মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৩২তম অধ্যায় || (৯৫)
মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৩২তম অধ্যায় || (৯৫)
এই পৃথিবীতে দুঃখের স্থায়ী সমাধান বলে কিছুই নেই। এই রকম একটা অবস্থায় দাঁড়িয়ে অদ্বৈত বেদান্ত দাবি করছে, মানুষ যদি একবার জানতে পারে " আমি কে'র " - যথার্থ স্বরূপটা, তাহলে এই দুঃখময় সংসারের ওপারে যে সুখের যে নদী সদাই প্রবাহমান তার সাথে সখ্যতা হবে আর তার সুদূরপ্রসারী ফল হিসাবে মানুষের ভাবনার অতীত এক অনাবিল আনন্দের চিরস্থায়ী অনুভূতির অধিকারী হবেই। ---------- পূর্বের অধ্যায়ের পর। ....
উত্তোরণ :
গভীর ধ্যানে উৎসারিত উপলদ্ধি গুলিকে মুনি ঋষিরা মানব জাতির কল্যাণের জন্য অনুভব করেছিলেন। কিন্তু, যে কোন তত্ত্বকে বাস্তবায়ন করার পথে কতগুলি প্যারামিটার আছে, সেটা নির্ভর করে, কোথায় সেটা প্রয়োগ করা হবে তার প্রাসঙ্গিকতার উপর। সেই কন্ডিশনগুলি ফুলফিল না হলে তত্ত্বের সাথে বাস্তবের ফারাকটা উজ্জ্বল হয়ে উঠে।প্রয়োজনীয় অদলবদল না করলে সেটা তত্ত্বের আকারেই থেকে যায়।
অন্তরায় কোথায় :
প্রাচীন কালে মানুষের জ্ঞানের ভান্ডার সীমিত থাকার কারনে, দর্শনকেই জ্ঞানের মূল ভান্ডার হিসাবে বিবেচিত হতো। জীবন একটা প্রবাহের ন্যায় সদাই বয়ে যাচ্ছে, প্রতি বাঁকেই জীবন ও জগৎ নিয়ে বহু কৌতূহল মানুষকে নাড়া দিয়ে যেত। জ্ঞানের শূন্য থালি নিয়ে জ্ঞানীর কাছ থেকে যা সংগ্রহ করে আনতো তাতে খানিকটা কল্পনার মিশ্রণ দিয়ে থলেটাকে পূর্ন করা হতো। বিবর্তনের নিয়মে একে একে ধ্যান-ধারণার ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসে। মানুষ কষ্টি পাথরে ঘষে প্রাচীন দর্শনকে পুনরায় পরীক্ষা করে ঘরে নিতে শিখলো।
জ্ঞান ও প্রজ্ঞা- এই দুইয়ের মধ্যে দর্শনের ক্ষেত্রে প্রজ্ঞাকেই প্রধান বিষয় বলে গণ্য করা হয়। বিদ্যা অভ্যাসের মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করা যায়, সেই অভ্যেস যে কেউ করতে পারে কিন্তু জ্ঞানকে হৃদয় দিয়ে উপলদ্ধি করে,যা কিছু প্রকাশিত হয়, তাই-ই প্রজ্ঞা এবং সেটা সীমিত মানুষই এই সমাজে করতে পেরেছে। পূর্ববর্তী ফলাফলের ভিত্তিতে এবং অভিজ্ঞতার নিরিখে দর্শনের প্রয়োগ হয়।
ধর্মের গতিশীলতা : আজ থেকে ২০০০ হাজার বছরের পুরোনো কোন ধর্মগ্রন্থের কথা বা প্রাচীন কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের বহুল প্রচারিত বাণী আজকের দিনে প্রমান সাপেক্ষ হতেই পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় পরিবর্তন বর্তমান দাবি করতেই পারে। সেখানে প্রাচীন সিদ্ধান্ত গুলি ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃত তাই তাকে পরিবর্তন করে যাবে না, এই সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ ভুল। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, একদিন পাদ্রীরা আকাশ থেকে চার্চে যে বজ্রপাত হয় , তাকে তারা শয়তানের চক্রান্ত বলে বর্ণনা করতো এবং তা সাধারণ মানুষের পাপের কারণেই হয়েছে, তাই চার্চ সারাবার অর্থ সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আদায় করতো। কিন্তু এই বিদ্যুৎ বা বজ্রপাত পড়াকে যখন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য "লাইটনিং কন্ডাকটর" এলো তখন পাদ্রীরা ভীষণ কঠিন পরিস্থিতিতে পড়ে গেল। এই রকম বহু উদাহরণ আছে।
প্রমান ছাড়া বিজ্ঞান কখনও কোন কিছুকে গ্রহণ করে না, সেখানে বিজ্ঞানের মতোই কোন অতীন্দ্রিয় জ্ঞানকে প্রমান ছাড়া ধর্ম গ্রহণ করে না। " আমি কে " এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে অদ্বৈত বেদান্তের দর্শনে। আবার অদ্বৈত বেদান্ত দাঁড়িয়ে আছে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার উপরে।
ক্রমশঃ
ব্লগার - রবীন মজুমদার
কলিকাতা
০২-০২-২০২২
মন্তব্যসমূহ