মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ২৮তম অধ্যায় || (৯১)

 মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ২৮তম  অধ্যায়  ||  (৯১)  

যদিও ঋগ্বেদের বহু সূক্ততে ইন্দ্রকে প্রশংসা করা হয়েছে কিন্তু  বর্ষ প্রাচীন ঋগ্বেদকে মূল্যায়ন করার ব্যাপারে বেদের ভাষ্যকারদের ব্যাখ্যাকে বেশী প্রাধান্য দেওয়া সমীচীন -পূর্ব অধ্যায়ের পর---

কুয়াশার তরঙ্গ

 
রাত্রি তার অন্ধকারকে সঙ্গে  নিয়ে ভোরের আগমনের বার্তা  জানিয়ে বিদায়ের প্রারম্ভে যে  আলো-আধারির সাথে কুশায়ার আচ্ছাদনে ঢেকে রেখেছিল  নদীর প্রান্তর আর তার মধ্যে দিয়ে আপনমনে বয়ে যাওয়া সিন্ধু নদের  কুলু কুলু মৃদু শব্দ  যুক্ত হয়ে যেন এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। অনতিদূরে, স্বামী বিবেকানন্দ সেই কুয়াশার চলমান ঢেউয়ের একের পরে  আরেক ঢেউয়ের  আছড়ে পড়ার বিলম্বিত সময়ে অবলোকন করলেন এক ঋষি সিন্ধু নদের তীরে বসে  দেবী সরস্বতীর আবাহন মন্ত্রের মূর্ছনায়  সারা প্রকৃতিকে আলোড়িত করছিলেন। স্বামীজী সেই ঋগ্বেদের  মন্ত্র জানতেন , নিজের অজান্তে তিনি গলা মেলালেন, কখন যে তিনি সেই  সুরের সাথে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলেন, আর   কখন যে তার মনের বদ্ধ  কপাট খুলে গিয়ে এক ঝলক মুক্ত বাতাস সমগ্র মনটাকে নাড়া দিয়ে গেল, তিনি বুঝতেই  পারলেন না।  যখন সম্বিৎ ফিরে এল, তিনি উপলদ্ধি করলেন তার সার্বজনীন আবেদনকে, যা দেশ ও কালকে বেঁধে ফেললো তার অতুলনীয় ঐশর্য্যে।"এ যেন দিব্য দর্শন " 
- পরবর্তী সময়ে তিনি তার প্রিয় শিষ্যা নিবেদিতাকে এই ঘটনাকে  বলেছিলেন। এটা ছিল স্বামীজীর জীবনের অনেক দিব্য দর্শনের মধ্যে অন্যতম।  

ঈশ্বর আর জগৎ যে এক এবং অভিন্ন সুরে বাঁধা আর সেই সত্যটাই আপামর মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার সংকল্প তিনি গ্রহণ করলেন। বেদেই একমাত্র  ভারতবর্ষের জাতীয় সুর। যে সুর সমগ্র মানবজাতির অন্তরে ঘুমন্ত অবস্থায় অবস্থান করছে , তাকে জাগিয়ে তুলে সেই সত্যকে প্রকাশ করাই স্বামীজীর জীবনের ব্রত হয়ে দাঁড়াল। 
 
প্রসঙ্গত ১৯৬১ ,বার্লিনে "ম্যাক্স প্লানক ইনস্টিটিউট ফর হিউমান ডেভেলপমেন্ট" নামে ( বর্তমান নাম ম্যাক্স প্লান্ক সোসাইটি)   এক আন্তর্জাতিক  ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত সোশ্যাল সায়েন্স রিসার্চ অর্গানিজশন, তারা কয়েক বছর আগে একদল  সংগীতজ্ঞর উপর তাদের রিসার্চ সংগঠিত করে। এর বিষয়বস্তু ছিল একই গানের  সুর ভিন্ন ভিন্ন সিম্ফনির  মধ্যে দিয়ে মানুষের ব্রেইনে  প্রবেশ করানোর পর কি ইউনিফর্ম সিগন্যাল পাওয়া যায়, না , তার ব্যতিক্রম ঘটে। MRI করার সময় ব্রেইনের সিগনালের উপর ভিত্তি করা গ্রাফের উপর চিকিৎসার অভিমুখ নির্ধারিত হয়। ঠিক তেমনি সেই   MUSICIAN দের ব্রেন স্ক্যান   চালু রেখে একই গান ভিন্ন ভিন্ন সিম্ফনি থেকে ভিন্ন ভিন্ন MUSICIAN দের ইনপুট ডিভাইস দিয়ে ব্রেইনে পাঠানো হয়। খানিকক্ষণ বাদে স্ক্যানের রিপোর্টে দেখা যায় যে, সবার ব্রেন থেকে যে সিগন্যালটা পাওয়া যায় তা অভিন্ন। একই ধরনের কাজ যদি সংঘবদ্ধ মানুষ করে তাহলে তার ওয়েভ লেংথ একই হয়ে যায়। 

এটা প্রমাণিত যে ব্রেন অন্যান্য রিসেপ্টার অর্গানের মাধ্যমে ইনপুট নেয়, তাকে নিয়ে অন্তর্জগতে সেই ইনপুট ডাটা প্রবেশ করে, অবশ্যই সেই ডাটা প্রাথমিকভাবে টেম্পোরারি স্টোরেজ এরিয়াতে থাকে। তার পরে আর হুবহু সেই ডাটা থাকেনা, কেননা অন্তর্জগতে মনের বাস। একই জিনিস একেক জনের ক্ষেত্রে  বহু রকমের প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। যেমন, সে কিছু জিনিস রাখতে পারে, কিছু জিনিস ফেলে দিতে পারে, আবার কিছু জিনিসকে  মিশ্রিত করে আউটপুট দিতে পারে। কিন্তু তার ব্যাতিক্রম আছে, যেখানে একই ধরনের আউটপুট দিয়েছে ব্রেন ,যেটা প্রমাণিত হয়েছে। ঘটনার গভীরে গেলে বোঝা যাবে স্বামীজীর জাতীয় সুরের ব্যাখ্যা স্বামীজী বেদের ছায়ায়  নিজেই প্রকাশ করে গেছেন। 

ব্লগার - রবীন মজুমদার 
কলকাতা 
২১/০১/২০২২


 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৩২)বোধোদয়