মহাভারতের যাজ্ঞসেনী - ষষ্ঠ পর্ব

মহাভারতের যাজ্ঞসেনী - ষষ্ঠ পর্ব


 (  যজ্ঞের বেদীর আগুন থেকে  তার  জন্ম  তাই তার নাম যাজ্ঞসেনী, যাঁর আগুনের  স্পর্শে পঞ্চ পাণ্ডব সোনা হয়ে গিয়েছিল।  সেই অগ্নির  বৈচিত্রতা নিয়ে  বেদের ঋষিদের ব্যাখ্যা ,তাই নিয়ে  পঞ্চম  পর্বের পর  ষষ্ঠ  পর্বের শুরু ) 

একাধারে রামায়ন ,মহাভারত ও পূরণের মতো হিন্দু ধর্ম শাস্ত্র রচনা হয়েছে, সাধারণ মানুষকে বেদের বিশালত্বের সাথে সহজ সাবলীলভাবে পরিচিত  করার জন্য। কেননা বেদের সর্বজ্ঞান সর্বদাই  তাদের নাগালের বাইরে ছিল আর জ্ঞানকে কুক্ষিগত করে রাখলে সমাজের উন্নতি সাধন কখনই হবেনা। অন্ধকার আর অজ্ঞান দুটিই একই বস্তুর  ভিন্ন রূপ। আজও মানুষ আরো বেশী রকমের লাঞ্চিত হচ্ছেন একদল স্বার্থপর মানুষের হাতে, শুধুমাত্র জ্ঞানের অভাবে। আবার পাশাপাশি মানুষের মনে আধ্যাত্মিক অনুভূতিকে বিশ্লেষণ করার জন্য বেদের ঋষিরা কিছু পদ্ধতি অনুসরণের কথা বলেছেন , যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষ বুঝতে পারেন যে, সেটা তার কল্পনা না অনুভূতি এবং  সেটাকে  কি ভাবে ক্স-রে মেশিনের তলায় ফেলে জানা যেতে পারে? ঋষিরা এ প্রসঙ্গে বলেছেন, মানুষ যদি তার উপলদ্ধিকে পরম্পরা, যুক্তি ও অনুভূতি, এই তিনটির যে কোন একটিতে সেটা  প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে  কিনা তা, যাচাই করে নিতে হবে। তাই যদি হয়, তাহলে, পাঁচ হাজার বছরের পুরনো সৃষ্টিকে বুঝে নিতে অসুবিধা কোথায় ? মানুষের অনন্ত জিজ্ঞাসা থাকতেই পারে , সেটাকে সঙ্গে নিয়েই যাত্রা জারি থাকবে। 

 অগ্নিনা রয়িমশ্নবৎপোষমেব  দিবেদিবে।
 যশসং বীরবওমম। 

অগ্নি স্তুতির তৃতীয় মন্ত্র।  অগ্নিনা মানে অগ্নির হাত ধরে, রয়িম শব্দের অর্থ ধনদৌলত। অশ্নবৎ-এর  অশ্ন  শব্দের অর্থ, মানুষের যে জিনিস প্রাপ্ত হলে ভালোলাগে।পোষমেব  দিবেদিবে  অর্থাৎ পাবার পর খরচ করতে করতে শেষ যেন না হয়। যশসং বীরবওমম। অর্থাৎ এমন সম্পদের অধিকারী হওয়া, যাতে যশ বৃদ্ধি হয়। জীবনে যা অৰ্জন করতে চাইছে মানুষ তার চাহিদা অনুযায়ী, তাতে যেন তিনটি শর্ত দেওয়া থাকে। ইপ্সিত বস্তু পাওয়ার পর , তা যেন বৃদ্ধি পায় এবং সন্মান বৃদ্ধি হয়। সর্বশেষে, বীরবওমম অর্থাৎ যজমানের যে সন্তান প্রাপ্তি হবে সে যেন বীর এবং তেজস্বী হয়। 

বৈদিক যুগে মন্ত্রের মাধ্যমে অগ্নিদেবতার কাছ থেকে বীর্যবান সন্তান কামনা করতো। এই মন্ত্রের উপর ধ্যানের মাধ্যমে, মন্ত্রের বক্তব্য অনুযায়ী হাতে নাতে ফল পাওয়া যেত। বৈদিক যুগের ঋষিরা ধ্যানের গভীরে দেখেছেন তাই বেদের সব মন্ত্রই সিদ্ধমন্ত্র।

অগ্নে যং যজ্ঞমধ্বরং বিশ্বতঃ পরিভুরসি।
স ইদ্দেবেষু গচ্ছতি।

সায়ণাচার্য্যের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, "হে অগ্নিদেবতা, এই যে যজ্ঞ করা হচ্ছে, এই যজ্ঞ কোনোমতে বিঘ্নিত না হয়, তুমি এটা রক্ষা করো"। অগ্নি তখন যজ্ঞের চারদিকে বলয় তৈরি করে যজ্ঞকে রক্ষা করতো বাইরের উপদ্রব থেকে। বিশ্বতঃ পরিভুঃ - অর্থাৎ অগ্নি  সমস্ত বিশ্বব্রম্মান্ডে ব্যাপ্ত। উপনিষদেও  পরিভুঃ শব্দটি পাওয়া যায় , সেখানে বলা হয়েছে পরিভুঃ স্বয়ম্ভূঃ, যিনি ব্রহ্মকে ঘিরে রেখেছেন। যখনই পরিভুঃ শব্দকে নিয়ে আসা হল তখনি দেবতারুপী অগ্নি সর্বব্যাপী হয়ে গেলেন। ঈশ্বর ছাড়া কেউই সর্বব্যাপী হতে পারেন না। 

স ইদ্দেবেষু গচ্ছতি।- স্বর্গ, মর্ত্য, অন্তরীক্ষে সর্বত্রই তার অবাধ যাতায়াত।যখন যজ্ঞে ঘি দিয়ে আহুতি দেওয়া হয়, সেখানে অগ্নি চার পাশে বলয় তৈরি করে, এই আহুতি সব দেবতার কাছে পৌঁছে যায়।  গীতায় তাই শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, যে যারই পূজা করুক না কেন তা আমার কাছে পৌঁছে যায়। 


ব্লগার -রবীন মজুমদার 
তারিখ -০৬-১১-২০২১
সময় - সকাল ৫:১৩ 















মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়