকে যাজ্ঞসেনী মহাভারতের পটভূমিতে অবতীর্ন হলেন।" খুব প্রাসঙ্গিকভাবে বেদের অগ্নির বন্দনার মন্ত্রগুলিকে অনুধাবন এবং ব্যাসদেবের রূপকের ব্যাখ্যা না পেলে কাল্পনিক বলে মনে হতে পারে। সেটার ব্যাখ্যা যথাযথ প্রমান সহকারে পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে করা যাবে।
৭৫তম ব্লগ
ব্লগার -রবীন মজুমদার
২২-১১-২১ সময় ভোর ৪:২২ মিঃ
মন্তব্যসমূহ