মহাভারতের যাজ্ঞসেনী-চৌদ্দতম অধ্যায় (77)

 

মহাভারতের যাজ্ঞসেনী-চৌদ্দতম অধ্যায় ||(77)

"কোন এক অজ্ঞাত শিল্পীর তৈরী ধনতান্ত্রিক দেবীর প্রতিমূর্তি,   যাঁকে একদল স্বার্থপর মানুষ পূজা করতো আর সাধারণ মানুষেরা মনে মনে ভীষণ ভয় পেত। কোন এক লেখকের বর্ণনায় লেখা হবে, কোন এক কালে দুষ্ট শিশুকে ঘুম পারাতো তাদের মায়েরা   ধনতন্ত্র নামক  এক জুজুর গল্প শুনিয়ে" -  ত্রয়োদশ অধ্যায়ের পর ....

ঋতম্ কি ।।

অগ্নিরদেবতার বন্দনায় এক জায়গায় আছে ,ঋতস্য দীদিবিম্- যেই মহাজাগতিক শক্তির  বিচারের  উপর সারা বিশ্ব ব্রম্মান্ড  সৃষ্টির শুরু থেকে আজকেও ঠিক একই ভাবে চলে আসছে , যে নিয়মে বীজ থেকে গাছ হয়, অংকুর থেকে ফুল হয়, আপেল গাছ থেকে পড়লে উপরে উঠে যায় না, মাধ্যাকর্ষণের নিয়মে নিচেই পড়ে  , সেটাই বিশ্ব প্রকৃতির অবিসংবাদিত নিয়ম আর সেটাই ঋতম্ এবং  তাকে ধরে রাখার দায়িত্ব শুভ শক্তিরযে শক্তির পিছনে মানুষদের হাত নেই তা দৈব শক্তি  হিসাবে মানুষ জেনে থাকে। মানুষ ধরে নেয় জন্ম মৃত্যু, ভালো থাকা , খারাপ থাকা- এসবের পিছনে ঈশ্বরের বা মহাশক্তির  ইশারা ছাড়া চলতে পারেনা।  দীদিবিম্ শব্দের অর্থ দ্যোতকম অর্থাৎ যিনি আলোকময়। 

এই  ঋতম্কে ধরে রাখার কাজটি কার উপর বর্তাবে যদি অশুভ আসুরিক  শক্তি ঋতম্কে ধ্বংস  করতে আসে ?  অবশ্যিই দেবতারা  (উন্নত ধরনের মানুষ) । ঈশ্বর নিজে কখন স্ববিরোধী কাজ করবেন না। কেননা দেবতা আর অসুর একই সৃষ্টির ভিন্ন রূপ এবং উভয়েরই  সৃষ্টি কর্তা ঈশ্বর  নিজেই। (ঐ যে অসুররুপী   ধনতন্ত্রের পূজারীরা যাঁরা ঋতমকে ধংস করছে, তাদের  যথাযোগ্য আপ্যায়নের  কাজ দেবতাদেরই করতে হবে সঙ্গে মানুষকে নিয়ে, ঈশ্বর করবেনা না) বেদের দুটি ধৰ্ম - একটিকে নাম প্রবৃত্তিলক্ষন  আরেকটির নাম নিবৃত্তিলক্ষণ । প্রবৃত্তি শব্দের মধ্যেই লুকিয়ে আছে কামনা বাসনার প্রকাশ। নিবৃত্ত হলো কামনা বাসনার  ত্যাগ । এই দুটি পরস্পর বিরোধী  ধর্ম দিয়ে এই বিশ্বের স্থিতিকে বজায় রাখা হয়েছে।   সমগ্র বেদটা দাঁড়িয়ে আছে  ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষকে নিয়েই এই চার পুরুষার্থকে নিয়ে। মহাভারতের  মধ্যে দিয়ে ঋষি এই পুরুষার্থের ভাবনাকে মানুষের  কাছে  পৌঁছে দেবার  চেষ্টা করেছেন। 

কেন ব্রাহ্মণদের সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল ।।

প্রাচীনকাল থেকে বেদ ব্রাহ্মণদের হাতে ছিল। বেদকে বলা হয় শ্রুতি, কেননা সেইসময় ঋষিরা দীর্ঘ সাধনার মধ্যে থেকে যে সত্যকে উদ্ঘাটন করতেন সেটা তাদের শিষ্যদের শুনাতেন এবং শিষ্যরা শুনে শুনে মুখস্ত করে রাখতেন।  পরবর্তী সময়ে সেই জ্ঞানগুলিকে শ্লোকের আকারে ব্যক্ত করতেন। সেই শিষ্যরা আবার তাদের উত্তরসূরিদের শোনাতেন, এই পরম্পরা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল। ব্রাহ্মণরা ছিলেন এই পরম্পরার বাহক। ঠিক এই কারণেই  ব্রাহ্মণদের সুরক্ষার প্রয়োজন ছিল বেদের পরম্পরাকে ধরে রাখতে। হিন্দুধর্মের যা কিছু সারবস্তু তা বেদেই আছে। 

অন্যান্য ধর্মের সাথে হিন্দুধর্মের প্রভেদ কি   ।।

জগৎ ঈশ্বরের সাথে এক , অর্থাৎ " আমিই ব্রহ্ম "- এই জ্ঞান একমাত্র ভারতবর্ষের হিন্দু ধর্মেই আছে।  পৃথিবীর অন্য কোন জাতির কাছে এই জ্ঞান নেই। স্বামী বিবেকানন্দ ঠিক এই কাজটাই করতে এসে বলেছেন, এই ভারতবর্ষের কাছেই সে জ্ঞানটা আছে। তাই ভারতকে মাথা তুলে দাঁড়াতেই  হবে। ভারত শেষ হয়ে গেলে সারা পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে। হিন্দুধর্ম যদি না বাঁচে তাহলে বেদও বাচঁবে না। মানবজাতির উন্নতির এক মাত্র সোপান হচ্ছে  বেদ আর  বেদ যদি না বাঁচে তাহলে  সমগ্র  পৃথিবীর মানুষ বঞ্চিত হবে এই সর্বোচ্চ উপলদ্ধি  থেকে। "আমিই ব্রহ্ম " এই কথা অন্য কোন ধর্মে উচ্চারণ করা যাবেনা। তাহলে সে সঙ্গে সঙ্গে বিধর্মী হয়ে যাবে। 

 ক্রমশঃ 
৭তম  ব্লগ 
ব্লগার- রবীন মজুমদার 
তারিখ -২৮.১১.২১ ভোর: ৬:৫৫ মিঃ 

বিঃদ্রঃ ভালো লাগলে  বেশী শেয়ার করুন আর খারাপ লাগলে মন্তব্য করুন। 


  








মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়