মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ২৩তম অধ্যায় || (৮৬)
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ২৩তম অধ্যায় || (৮৬)
" জয় " পরিমার্জন হয়ে মানবিক মূল্যবোধের অন্তর্ভুক্তিতে নতুন নাম " ভরত " নামে পরিচিতি হলো এবং জনশিক্ষার আদর্শ গ্রন্থ হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেলো । পরবর্তী সময়ে "মহাভারত "নিজেকে ধর্মশাস্ত্র, অর্থশাস্ত্র এবং মোক্ষশাস্ত্র হিসাবে বর্ণনা করছেন কিন্তু কখন নিজেকে মহাকাব্য আখ্যা দেয় নি। "ভরত "নামাঙ্কনের পর ভৃগুবংশীয় ব্রাহ্মণদের কিছু নৈতিক আদর্শ মূলপর্বের সাথে যুক্ত হয়ে নব কলেবরে বিস্তার লাভ করে গোটা কাব্য গ্রন্থটি "মহাভারত" নামে পরিচিত হয়। --------------২২তম অধ্যায়ের পর-----
ধন্য হিন্দুদের শাস্ত্র
নারী পুরুষের অধিকারকে বন্টন করতে গিয়ে পুরুষ শাসিত সমাজ যৎসামান্য অধিকার নারীদের দিয়ে বাদবাকি সবই তুলে রেখেছিল পুরুষদের জন্য। সেখানে আছে পুরুষের অসীম কতৃত্ব আর নারী জীবনকে পূর্ণ মাত্রায় আসক্তি মিটাবার নিরবিচ্ছিন্ন অধিকার।
যখন প্রশ্ন উঠেছে যদি সম্পত্তি বা অর্থ এবং স্ত্রী এই দুইয়ের মধ্যে কোনটা বিসর্জনের বিনিময়ে সংকট কালে পুরুষ শত্রুর হাত থেকে নিজের জীবন ফেরত পাবে, সেক্ষেত্রে বারবার উঠে এসেছে শত্রুর হাতে স্ত্রীকে ছেড়ে দিয়ে পুরুষ নিজেকে মুক্ত করেছে। এক্ষত্রে যেটা প্রমাণিত হয় যে, পুরুষ নারীর রক্ষক নয়, বরং নারী পুরুষের ঢাল হিসাবে ব্যবহৃত হয়েছে।
গৃহপালিত পশুকে সম্পত্তি বানাতে গেলে তাকে অর্থের বিনিময়ে ক্রয় করতে হয়, পাশাপাশি স্ত্রীকে ঘরে আনতে গেলে পুরুষ অর্থ উপাৰ্জন করে থাকে। সুতরাং স্ত্রীর অপেক্ষা গৃহপালিত পশু পুরুষের কাছে অনেকে বেশি মূল্যবান ছিল।
এই যদি তৎকালীন শাস্ত্রের ব্যাখ্যা হয়, তাহলে এটা সহজেই অনুমেয়, সমাজে নারীর স্থানটি কতখানি সংকটময় ছিল। অবশ্য শুধু নারী নয় তার সাথে যুক্ত ছিল শূদ্ররাও।
অনুর্বর জমি যেমন চাষের অনুপযুক্ত মনে করে চাষী তাকে পতিত জমি আখ্যা দিয়ে দূরে সরিয়ে রাখে, ঠিক তেমনি পরিবারে যে নারী যদি সন্তানের জন্মদান করতে ব্যর্থ হয়, তিনিও ঠিক তেমনি পরিবারে উদ্বৃত্ত হিসাবে পরিগণিত হয়।
জলে, স্থলে ও অন্তরীক্ষে নারীকে সমানভাবে অস্তিত্ব রক্ষার সংগ্রাম করে তাকে সমাজে টিকে থাকতে হতো। তার সম্পদের মধ্যে ছিল তার রূপ, যৌবন আর সন্তান উৎপাদনের ক্ষমতা। সময়ের নিয়মে এইসবই বাধা ছিল একই সূত্রে। প্রবল দৈত্য স্বরূপ সমাজের নিয়মকানুনের দরজায় ঘন্টা নাড়িয়ে একবিন্দু সাহায্যের প্রতিশ্রুতি মিলতো না। তৎকালীন সমাজে নারীর স্থান বর্তমানের পটভূমিতে ব্যাখ্যা করতে গেলে নারীর অধিকারের বিবর্তনবাদের মধ্যে খুঁজতে হবে। যাঁরা সেই প্রাচীন সমাজে ব্যতিক্রমী নারী হিসেবে নিজেদের ইতিহাসের পাতায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন তার মধ্যে অনন্য নারী সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন মহাভারতের যাজ্ঞসেনী। পাশাপাশি, এই যাজ্ঞসেনীর হাত ধরে মহাভারত যে দাবী করেছে যে সেটা ধর্মশাস্ত্র এবং মোক্ষশাস্ত্র তার যৌক্তিকতাকে আমরা খুঁজতে চেষ্টা করব, কখনো ইতিহাসে, কখনো সাহিত্যে, আবার কখনো প্রত্নতাত্ত্বিক এবং নৃতাত্ত্বিক গবেষণার পাতায় নিজেদের সীমিত বুদ্ধির আলোকে ।
ক্রমশঃ
ব্লগার : রবীন মজুমদার
২৭/১২/২০২১, কলকাতা
মন্তব্যসমূহ