মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৩০তম অধ্যায় || (৯৩)
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৩০তম অধ্যায় || (৯৩)
মানুষ যখন আধ্যাতিক জগতে প্রবেশ করে তখন মানুষ উপলদ্ধি করে মানুষে মানুষে প্রভেদটা আসলে মায়া ছিল। এই শ্রেণীহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা একমাত্র অধ্যাকিতাবাদই পারে। এটাই বাস্তব, এটাই বিজ্ঞান। স্বামীজী এই সত্যটা ধরতে পেরেছিলেন, তাই তিনি সদর্পে ঘোষণা করেছেন যে, এই জাতীয় সুরটিই হচ্ছে বেদ আর তার ভিত্তি হচ্ছে "আমিই ঈশ্বর" - এই মন্ত্র। ---- পূর্ব অধ্যায়ের পর। ...
প্রচলিত ধ্যানধারণার বাইরে মানুষকে বেরিয়ে আসা ভীষণ কঠিন কাজ। আর এই ধ্যানধারণার উপর ভিত্তি করেই মানুষ পারিপার্শিক জগৎকে দেখতে অভ্যস্ত। মানুষের জগৎটা তাহলে কি ? যোগ দর্শনের মতে, এর উত্তরের বলা যায় যে , দীর্ঘ দিনের পরম্পরা, অভ্যাস, সংস্কৃতির আলোকে মানুষ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে যে সংবাদটা তার চিত্ত গ্রহণ করে যে প্রতিক্রিয়া দিয়ে থাকে সেটাই তার জগৎ।
আগের পর্বে আলোচনা করা হয়েছে ঈশ্বর বলতে বোঝায় চেতনাকে । আর চেতনার বাস মানুষের মনের গভীরে। তবে কি প্রত্যেক মানুষের মনে আলাদা আলাদা ঈশ্বর বা চেতনা বাস করে থাকে ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে অদ্বৈত বেদান্তের মতে " আমি কে" ? এই প্রশ্নের ব্যাখ্যাতে ।
বিশ্বকবির জীবন দর্শনে মানব জীবন হচ্ছে তিনভাগ দুঃখের সাগরে ভরা আর শুধু এক ভাগ সুখের অনুভূতি নিয়ে বেঁচে থাকা। একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় যে, একটা শিশু যখন এই পৃথিবীর মাটি স্পর্শ করেই সে কেঁদে উঠে। সে অবচেতন মনে বুঝতে পারে, বন্ধন আর দুঃখের জীবন তার আজ থেকে শুরু হল। জীবনের অপর নাম প্রতিকূলতা, পদে পদে সংঘাত আর তার চারণভূমি মানবের অন্তর প্রদেশ। আবার মৃত্যুর সময় সব দুঃখের যে শেষ হয়েছে তার রেশ ঠোঁটের কোনে হালকা হাসির বেশে উত্তর দিয়ে যায়।
একটা জাতিকে যদি উপলদ্ধি করতে হয় তাহলে তার দর্শনকে বোঝা দরকার, আর দর্শনকে বুঝতে গেলে একটু দার্শনিক হতে হবে বই কি। প্রমান ছাড়া বিজ্ঞান কাউকে গ্রহণ করে না।কিন্তু জানার পরিমান এতটাই অল্প তাতে মানুষের জানার খিদে মেটেনা। প্রমান আর আত্মপোলদ্ধি এই দুইয়ের মধ্যে ফারাক আছে। বিজ্ঞানের মধ্যে সব থেকে নির্ভরযোগ্য বিষয় হল অঙ্ক, শুধু উত্তর মিললে হবেনা তার সূত্রকে বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত না হলে সেই সমাধানের কিন্তু বিজ্ঞানের ঘরে জায়গা হবে না। এহেন ছুঁচিবায়ুগ্রস্ত বিজ্ঞান হয়ত অনেক ক্ষেত্রে সভ্যতার ক্রমবিকাশের গুরুত্বপূর্ণ সৈনিক হতে পারে কিন্তু সে সমগ্র নয়, অংশ মাত্র।একটি মানুষের জীবনের অভিমুখ কেমন হবে তা নির্ধারণ করে তার তার পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত জীবন দর্শনের উপর। আবার জীবন দর্শন নির্ভর করে বাস্তব পরিস্থিতির উপর। একে অন্যের পরিপূরক।
বেদের যুগের ঋষিরা অতিন্দ্রীয়ের মাধ্যমে মানব জীবনের সেই বাস্তব পরিস্থিতিকে উপলদ্ধি করেছিলেন। সময়ের নিয়মে মানুষ জয় করতে শিখেছে জড় প্রকৃতিকে কিন্তু জয় করতে পারেনি নিজেকে এবং সেই পরাজয়টাই তার চিরস্থায়ী দুঃখের কারন। যাদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল এই দুঃখ থেকে মানুষের মুক্তির স্থায়ী সমাধানের রাস্তা বাতলানো এবং তারা শুধুমাত্র রাস্তা দেখিয়েই ক্ষান্ত থাকেন নি, বরং, যুগে যুগে সেই চর্চাকে প্রত্যেক মানুষের ঘরে ঘরে যাতে ছড়িয়ে পরে তার জন্য এক পরম্পরা তৈরী করে গেছেন। আচার্য্য শঙ্করাচার্য্যের পর, সেই আন্দোলনের ধারক বাহক হলেন স্বামী বিবেকানন্দ ।
ক্রমশঃ
ব্লগার - রবীন মজুমদার
কলিকাতা
২৮-০১-২০২২
মন্তব্যসমূহ