মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- একবিংশ   অধ্যায়  ||  (৮৪)   

যদি সমস্যাই না থাকতো তাহলে সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য পরবর্তী সময়ে মুনি ঋষিরা মানবজাতির মঙ্গলের জন্য এত বিশাল তত্ত্ব  ভান্ডার তৈরি করার মানসিক তাগিদ অনুভব করতেন না। বরং এর উল্টোটাই বলা যেতে পারে, যে নিশ্চয়ই সমাজে এক জ্বলন্ত সমস্যা ছিল এবং এখন আছে যার নাগাল এখন মানুষ বুঝে উঠে সমাধানের রাস্তা পাবার প্রচেষ্টাটা, অনন্ত সময় ধরে  হেজে যাওয়া পুকুরের শেওলায় আটকে পড়ে আছে----- পূর্ব অধ্যায়ের পর। ......

মহাভারতের পাতায় যাজ্ঞসেনীকে খুঁজতে গিয়ে বর্তমানের পটভূমিকায় সেই চরিত্রটির  গুরত্ব কতখানি তাঁর সমর্থন যোগ্য বিবরণের একান্ত প্রয়োজন। সেখানে আছে ইতিহাস, সাহিত্য, পুরান, দুইদুটি মহাকাব্য, প্রত্নতাত্ত্বিক ও নৃতাত্ত্বিক গবেষণা, শিলালিপি এবং বৌদ্ধ সাহিত্যে। 

 "খ্যাপা খুঁজে ফেরে পরশপাথর "- ঠিক তেমনি সাহিত্যে বিষয় খুঁজে নিয়ে এসে তাকে কাটাছেড়া করা পাঠকের জন্মগত অধিকার।সাহিত্যে ব্যাকরণ (syntax বা master ফাইল বা ড্রয়িং) থাকলে তবেই তো তার নির্মাণ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা চালানো যেতে পারে ; আর যদি না থাকে তবে পরশ পাথর খোঁজার চেষ্টা আজীবন ধরে চালালেও তার নাগাল পাওয়া যাবেনা। 

প্রসঙ্গ যদি ব্যাকরণ হয় তাহলে সেটা তো এক নির্মাণ শিল্প। বাক্য রচনা করতে গেলে শব্দের প্রয়োগ করতে হয় বা অন্যভাবে বলা যায় মানুষের মনের ভাব প্রকাশের অপর নাম যদি ভাষা হয় , তবে সেই ভাষা নিয়ে বাক্য রচনা করে যথার্থ অর্থ বহন করার জন্য যে শৃঙ্খলাকে সঙ্গে করে চলতে হয় তাই-ই  ব্যাকরণ। কিন্তু সাহিত্য হচ্ছে সৃজনধর্মী, এর  যদি কোন উদ্দেশ্য না পাওয়া গেলেও সাহিত্যের চরিত্র কোনখানেই একবিন্দু কলুষিত বা ক্ষুণ্ণ হয়না। 

সাহিত্যের জন্ম হৃদয়ে, সেখানে বাস করে আবেগ, আর আবেগ কোনদিন যুক্তি তর্কের ধার ধারেনা , কেননা ওটা তার অনধিকার চর্চা। বিশ্ব প্রকৃতির সাথে সাহিত্যের মিতালি। নদী যেমন সোজা রাস্তায় চলতে চলতে তার গতিপথ হঠাৎ পাল্টে ফেলে, গাছের ফল, ফুল যেমন কাউকে কোন কিছু না জানিয়ে স্বাভাবিক সৃষ্টির নিয়মে প্রকাশিত হয়, সাহিত্যের ক্ষেত্রেও অনুরূপ। যুক্তিবিজ্ঞান, সাধারণ বিজ্ঞান ইত্যাদির স্থান মানুষের মনের সেই কোটরে, যেখানে আছে জ্ঞানের গ্রন্থাগার আর বুদ্ধির আশ্রয় স্থল। হৃদয়ের ডাক সাহিত্যের পাতায় পাতায় কান পেতে শোনা যায়। 

এবার মনে করা যাক, প্রেমহীন , আবেগহীন , হৃদয়ের স্পর্শহীন এক দল শব্দ দিয়ে তৈরী কতগুলি বাক্য সারাটা গল্পজুড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেই গল্প পড়ে একদল পাঠক রামগরুড়ের ছানা হয়ে ভ্রু কুঁচকে তার পাঠোদ্ধার করছে। সেখানে হাসি কান্নার আর ভাবনার প্রবেশ নিষেধ কিন্তু সেটা একটা গল্প, তাহলে কেমন হতো ?

সাহিত্যের সাথে বিজ্ঞান, দর্শন, গণিত ইত্যাদির একটা সুনির্দ্দিষ্ট চারণভূমি আছে। যে যার স্বীয় পরিমন্ডলে বিরাজমান। সুতরাং, সাহিত্যকে নির্মাণধর্মী বিষয়ের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিশ্লেষণ করলে পাঠক   সাহিত্যের প্রতি সুবিচার করতে পারবেন কি ? এই প্রশ্নটা বার বার মহাভারতে ঘুরে ফিরে আসবে। 

ক্রমশঃ 

ব্লগার :রবীন মজুমদার 

কলকাতা, ২২-১২-২০২১



মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়