মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ২৬তম অধ্যায় || (৮৯)
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ২৬তম অধ্যায় || (৮৯)
সম্পর্ক যেখানে চাওয়া পাওয়ার, সেখানে প্রাপক যে সর্বান্তঃকরণে দাতাকে তৈলমর্দন করবেন, সেটা তো বলা বাহুল্য। তাই সেই স্বপ্নের রাজকুমারকে অকৃপণ ভাবে রূপরসে, গন্ধে, শৌর্য্যে বীর্য্যে, আগাম আপ্যায়নের প্রতিশ্রুতিতে, প্রার্থনায় সমগ্র ঋগ্বেদের তিন-চতুথাংশ জায়গাকে আলিঙ্গন করে রেখেছে 00000000 ২৫তম সংখ্যার পর। ...................
দেবতাদের প্রশংসিত হবার কারনগুলি সেই যুগের সামাজিক মূল্যবোধের পরিপেক্ষিতে বিকশিত হয়ে ছিল তাকে সুক্ত আকারে ঋগ্বেদের অধিকাংশ শ্রুতিতে তার বর্ণনা করা আছে। যে কোন সমাজের মূল্যবোধ নির্ভর করে কি ধরনের রীতিনীতির দ্বারা সমাজ পরিচালিত হতো, সেটাই ছিল সমাজের উৎকর্ষতার অন্যতম মাপকাঠি। তার স্ফূরণ প্রতিবিম্বিত হয় সমাজে ব্যক্তির আচরণের মধ্যে দিয়ে।
পার্থিব জগতের ঐশী সুখ, আরাম, স্বাছন্দ , নিরাপত্তা, ধন সম্পত্তি ইত্যাদি দিয়ে যখন সাধারণ মানুষের কামনা বাসনার তৃপ্তি যে দেবে, তাকে তো মানুষ মাথায় করে রাখবে। হোকনা, সেই রাজা কোন অন্য রাজ্যের সাধারণ মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে এসে তাদের দেশের সাধারণ মানুষকে খাওয়াচ্ছেন , হোক না সেটা যুদ্ধ নামক এক হত্যালীলার চূড়ান্ত নিদর্শন আবার দস্যুদের মতো লুণ্ঠন করার মতো গর্হিত অপরাধে অপরাধী , সেটাও গৌণ , মুখ্য হচ্ছে একদল মানুষ যারা আর্য নয় তাদের কান্না,ঘাম,রক্তের উপর আর্য্যদের সুখের বাগানটা তৈরী করা। এই রাজাটি ছিলেন ইন্দ্র। তাই আর্যসমাজের সাধারণ মানুষের ইতিহাসকে লিখতে গিয়ে তৎকালীন মানুষের আশা আকাঙ্খার কথা ঋগ্বেদে বর্ণনা করেছেন সে যুগের ঋষিগন। সুতরাং, সেই ইন্দ্রের ন্যায় দাতা মহাপুরুষরা পূজ্যিত হবেন এ আর নতুন কি!
যুগে যুগে পৃথিবীর ইতিহাসকে যদি পৰ্য্যালোচনা করা যায়, তবে একটা জিনিস ভীষন লক্ষণীয় যে, ইতিহাস চিরকালই বিজয়ীদের নিয়ে লেখা হয়েছে। কোনখানে ইন্দ্রের দস্যুবৃত্তি সমালোচিত হয়নি, বিজিত পক্ষের কোন বীরের জীবনগাঁথাও লেখা হয়নি, কত শিশু পিতৃহারা বা কত স্ত্রী স্বামীহারা হয়েছিল তার হিসাব বা কত জনপদ ধুলায় মিশে গিয়েছিল তা কখনো পাওয়া যায় নি। সাহিত্যের ইতিহাস ও তাই। সাধারণ মানুষ এই তো সেদিন গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার পর কাহিনীর নায়ক নায়িকার মর্যাদা পেয়েছে, তার আগে তো দেবতা আর রাজ রাজার বর্ণনা সাহিত্যের বিষয় বস্তু ছিল।
তাহলে, আমরা কি এটাই ধরে নেব, যে, স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষ তাদের স্বার্থের পরিতৃপ্তিতে মুখরিত হয়ে শক্তিমানদের ভজনা করতো। সমাজের মূল্যবোধের কয়েনের একপিঠ দেখিয়ে অন্যপিঠকে গোপন করে রাখতো।
যারা আর্য নয় তারা লুন্ঠিত হতে পারে, তাদের কে হত্যা করা যেতে পারে, তাদের সম্পত্তি হরণ করা যেতে পারে কিন্তু তার রেকর্ড কোথায় থাকবে না।
ব্লগার: রবীন মজুমদার
স্থান : কলিকাতা
তারিখ : ১৮-০১-২০২২
মন্তব্যসমূহ