মহাভারতের যাজ্ঞসেনী -সপ্তম অধ্যায়
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী -সপ্তম অধ্যায়
যজ্ঞের বেদীর আগুন থেকে তার জন্ম তাই তার নাম যাজ্ঞসেনী। এই যাজ্ঞসেনীর আগুন থেকে বিচ্ছুরিত তাপে পুড়ে পুড়ে পঞ্চ পাণ্ডবের শুদ্ধতা যেন সোনার উজ্জ্বলতায় ভাস্বর হয়ে উঠেছিল মহাভারতের ক্যানভাসে।
যেই তুনে ভরা ছিল বেদের নির্যাসের দ্বারা তৈরী বান , আর সেই বানে শিকাগোর বিশ্ব ধর্ম সম্মেলনে স্বামীজী ঘায়েল করেছিলেন তামাম বিশ্বের সঘোষিত পন্ডিতদের মেকী অহংকারকে, প্রতিষ্ঠিত করছিলেন হিন্দুধর্মের আধ্যাতিক গভীরতাকে। সারা বিশ্বের মানুষষের অনুসন্ধিৎসার পিপাসা প্রাচ্যের প্রতি বাড়িয়ে তুলেছিল এক লহমায় আর হিন্দু ধর্মের সারবস্তুকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন পৃথিবীর মানুষের হৃদয়ে ।
কি আছে সেই প্রাচীন বেদের মধ্যে সর্বাপেক্ষা প্রাচীনতর ঋগ্বেদে ? ঋগ্বেদে মোট দশটি মন্ডলের মধ্যে আটটি মন্ডল জুড়ে শুধু ব্যয়িত হয়েছে অগ্নির বন্দনার স্তবে আর মন্ত্রে। মহাভারতের কবির বর্ণনায় যুগ যুগ ধরে পাঠক মনের গোপনে একটা প্রশ্ন গভীরভাবে ঘোরা ফেরা করে চলেছে, কি আছে সেই অগ্নি মন্ত্রে, যেখানে বেদীর আগুন থেকে পূর্ণ যৌবনের দূতেরা বেরিয়ে এসে মহাভারতের ধর্ম যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করে , সেই পরিবারের সদস্যদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ অংশগ্রহণে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে তারা জায়ান্ট কিলারের ভূমিকা পালন করল ? কি আছে সেই বেদে - এই সব নিয়েই সপ্তম পর্বের যাত্রা শুরু।
অগ্নির ব্যাপ্তি শুধু মাত্র প্রাচ্যের সাহিত্যে আবদ্ধ ছিল না , পাশ্চাত্যেও একইভাবে অগ্নিকে বন্দনা করতো ।
প্রাচীন গ্রীক সাহিত্যের পাতায় প্রমিথিউস নামে এক দেবতার নাম পাওয়া যায়, যিনি স্বর্গ থেকে দেবতাদের অতি মূল্যবান সম্পদ অগ্নিকে চুরি করে মানুষের কল্যানের জন্য মর্তে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি তার এই কাজের জন্য অন্যান্য দেবতাদের কুনজর এবং অভিশাপের ভাগিদার হয়েছিলেন। ঠিক সেইভাবে হিন্দু শাস্ত্রেও মাতরিশ্ব স্বর্গ থেকে অগ্নিকে নিয়ে আসার দরুন দেবতাদের বিরাগভাজন হয়েছিলেন।
বেদের পঞ্চম মন্ত্র - অগ্নিহোর্তা কবিক্রেতুঃ সত্যশ্চিএবস্তমঃ|
দেবো দেবেভিরো গমত ||
যজ্ঞের পুরোহিতকে হোতা বলা হয়। তাই অগ্নিকে এই স্তুতির মাধ্যমে বলা হচ্ছে "অগ্নিহোর্তা" অর্থাৎ,'তুমি যজ্ঞের হোতা বলে তুমি সব থেকে বেশী সন্মানের অধিকারী '। "কবিক্রেতুঃ" - যিনি বুদ্ধির দিক থেকে শ্রেষ্ঠ তিনি কবি আর কর্মবীর যিনি তিনি ক্রেতু। শুধু মাত্র ঈশ্বরই তার মাথার উপর আছেন । গীতায় ভগবান বলেছেন যে তিনি অহংক্রেতুঃ। শুভ কাজ দিয়ে মানুষের জীবন শুরু হয়। সাধারণত হিন্দু পরিবারে দুটি বড় যজ্ঞ হয়, একটি বিয়ে এবং অন্যটি শ্রাদ্ধ। এই যজ্ঞের কাজের মাধ্যমে গৃহস্থের যে বড় কাজটা হয়ে গেল তাইই ক্রেতু।
অগ্নির আরেক নাম সত্য আবার ঈশ্বরের নামও সত্য। যে অগ্নিকে মানুষ প্রতিনিয়ত দেখে থাকে, সেই অগ্নির পূজা করা হয়না, অগ্নির মাধ্যমে ভগবানের পূজা করা হয়। বেদের ঋষি যাজ্ঞবল্ক তার স্ত্রীকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলছেন ; -মানুষ নিজের সন্তানকে যে ভালোবাসে, শুধুমাত্র তার নিজের সন্তান বলে নয়, নিজের আত্মার প্রতিফলন সন্তানের মধ্যে দেখে বলে, তাকে ভালোবাসে। স্বভাবতই প্রশ্ন আসতে পারে স্ত্রী'র ক্ষেত্রেও কি তাই ? প্রসঙ্গক্রমে , একচক্রা নগরীতে যখন বকাসুরের খাদ্য হিসাবে ব্রাহ্মণ রমণী তার স্বামীকে পরিবারে স্ত্রীর ভূমিকা সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন - " পুরুষ স্ত্রীর মধ্যে প্রবেশ করে নিজেই সন্তান রূপে বেরিয়ে আসে , আজ আপনি পুত্র এবং কন্যা লাভ করেছেন , আমার প্রয়োজনীতা আপনার কাছে ফুরিয়ে গেছে, সুতরাং আমি যদি বক রাক্ষসের খাবার হিসাবে যাই তবে আমাদের পরিবারের কোন অসুবিধা হবেনা। "
ব্লগার -রবীন মজুমদার
তারিখ -০৯-১১-২০২১
সময় - সকাল ৫:১৪
মন্তব্যসমূহ