মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ২৯তম অধ্যায় || (৯২)
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ২৯তম অধ্যায় || (৯২)
"ঈশ্বর আর জগৎ যে এক এবং অভিন্ন সুরে বাঁধা আর সেই সত্যটাই আপামর মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার সংকল্প তিনি গ্রহণ করলেন। বেদেই একমাত্র ভারতবর্ষের জাতীয় সুর। যে সুর সমগ্র মানবজাতির অন্তরে ঘুমন্ত অবস্থায় অবস্থান করছে , তাকে জাগিয়ে তুলে সেই সত্যকে প্রকাশ করাই স্বামীজীর জীবনের ব্রত হয়ে দাঁড়াল"-- গত সংখ্যার পর....
সামনে মহাভারতের যাজ্ঞসেনীর সাইন বোর্ড আর ভিতরে একান্তই নীরস জ্ঞানসর্বস্ব বেদ, বেদান্ত, উপনিষদ এবং ইতিহাসের ছড়াছড়ি। বন্ধুর পথকে অতিক্রম করলেই তবে সহজ পথের দেখা মেলে। পথের জটিলতা খুলবার "রুট কজগুলি" বেদ এবং সমাজ বিবর্তনের ইতিহাসের পাতায় আছে। তাই উদ্ধারের জন্য অবশ্যই তাদের ঘরে কড়া নাড়তে হবে।
আজকের দিনের মতো তো নয় যে, একবার লেখকের নামটা ব্র্যান্ড হিসাবে এস্টাব্লিশ হয়ে গেলো, তার পর , "যাহা লিখিলাম তাহাই ছাপাইলাম" - এই গোছের মানসিকতা তখনকার দিনের ঋষিদের ছিলনা। পেটের ও প্রাণের দায়ে আজকের শিল্পী -সাহিত্যিককে অনেক কিছুকে সমাজে দেখে চক্ষু বুজে থাকতে হয়। যাঁরা সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে গেছেন তারা লোরকা হয়ে গেছেন , গৌরী লঙ্কেশ হয়ে গেছেন ইত্যাদি ইত্যাদি , আরো কত উদাহরণ রয়ে গেছে।
বেদের ঋষিরা গভীর ধ্যানের মাধ্যম যে সব সনাতন (সর্বজনগ্রাহ্য় একটি প্রচলিত বিশ্বাস ) সত্যগুলি উপলদ্ধি করেছিলেন তাকেই তারা তাদের শিষ্যদের শুনিয়েছিলেন। যেমন মাধ্যাকর্ষণের গতি প্রকৃতি মানুষ বিশ্বের দরবারে তুলে না ধরলেও সেই সত্যটা একই রকম থাকতো , ঠিক তেমনি বেদের সত্য গুলি মানুষ ভুলে গেলেও তার প্রোটোকল অপরিবর্ত থাকতো। সেই সঙ্গে তারা এও বলেন, যে উপলদ্ধি এবং জ্ঞান তারা অর্জন করেছিলেন তা যেন সাধারণ মানুষের জীবনে পৌঁছে যাক এবং তারা যেন অন্ধকারের পর্দা সরিয়ে সত্যের আলোতে তাদের জীবনকে আলোকিত করুক বেদের আলোকে।
বেদ কিন্তু বিশেষ কোন ব্যক্তির রচনা নয়, তাই বেদের সৃষ্টিকর্তাকে অপৌরুষেয়( কোন পুরুষ দ্বারা নয়, ঈশ্বর প্রদত্ত জ্ঞান) বলা হয়। বেদ শব্দটি বিদ্ ধাতু থেকে এসেছে, যার অর্থ জানা বা জ্ঞান। তাহলে, বেদ কথার অর্থ জ্ঞান আর জ্ঞান বা চেতনার অপর নাম ঈশ্বর , সুতরাং বেদ ও ঈশ্বর একই। ঈশ্বর যদি অনন্ত হন তাহলে বেদও অনন্ত। বেদ চৰ্চা বুদ্ধিকে প্ররোচিত করে অনন্তকে জানতে।
অধ্যাত্বিকতাবাদ প্রাথমিকভাবে মার্ক্সিয় দর্শনের মতো শ্রেণীহীন সমাজের ধারণাকে মান্যতা দেয় না, তারা বলেন, বাস্তবে তা সম্ভব নয় ,(পরে আলোচনা হবে ) কিন্তু সেই মানুষ যখন আধ্যাতিক জগতে প্রবেশ করে তখন মানুষ উপলদ্ধি করে মানুষে মানুষে প্রভেদটা আসলে মায়া ছিল। এই শ্রেণীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা একমাত্র অধ্যাকিতাবাদই পারে। এটাই বাস্তব, এটাই বিজ্ঞান। স্বামীজী এই সত্যটা ধরতে পেরেছিলেন, তাই তিনি সদর্পে ঘোষণা করেছেন যে, এই জাতীয় সুরটিই হচ্ছে বেদ আর তার ভিত্তি হচ্ছে "আমিই ঈশ্বর" - এই মন্ত্র ।
ব্লগার : রবীন মজুমদার
কলিকাতা
২৪-০১-২২
মন্তব্যসমূহ