রূপ আর স্বরূপের লুকোচুরি (১১১)

 মহাভারতের যাজ্ঞসেনী- ৪৭ তম  অধ্যায়  ||  (১১১)

Searching for hidden Truth (15) 

প্রথমভাগে ওঁ -কার দৃশ্যমান জগতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন আবার দ্বিতীয়ভাগে সেই জগৎকে ব্রহ্ম বলে আখ্যা দিচ্ছেন। তাহলে ওঁ-কার আর ব্রহ্ম এক, আবার ব্রহ্ম ও আত্মা বা চৈতন্য এক, সুতরাং, ওঁ -কারই ব্রহ্ম বা আত্মা । 

গত সংখ্যার পর ০ ০ ০ ০ ০

 রূপ  আর স্বরূপের লুকোচুরি (১১১)
দর্শন -

চোখ যেমন বাইরের সব বিষয়কে দেখে কিন্তু নিজেকে দেখতে পারে না। তাকে দেখতে গেলে আয়নার সাহায্য লাগে। ঠিক তেমনি আত্মাকে জানতে গেলেও অবলম্বন দরকার পরে , আর সেই অবলম্বন হচ্ছে  ওঁ-কার।  এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উপনিষদ বহু উদাহরনের আশ্রয় নিয়েছেন। 

রজ্জুতে সর্প ভ্রম -

রজ্জু সম্পর্কে যার কোন জ্ঞান নেই, সেই অজ্ঞানতার হাত ধরে রজ্জু বা দড়িকে সাপ ভেবে কল্পনা করাটা  ভ্রান্তি। ঠিক সেই রকম আত্মা সম্পর্কে জ্ঞান না থাকার কারনে কল্পনা থেকে উদ্ভূত নাম-রূপ নিয়ে যে দৃশ্যমান জগৎ দাঁড়িয়ে আছে, তাকে   ব্রহ্ম বা আত্মা বলে মনে হয়। 

ওঁ-কারের মধ্যে অ-কার , উ-কার, ম-কার এবং (ঁ) চন্দ্রবিন্দু এই চারটি ভাগ আছে। এরা আত্মার যে চার অবস্থার বর্ণনা করছেন, যথাক্রমে, জাগ্রত , স্বপ্ন , সুষুপ্তি এবং তুরীয় অবস্থাকে চিত্রিত করছে।  

" আমি তুরীয়ানন্দে ছুটে চলি একি উন্মাদ আমি উন্মাদ" কাজী নজরুল তার কবিতায় এই পরমানন্দের চূড়ান্ত অবস্থার  বর্ণনা করতে গিয়ে "তুরীয়" ছাড়া কোন উৎকৃষ্ট শব্দ পান নি। সংস্কৃত ভাষা থেকে এই শব্দের উৎপত্তি। 

তুরীয় যিনি তিনিই আত্মা। উপনিষদ বলছেন, তূরীয়কে জানাই আত্মজ্ঞান।  
প্রশ্ন -আত্মজ্ঞান কি করে হবে ? 
উত্তর -প্রথমে ভ্রমটা কে সরাতে হবে।  
প্রশ্ন - ভ্রমটা কি ?
উত্তর - রজ্জুকে সর্প বলে ভাবাটা। 
প্রশ্ন - কেন রজ্জুকে সর্প বলে ভাবছে ?
উত্তর - রজ্জু সম্পর্কে জ্ঞান নেই বলে। 
প্রশ্ন - রজ্জু আর সর্পকে কার সাথে তুলনা করা হচ্ছে ?
উত্তর - ব্রহ্মকে রজ্জু আর সর্পকে জগৎ। 

উপনিষদ আবার বলছে ,  এই জগৎটাকে ও আবার সবসময় একই ভাবে দেখা হয়না। জাগ্রত কালে  জগৎকে স্থুল জগৎরূপে। স্বপ্ন জগতে সুক্ষ বাসনা রূপে।  সুষুপ্তিতে অবস্থায় জগৎকে শূন্য রূপে আর তুরীয় যিনি তিনিই আত্মা। 

তুরীয় বা আত্মা এই তিন অবস্থাকে দেখতে পারে কিন্তু তুরীয় অবস্থাকে কেউ দেখতে পারেনা। স্বরূপকে অন্যরূপে গ্রহণ করাটা স্বপ্ন আর স্বরূপের জ্ঞান আদৌ না থাকাটাই নিদ্রা। তুরীয় সদা জাগ্রত, তাই তিনি সর্ব অবস্থাকেই দেখতে পান।

বিজ্ঞানে এটা প্রমাণিত যে, প্রত্যেক স্থুল বস্তুর পিছনে ক্ষুদ্র, আবার তারও পিছনে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বস্তু থাকে। ঠিক তেমনি, স্থুল জগৎ থেকে ক্রমেই সুক্ষতর অংশে, তার থেকে বীজে , আবার বীজ থেকে আরো গভীরে, যেখানে ব্রহ্ম বা আত্মা বিরাজ করছে।  ওঁ-কারই এই সবের সাক্ষী, যারা বীজ, সুক্ষ এবং স্থুলরূপে প্রতীয়মান। 


ক্ৰমশঃ 

ব্লগার -রবীন মজুমদার   

 

মন্তব্যসমূহ

Sabita Majumder বলেছেন…
জটিল যখন সহজ হয় তখন সেটা

বোঝা হয়না

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

(২৩১) মানুষ থেকে নক্ষত্রে উত্তরণ

(২৩৩) একটি ফোঁড়ার জন্মবৃত্তান্ত -

(২৬৯) রবি সৃষ্টির বৈচিত্রতা (প্রথম নিবেদন )