মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ২৭তম অধ্যায় || (৯০)
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ২৭তম অধ্যায় || (৯০)
যারা আর্য নয় তারা লুন্ঠিত হতে পারে, তাদের কে হত্যা করা যেতে পারে, তাদের সম্পত্তি হরণ করা যেতে পারে --------- পূর্ব প্রকাশিতর পর -------
সংঘর্ষটা খাবারের লড়াই, সীমিত ভোগের উপকরণ আর অসীম চাহিদা, তাই চাহিদার সাথে যোগান মেটানোর লড়াই, সেখানেই শক্তির ব্যবহার, সবরকমের ভোগের উপকরণের স্থায়িত্বের লড়াই। তাই ফিরে দেখা ইতিহাসের পাতায়, সেখানেই উত্তর লেখা আছে আজকের মানুষের সাথে মানুষের সঙ্গবদ্ধ লড়াইয়ের কাহিনীর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
এই সেই প্রাণী, যারা পারেনা বাঁদরের মতো দ্রুতগতিতে গাছে চড়তে, চিতার মতো খ্রিপ্ততায় এপ্রান্ত থেকে ও প্রান্তে ছুটে যেতে , এক কামড়ে যথেষ্ট বিষ না থাকায় সাপের মতো অন্যান্য প্রাণীর সমীহ আদায় করতেও তারা পারে না , গায়ে যথেষ্ট লোম না থাকায় ঠান্ডায় কাতর, খাদ্য সংগ্রহকদের তালিকায় একদম পিছিয়ে পড়া প্রাণী, থাকার মধ্যে শুধু একটি উৎকৃষ্ট মগজ আর তাকে মূলধন বানিয়ে একদিন সে প্রাণীকুলের রাজা, সে হোল মানুষ। কালক্রমে একটি বিদ্যার অধিকারী হয়ে, অনেকটা আজকের দিনের পরমাণু অস্ত্রের মতো, তা দেখিয়ে পশুকুলকে দিব্যি জূজূ বানিয়ে আগুনের মাধ্যমে আনন্দ সহকারে খাবারকে সুস্বাদু করে সেদিন থেকে বানিয়ে খাচ্ছে।
আরেকটি যুগান্তকারী ঘটনা হলো মনের ভাব আদান প্রদানের মাধ্যম ভাষার সৃষ্টি। পরবর্তী সময়ে পূর্ব প্রজন্মের কীর্তিকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেবার জন্য লিখিত ভাষার প্রচলন। এতে করে পূর্বের মানুষের অভিজ্ঞতার উপর আজকের মানুষের জ্ঞানের সৌধ নির্মাণের কাজটা সহজ হলো। এইভাবেই এগিয়ে চললো মানব সভ্যতা।
যেসব বৈজ্ঞানিকরা মানুষের বংশগতির জন্য জিনকে দায়ী করে থাকেন, তারাই বলেন পরিবেশ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জিনের চরিত্রকে প্রভাবিত করে এবং তার প্রকাশ পায় ব্যক্তির আচরণে।
সেদিনের মানুষ হাজার হাজার বছর ধরে কঠোর অধ্যাবসায়, নিজেদের রক্ষা করার জেদে, অতন্দ্র প্রহরীর মতো থেকে, প্রতিনিয়ত অজানা আশঙ্কায় , নিজ গোষ্ঠীর বাইরের প্রজাতিকেও সন্দেহ করতে শিখেছিল এবং সেই শিক্ষা থেকে তারা তাদের নিরাপদ রাখতে পেরেছিল। সময়ের সাথে সাথে সেই গহন বনানীর অধিকাংশেই মানুষের বসতির জন্য নির্ধারিত হওয়াতে সেই পশুরা অনেকে দূরে চলে গেছে কিন্তু তাদের সহজাত প্রবৃত্তিগুলি মানুষের মনের গভীরে প্রোথিত হয়ে গেছে। তার সাক্ষর মানুষ আজও বহন করছে এবং আগামী দিনে তার পরিমার্জন হবে কিনা সন্দেহ। সেদিনের ইন্দ্ররা তার সাক্ষী, আজকের শক্তিধর দেশ, দেশের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক দল আর পরিবারের শক্তিমানরা শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানের লড়াইয়ে সামিল। একদল চাটুকাররা সেই খাদ্যের লোভে বিরামহীনভাবে চাটুকারিতা করে যাচ্ছে।
যদিও ঋগ্বেদের বহু সূক্ততে ইন্দ্রকে প্রশংসা করা হয়েছে কিন্তু বর্ষ প্রাচীন ঋগ্বেদকে মূল্যায়ন করার ব্যাপারে বেদের ভাষ্যকারদের ব্যাখ্যাকে বেশী প্রাধান্য দেওয়া সমীচীন।
ব্লগার : রবীন মজুমদার
কোলকাতা
১৯-০১-২০২২
মন্তব্যসমূহ