মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৩১তম অধ্যায় || (৯৪)
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৩১তম অধ্যায় || (৯৪)
চেতনার বাস মানুষের মনের গভীরে। তবে কি প্রত্যেক মানুষের মনে আলাদা আলাদা ঈশ্বর বা চেতনা বাস করে থাকে ? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে অদ্বৈত বেদান্তের মতে " আমি কে" ? এই প্রশ্নের ব্যাখ্যাতে । -গত সংখ্যার পর ---------
এক জীবনে পরিপূর্ণতার আস্বাদ পেয়েছে এমন মানুষ ব্যবহারিক জীবনে নেই বললেই চলে। এই পৃথিবীতে সব রকমের দুঃখের স্থায়ী সমাধান বলে কিছুই নেই। এই রকম একটা অবস্থায় দাঁড়িয়ে অদ্বৈত বেদান্ত দাবি করছে, মানুষ যদি একবার জানতে পারে " আমি কে'র " - যথার্থ স্বরূপটা, তাহলে এই দুঃখময় সংসারের ওপারে যে সুখের যে নদী সদাই প্রবাহমান তার সাথে সখ্যতা হবে আর তার সুদূরপ্রসারী ফল হিসাবে মানুষের ভাবনার অতীত এক অনাবিল আনন্দের চিরস্থায়ী অনুভূতির অধিকারী হবেই।
পাওয়া যেখানে চাওয়াকে অতিক্রম করে যায় তখনতো অখণ্ডের সাথে খণ্ডিতের আর ব্যবধান থাকেনা। ধরা যাক, মহাকবি কালিদাস ও অন্যান্যরা জেনে ফেলেছেন "আমি কে'র " ব্যাখ্যা, তাহলে তার বিখ্যাত বিরহতত্বের আঁধারে অন্যতম সৃষ্টি "মেঘদূত" কাব্য গ্রন্থটি লেখা হতো না, যক্ষতো সবই বুঝে গেছে তার কারনটা, তাই সে কেন তার প্রেমিকার বিরহে কাতর হবে ; আলেকজান্ডার ভারত আক্রমন করতেনই না, বাস্তিল দুর্গের পতনই হতো না , বিশ্ব যুদ্ধও সংগঠিত হতো না, প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে হিটলারকে সোভিয়েত আক্রমন করতে হতো না , বোমা-ই শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি সেটাকে প্রমান করার জন্য বোকার মতো আমেরিকাকে হিরোশিমাকেই নির্দিষ্ট করতে হতো না; কার্ল মার্ক্সকে শ্রেণী সংগ্রাম , দাস ক্যাপিটাল কষ্ট করে লিখতে হতো না , বৃটিশরা হিন্দুস্থান আর পাকিস্তান ভাগ করার দরকার পোরতো না, ধর্মকে কি সুন্দরভাবে কাজে লাগিয়ে মানুষকে বোকা বানানোর রাজনীতি করার দরকার পড়তো না, আর গান্ধীজিকে কোট আর পাতলুন খুলে উলঙ্গ ভারতবাসীর সঙ্গ দেবার প্রয়োজন পড়তো না ; বোকাসোকা জনসাধারণকে প্রতি পাঁচ বছর অন্তর অন্তর প্রবঞ্চক রাজনৈতিক নেতাদের আপ্তবাক্যকে বেদবাক্য ধরে নিয়ে ধোকা খাবার পরম্পরা সৃষ্টি করতে হতোনা। সমাজে ঘরেলু হিংসা হোতনা, রাষ্ট্র যে শোষনের যন্ত্র, তারই অস্তিত্বই থাকতো না।
ক্রমশঃ
ব্লগার - রবীন মজুমদার
কলিকাতা
৩০-০১-২০২২
মন্তব্যসমূহ