মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ২৪তম অধ্যায় || (৮৭)
মহাভারত যে দাবী করেছে যে সেটা ধর্মশাস্ত্র এবং মোক্ষশাস্ত্র তার যৌক্তিকতাকে আমরা খুঁজতে চেষ্টা করব, কখনো ইতিহাসে, কখনো সাহিত্যে, আবার কখনো প্রত্নতাত্ত্বিক এবং নৃতাত্ত্বিক গবেষণার পাতায় নিজেদের সীমিত বুদ্ধির আলোকে………পূর্ব প্রকাশনার পর

মহাভারতের বিশাল ক্যানভাসে বর্ণিত সমাজকে এবং তার চরিত্রগুলি কালের নিয়মে কতখানি মানানসই ছিল আর কতখানি সময়কে অতিক্রম করে আজ ও প্রাসঙ্গিক বা আধুনিক তার বাস্তবতা খুঁজতে গেলে অবশ্যই কালের সাথে পা মিলিয়ে চলতে না পারলে তাকে ধরা যাবেনা। সমাজ বিবর্তনের চেহারাটা সেখানেই উজ্জ্বল হয়ে উঠবে আর সঙ্গে থাকবে একগুচ্ছ প্রশ্নের যুক্তিপূর্ন ব্যাখ্যা। চলার পথে প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের পাতায় আর্য্যদের আগমন ও বৈদিক যুগের সূচনার পর্বটা এড়িয়ে গেলে চলবেনা। সূচনা হলে অবশ্যিই তার শেষ হবে। বৈদিক যুগের অবসান ও তৎকালীন সমাজের স্তম্ভগুলি ( সমাজ ও তার অন্যান্য প্রতিষ্ঠান এবং আচার-আচরণ) কতখানি আধুনিক না চিরাচরিত পদ্ধতিতে চলে আসছে, তা কতখানি নিরূপিত হয়েছে বা যুগোপযোগী হয়েছে তাকে ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে পাঠক সমাজ তাকে যারপরনাই বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হবে । তারপরে গুটি গুটি পায়ে মহাভারতের সমাজের মধ্যে ঢুকে যাওয়া। কম্পারিটিভ স্টাডি রিপোর্ট তৈরি না হলে কোন কোন জানালা থেকে ধর্মকে, অর্থনীতিকে আর মোক্ষের বার্তাকে মহাভারতের বায়ুমন্ডলে মিলে মিশে একাকার হয়ে , তার ঘ্রান মানুষের হৃদয়কে প্ররোচিত করেছে তার আদর্শ জীবনের ভাবনায়, তাকেও ডকুমেন্টেশন করতে হবে। কেন মহাভারত, এই বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মহাকাব্য হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে আজও সে সম্মুখপানে এগিয়ে চলছে, তার রহস্য এর মধ্যেই লুকিয়ে আছে।
প্রয়োজনকে লক্ষ্য ভেবে মানবসংসারে একাধারে বহু সৃষ্টি এবং যুগপৎ পরিবর্তন এসেছে। প্রত্যেক আচার-আচরণের সামাজিক অনুমোদন পেয়েছিলো এবং সমাজটা কি কি কারণে প্রাচীন অভ্যাসকে ঝেড়ে ফেলে দিতে বাধ্য হয়ে ছিলো, তাকে সময়ানুক্রমিক ভাবে তুলে ধরতে না পারলে একটা সময়ের সাথে অপর আরেকটি সময়ের তুলনামূলক আলোচনা চলতে পারে না, সুতরাং উপসংহার সে তো সুদূর পরাহত।
চলার পথে সত্য অনুসন্ধানের সমস্যা অবশ্যিই আছে , তা হল ,যুগে যুগে ইতিহাসকে শাসকরাই প্রভাবিত করেছে, সুতরাং তাঁদের অন্ধকারময় দিকটা যে চিরকালই গোপন থাকবে সেটা বলা বাহুল্য, তবুও মানুষ দ্বিতীয় কোন উপায় না থাকায় ইতিহাসকেই আশ্রয় করে। কিন্তু লক্ষ্য বস্তু সম্পর্কে স্থির চিন্তা এবং আমাদের যথাযথ বুদ্ধি ও বিবেচনার উপর নির্ণয়তার উপর অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্ভরশীল। তাই সত্য খোঁজার লক্ষ্যে, সেই সময়কার, সমাজের বিবর্তনের ইতিহাস, সাহিত্য, নৃতত্ত্ব বিজ্ঞান এবং প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণার রেফারেন্সগুলি কষ্টি পাথরের কাজ করবে।
ক্রমশঃ
ব্লগার : রবীন মজুমদার
০৩-০১-২০২২, কলকাতা
মন্তব্যসমূহ