মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- বিশতম অধ্যায় || (৮৩)
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- বিশতম অধ্যায় || (৮৩)
"কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের অন্যতম প্রেরণাদাত্রী যাজ্ঞসেনীর অসাধারনত্বকে বোঝাতে গিয়ে, জন্মের শুরুতেই অভিনবত্ব এনে দিয়েছিলেন। শুধু তাই নয় সে যুগে যজ্ঞের আগুনের বেদী থেকে বেরিয়ে আসা অগ্নিকন্যা যাজ্ঞসেনীর সেই অগ্নিকন্যা শব্দটি আজ নারীজাতির অসাধারণত্ব বোঝাবার প্রতিশব্দ হয়ে মানুষের মনের শব্দকোষে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে"- পূর্বের অধ্যায়ের পর। .....
মহাভারতের সমাজ :
সেই যুগে সমাজ মেনে নিয়েছিল পুরুষদের বহুবিবাহ। আবার সমাজ অভিযোগ করেনি, যখন কোন সদ্য বিধবাকে মাঝরাতে ঘুম থেকে তুলে তার দেবর মধুর সম্ভাষনে সেই নারীকে নবজীবনের আশ্বাস শুনিয়ে নিজের সুপ্ত ইচ্ছা পূরণ করতো। সীমাহীন আগ্রহ ছিল সে যুগে পুরুষদের পর নারীর প্রতি এবং তাকে পূর্নতা দেবার যাবতীয় প্রচেষ্টা চালাতো। এই সব ঘটনার বিবরণ আছেরে পড়েছিল ঋগ্বেদে বহু উপমার ব্যবহারে।
সেদিনের সাহিত্যের কাছে মানুষ ঋণী, কেননা তার তৎকালীন সমাজে শ্ৰেণী বিভাজন এবং বর্ণ বৈষম্যে যে ছিল, সেই কথা তুলে ধরেছিলেন। সেই যুগের ভারতের অর্থনৈতিক মানচিত্রের একটা চেহারা ফুটে উঠে সামাজিক অপরাধের বর্ণনার মধ্যে দিয়ে। চোর এবং ডাকাতদের সংগঠিত অপরাধ থেকে ভারতীয় সমাজে আর্থিক স্বচ্ছলতার দৈনতা প্রকাশ পায়। অবশ্য সমাজে চুরি এবং ডাকাতি শ্রেণী বিভক্ত সমাজের বাই প্রোডাক্ট।
দারিদ্র যন্ত্রনা ছিল বলেই ঋগ্বেদে দারিদ্র নিবারনের জন্য কিছু মন্ত্র নির্দ্দিষ্ট করে রাখা হয়েছিল। কৃষি নির্ভর ভারতীয় অর্থনীতিতে কৃষি ব্যবস্থা অধিকাংশেই প্রকৃতি নির্ভর ছিল। অনাবৃষ্টি , অতিবৃষ্টি , পঙ্গপালের আক্রমণ ইত্যাদি ছিল নিত্য চাষের সঙ্গী আর সেখানে প্রকৃতির খামখেয়ালির খেসারত কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমাজের একদম নিচের তলার মানুষকে গুনতে হতো। তাদের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ কিন্তু ঋগ্বেদের পাতায় অমিল ছিল।
শ্রেণীবিভক্ত সমাজের থেকে উপজাত সংস্কৃতি হচ্ছে সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। প্রতারণা তারই এক প্রকাশ, সেই ভাইরাসটা ব্যবসা বাণিজ্যেও চালু ছিল। মাঝে মাঝে বৈদিক যুগের বহু উদাহরনে দেখা যায় যে, একটা আদর্শ সমাজের বর্ণনা কিন্তু প্রাচীনতম ঋগ্বেদে তার সমর্থন মেলে না।
যদি সমস্যাই না থাকতো তাহলে সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য পরবর্তী সময়ে মুনি ঋষিরা মানবজাতির মঙ্গলের জন্য এত বিশাল তত্ত্ব ভান্ডার তৈরি করার মানসিক তাগিদ অনুভব করতেন না। বরং এর উল্টোটাই বলা যেতে পারে, যে নিশ্চয়ই সমাজে এক জ্বলন্ত সমস্যা ছিল এবং এখন আছে যার নাগাল এখন মানুষ বুঝে উঠে সমাধানের রাস্তা পাবার প্রচেষ্টাটা, অনন্ত সময় ধরে হেজে যাওয়া পুকুরের শেওলায় আটকে পড়ে আছে।
মায়াময় পৃথিবী বা জীবনের বন্ধন থেকে মুক্তির সুর কিন্তু ঋগ্বেদের স্বরলিপিতে ছিল না। বরং জীবনের অর্থ তারা খুঁজে ছিল পার্থিব আনন্দ আর ভোগের মধ্যে।
ক্রমশঃ
মন্তব্যসমূহ