76 মহাভারতের যাজ্ঞসেনী - ত্রয়োদশ অধ্যায়
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী - ত্রয়োদশ অধ্যায়
"বেদের অগ্নির বন্দনার মন্ত্রগুলিকে অনুধাবন এবং ব্যাসদেবের রূপকের ব্যাখ্যা না পেলে কাল্পনিক বলে মনে হতে পারে"-দ্বাদশ সংখ্যার পর।
বেদের ভাষ্যকার সায়ানাচার্য্য রাজার ব্যাখ্যায় বলছেন, "দীপ্যমানম"। উজ্জ্বলতা যদি রাজাকে চিনবার মাপকাঠি হয় তাহলে, সেই অর্থে অগ্নিও রাজা, কেননা সে ও সব জায়গায় "দেদীপ্যমান"। যে আগুনকে আমরা খালি চোখে দেখি সেটা আগুনের স্থুল শরীর বা বাইরের আবরণ, তার বাইরেও তার একটা সুক্ষ শরীর আছে, যেটা আমরা দেখতে পাইনা ( যাকে চৈতন্য বলে ) । আগুনের স্থুল রূপের যখন প্রকাশ হয় তখন অন্ধকার দূর হয়ে ,যায়।
ঋগ্বেদে বহু স্তুতি আছে সেখানে অগ্নিকে বলা হচ্ছে, তুমি, এমন একটা বলয় ( এক ধরনের আগুন দ্বারা তৈরী প্রাচীর) তৈরী কর যাতে যারা যজ্ঞ ভাঙতে আসে সেই অশুভ শক্তি যেন না আসতে পারে। ( তাই আজ ও স্থুল অর্থে আগুনের ব্যবহারে হিংস্ত্র জীব জন্তু আগুনের থেকে দূরে সরে থাকে অজানা এক ভয়ে। আবার সুক্ষ অগ্নির জ্ঞানের আলোয় মানব জাতি আগুনকে ঢাল বানিয়ে সে নিজেকে প্রতিকূলতা থেকে রক্ষা করে ) মানুষ এক অদ্ভুত জাতি যদি একবার জানতে পারে যে প্রাকৃতিক কোন শক্তিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের কার্য্য সিদ্ধি হবে, তাহলে মুখে যতই স্তব করুক না কেন, আসলে তাকে ক্রীতদাস বানাতে একটুও সময় নষ্ট করে না।
আজও কিছু যজ্ঞ আমরা খালি চোখে দেখি আবার বেশ কিছু যজ্ঞতে অদৃশ্য আগুনের লেলিহান শিখা আমাদের সামনে পিছনে অতন্দ্র প্রহরীর মতো পাহারা দিয়ে যাচ্ছে। দেখা যায়না এমন কিছু কিন্তু অগ্নিবলয় আছে। সমাজে এখনো দাসত্ব প্রতিষ্ঠিত আছে। খালি চোখে তো দেখাই যায় না আর অজ্ঞান হয়ে থাকলে তাকে অনুভব করা যায় না। শুধু পাল্টেছে আগের তুলনায় আজকের ফরমাটটা। শুধু পড়বার বেলায় পড়তে হবে আগুনের জায়গায় আগ্নেয়াস্ত্র, যা দিয়ে শাসক সাধারণ মানুষের স্বপ্নগুলিকে চুরি করে রাজপ্রাসাদে বসে থাকে আর সাধারণ মানুষ ভুলেও যদি তার স্বপ্নগুলিকে ফিরিয়ে দেবার আবদার করে, বাইরে দাঁড়ান সারি সারি আগ্নেয়াস্ত্রে বলীয়ান অন্যায় যজ্ঞের পুরোহিতরা বলয় তৈরী করে প্রাসাদের অলিন্দে বসে থাকা হিংস্ত্র শাসককে শুধু অর্থের বিনিময়ে রক্ষা করে। আর শাসকের নীতিহীনতার কাছে মানুষ যখন নিজের আদর্শকে বলি দিয়ে তাদের সব কিছুকে মেনে নেয়, তখন তো সাধারন মানুষ মনোজগতে এক চিরস্থায়ী ক্রীতদাসে পরিগণিত হয়।
এই গেল দেশের ভিতরের ঘটনা। আর দেশের বাইরে ঘটনাটি প্রায় একই রকম, যার আগুনের স্টক বেশি সে বিশ্বের রাজা। সেই রাজার দেশে যদি বেশী বেশী আগুন জাতীয় প্রোডাক্টের বেশী প্রোডাকশন হয়ে গেল, সঙ্গে সঙ্গে অদৃশ্য অধীনস্ত দেশগুলিকে বলে দেয় আশেপাশের দেশের সাথে যুদ্ধ শুরু কর আর আমাদের কাছে থেকে অস্ত্র কেনো। সেখানে কোন ওজর আপত্তি শুনব না। দেশের মানুষ তখন কিছু বলতে পারবেনা, আর বললেই বলবে শত্রু দেশের চর , বাকিটা বুঝে নিও। তোমরা যারা ( দেশের মন্ত্রীরা ) আমাদের সাহায্য করবে আর বিলটা পাশ করাবে, তখনের ব্যাপারটা তো ছোটখাট অফিসের purchase আর accounts ডিপার্টমেন্টের কেরানিওরা জানে। সেই দেশটা ও তখন আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্রীতদাসের ভূমিকা পালন করছে। তাহলে আসল দেবতাটা কে ? যাঁকে সমীহ করে সবাই চলছে, তা হোল ধনতন্ত্র। এও এক পরম্পরা, আজ থেকে হাজার বছর পরে হয়ত প্রত্নতাত্তিক গবেষণায় উঠে আসবে কোন এক অজ্ঞাত শিল্পীর তৈরী ধনতান্ত্রিক দেবীর প্রতিমূর্তি, যাঁকে একদল স্বার্থপর মানুষ পূজা করতো আর সাধারণ মানুষেরা মনে মনে ভীষণ ভয় পেত। কোন এক লেখকের বর্ণনায় লেখা হবে, কোন এক কালে দুষ্ট শিশুকে ঘুম পারাতো তাদের মায়েরা ধনতন্ত্র নামক এক জুজুর গল্প শুনিয়ে।
ব্লগার- রবীন মজুমদার
তারিখ -২৩.১১.২১ ভোর: ৪:২০ মিঃ
বিঃদ্রঃ ভালো লাগলে বেশী শেয়ার করুন আর খারাপ লাগলে মন্তব্য করুন।
মন্তব্যসমূহ