নাড়ী ছেড়ার গান। (১০৯)
নাড়ী ছেড়ার গান। (১০৯)
কালের বয়স আজ কত ? বয়স যাই হোক না কেন ,অবশ্য তাতে কিছু যায় আসেনা। বয়স মানে অগ্রগতির খতিয়ান । আঙ্গিকের বা স্বাদ গন্ধ যাইই হোক না কেন, কার্যত পরিবর্তনের চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যাবেই। "উদ্বাস্তু "এমনিই একটা শব্দবন্ধ , যাকে মনে ,করা যেতে পারে যে, বিশ্বপ্রকৃতির নিয়মের ধারই সে ধারেনা, সে অস্বীকার করতে চায় পরিবর্তনশীলতাকে এবং বস্তুত সে করেই থাকে। অন্তত বারবার ঘুরে ফিরে একই চেহারা নিয়ে ফিরে আসার মধ্যে , এই কথাটির সত্যতাকে অপরিবর্তনীয় রাখে।
গর্ভধারিনী অর্থাৎ প্রথম প্রাণের পদধ্বনি যেই মন্দিরে বেজে ওঠে। তারপরে মা তার গর্ভগৃহ থেকে নাড়ীর সাথে স্থুল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে শিশুকে প্রথম উদ্বাস্তু করে এই বিশ্ব সংসারের কোলে তার সন্তানকে অনির্দিষ্ট পথের পথিক করে দেয়। তাই সেই শিশু জন্মের প্রথম লগ্নে আর্তনাদ করে কেঁদে উঠে। প্রকৃতির রাজ্যের চিরাচরিত এই অভিন্ন সুরকে অর্থাৎ মা ও শিশুর, মাতৃভূমি ও সাধারণ মানুষ, পরিবার আর পরিবারের সদস্য ইত্যাদি যে পারস্পরিক নাড়ীর টানকে অস্বীকার করে, একদল স্বার্থানেষী মানুষ তারা কখন হতে পারে শাসক, কখনো বা শোষক আবার কখন ধর্মের ধ্বজ্জা বাহক আবার কখন রাজনীতির পৃষ্ঠপোষক বা কখন পরিবারের শক্তিমান সদস্য ; তারা সাধারণ মানুষকে আক্ষরিক অর্থে উদ্বাস্তু এবং পরবাসী বানিয়ে ছাড়ছে , মা ও শিশুর মধ্যে নাড়ী ছেঁড়ার বেদনার উপলদ্ধি সেখানে নেই । তাদের অপরাধ তারা কখন বিজিত দেশের নাগরিক আবার কখন দুর্বল শ্রেণীর প্রতিনিধি। সেখানে অধিক ক্ষমতাশালীরা এই অমানবিক কাজের নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন।
এই উগ্র সংগীতের মূর্ছনা কখন বেজে ছিল বঙ্গভঙ্গে, কাশ্মীরে আরো তাদের বহু কলঙ্কিত তাদের ইতিহাস আছে আর বর্তমানে সে ছবিটি প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে ইউক্রেনের মাটিতে । কেন এই যুদ্ধ সাধারণ মানুষ জানেনা আর কোন শাসক তাদের জানাটাকে কোন দিন প্রাধান্য দেয় নি। তারা শুধু তাদের চিরকালের সহনশীলতার ইতিহাসকে বহন করে শিকড় ছেঁড়ার কান্নাকে মূলধন করে জীবন্মৃত অবস্থায় বাকি জীবন কাটিয়ে দেয় । একটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, সেই শোষকরূপী মূর্খের দল জানেনা যে তারা যে মানুষের হৃদয়ে যে স্থানটা তার পূর্বে জুড়ে ছিল, সেই মানুষগুলি তার অন্তঃকরণ থেকে সেই স্বৈরাচারীদের কখন যে নীরবে উদ্বাস্তু করে দিয়েছে, সেটাই হচ্ছে ইতিহাসের অনিবার্য ফলশ্রুতি ।
ব্লগার -রবীন মজুমদার।
মন্তব্যসমূহ